মেয়র ছালেক মিয়া বললেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বপদে বহাল থেকে এলাকায় সাংগঠনিক কাজ করার জন্য ছালেক মিয়াকে নির্দেশ দিয়েছেন ॥ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল জানান- সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাদের বলেছেন ছালেক মিয়াকে স্বপদে বহালের কোন নির্দেশনা তিনি দেননি।

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ছালেক মিয়াকে নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি আবারও নতুন আলোচনার ঝড় সৃষ্টি করেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন গতকাল সকাল ৯টার দিকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় তিনি শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতির বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সাথে বিস্তারিত আলাপ করেন। এ প্রেক্ষিতে ওয়াবাদুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত কাউকে অব্যাহতি বা বহিস্কার করতে গেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমতি নিতে হয়, যেহেতু কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমতি নাই, সেহেতু এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এসময় ওবায়দুল কাদের মেয়র ছালেক মিয়াকে স্বপদে বহাল থেকে এলাকায় সাংগঠনিক কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে ছালেক মিয়া তার ফেসবুক আইডিতে উল্লেখ করেন। মেয়র ছালেক মিয়া আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সাথে সাক্ষাতের ছবিও ফেসবুকে আপলোড করেন। মেয়র ছালেক মিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসের পরই হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল তার ফেসবুক আইডিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুকের যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেন। তিনি তার ফেসবুকে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ছালেক মিয়াকে স্বপদে বহালের কোন নির্দেশনা প্রদান না করায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ধন্যবাদ জানান।
ফেসবুকে দেয়া বিবৃতিতে আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল আহাদ ফারুক বলেন, শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি ছালেক মিয়াকে সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ড ও সামাজিক মিডিয়ায় বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার কারণে গত ২৫ জুন শোকজ করা হয়েছে এবং সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি’র বাসায় ছালেক মিয়া দেখা করে ছবি তুলে নিজ ফেসবুক আইডিতে স্বপদে বহালের নির্দেশনা সেতু মন্ত্রী দিয়েছেন বলে প্রচার করেছে। এই ব্যাপারে তারা সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি’র সাথে যোগাযোগ করেন। সেতুমন্ত্রী তাদের জানান, তিনি এ ধরনের কোন নির্দেশনা প্রদান করেননি। যদি ছালেক মিয়া আমার নির্দেশনা ফেসবুকে প্রচার করে তাকে তবে তোমরাও ফেসবুকে লিখে দেও যে, ছালেক মিয়াকে স্বপদে বহালের কোন নির্দেশনা আমি ওবায়দুল কাদের এমপি দেইনি। এই ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। একই সাথে শায়েস্তাগঞ্জ পৌর ও উপজেলা এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি কাছে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাকে অভিনন্দন জানান।
উল্লেখ্য, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ ইকবাল মঙ্গলবার মেয়র ছালেক মিয়াকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের নোটিশ দেন। ওই অব্যাহতি প্রদানের পত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করা হয়। সাথে সাথে মেয়র ছালেক মিয়ার অব্যাহতির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এদিকে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে কারণ দর্শানো ও অব্যাহতি প্রসঙ্গ নিয়ে ফেসবুক লাইভে আসেন মেয়র ছালেক মিয়া। ফেসবুক লাইভে তিনি বলেন- আমাকে যে কারণ দর্শানো ও অব্যাহিত প্রদানের নোটিশ দেয়া হয়েছে তা আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে অবগত হয়েছি। আমি জানি সাংগঠনিক বিধিতে একই পত্রে কারণ দর্শানোর নোটিশ ও অব্যাহতি দেয়া যায় না। তা ভাল বুঝবেন যারা দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ রয়েছেন তারা। তিনি বলেন আমি পেছনের দিকে যেতে চাই, বিগত ১৮ জুন শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমার সহধর্মীনি সাবেরা সুলতানা হ্যাপি ভাইস চেয়ারম্যান পদে কলস প্রতিক নিয়ে অংশগ্রহন করে ৫১০ ভোট কম পেয়ে হেরে যায়। নির্বাচনে ফলাফলের পর আমি আর আমার সহধর্মীনি বাসায় বিশ্রাম নেই। এ অবস্থায় আমার বাসায় বৃষ্টির মত বোম ফুটানো হয়। এতে আমার সহধর্মীনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এ অবস্থায় আমি পরে অফিস করি এবং শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন কাজে তদারকি করার পাশাপাশি পৌরসভার মিটিংয়ে অংশ গ্রহন করি। এর পূর্বে ফেসবুক লাইভে তিনি শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনসহ রাজনীতির অনেক প্রসঙ্গ নিয়ে কথাবার্তা বলেন এবং এ প্রসঙ্গে তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি আওয়ামী লীগকে আঘাত করে কথাবার্তা বলেন। এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার ফেসবুক আইডিটি অন্য আরেকজন ব্যবহার করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছালেক মিয়ার বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান ফেসবুকে স্ট্যাটাস প্রদান করেন। তিনি বলেন- ‘খন্দকার মোস্তাকের অনুসারীরা এখনো বেঁচে আছে, সেটা শায়েস্তাগঞ্জের ছালেক মিয়াকে দেখলেই বুঝা যায়। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে আরো বলেন- শেখ হাসিনা যথাযর্থই বলেন- ত্যাগী কর্মীরা অভিমানী হয় কিন্তু বেইমান হয় না। শায়েস্তাগঞ্জের রাজনীতিতে আতাউর রহমান মাসুক মিয়ার অনেক ভূমিকা ছিল। তিনি অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারপরও তো দলের বিরুদ্ধে কিছু বলেন নাই। আপনার লজ্জা থাকলে এই কথাগুলো বলতেন না।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল জানান, মেয়র ছালেক মিয়া তার ফেসবুক আইডিতে এমপি মোঃ আবু জাহিরের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং ছালেক মিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন মোঃ ছালেক মিয়া। পাশাপাশি তিনি পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি উন্নয়ন শুরু করেন। আলোচনায় আসেন শহরের প্রধান সড়কের উন্নয়ন করে। শায়েস্তাগঞ্জ থানার সামন থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত ওয়ানওয়ে সড়কে শহরের পুরনো চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। তার উন্নয়ন কর্মকান্ডে সহযোগিতা করেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। এরমধ্যে উন্নয়নের প্রায় সাড়ে তিন বছর চলে গেছে। এ উন্নয়ন কাজ শেষ না হতেই শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন আসে। এ নির্বাচনে তার স্ত্রী পৌর মহিলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেরা সুলতানা হ্যাপী মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হন। ১৮ জুনের নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে কন্ঠশিল্পী মুক্তা আক্তারের সাথে তিনি হেরে যান। নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পৌর মেয়র ছালেক মিয়া ফেসবুক লাইভ করেন। শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এর পরেই শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি মেয়র ছালেক মিয়াকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী সফিকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করা হয়। একই সাথে তাকে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়।