স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৩নং তেঘরিয়া ইউনিয়নের আব্দুলাপুর গ্রামের জটিল রোগে আক্রান্ত অসহায় এক নারীর চিকিৎসার অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বানিয়াচং উপজেলার ৯নং পুকড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ জহুর আমিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন আব্দুল্লাপুর গ্রামের গুপেন্দ্র দেবনাথের মেয়ে নিভারানী দেবনাথ।
অভিযোগে জানা যায়, আব্দুল্লাপুর গ্রামের গুপেন্দ্র দেবনাথের যুবতী কন্যা নিভারানী দেবনাথ। বিগত কয়েক বছর যাবত গলায় জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে আসছিলেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় যন্ত্রণায় ছটফট করে আসছিলেন তিনি। অসহায় পিতা ও স্বামী চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ। তারপর এই সংবাদটি পুকড়া ইউনিয়ন প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অবগত হলে তারা জহুর আমিনের কাছে প্রথম ধাপে নগদ ১৫ হাজার টাকা পাঠান রোগীর পরিবারের কাছে দেওয়ার জন্য। ওই টাকা নিভারানীর কাছে হস্তান্তরের কথা থাকলেও, জহুর আমিন কৌশলে রোগীর হাতে টাকা তুলে দেওয়ার নামে মোবাইল দিয়ে একটি ছবি তুলেন, তারপরই টাকাগুলো আবার নিয়ে নেন। পরে মোবাইলে উঠানো ছবিটি প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতির কাছে পাঠান জহুর আমিন। সেই টাকাগুলো অসুস্থ নিভারানীকে না দিতে বিভিন্ন অজুহাত শুরু করেন জহুর আমিন। তার কাছে বার বার গেলেও দেই দিচ্ছি বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। পরে গত ২০ সেপ্টেম্বর টাকা দেয়ার জন্য রোগীকে নিয়ে ঢাকায় যেতে চান জহুর আমিন। এসময় নিভারানী মাকে সঙ্গে নিতে চাইলে জহুর আপত্তি জানায়, কিন্তু মা ছাড়া ঢাকা যাবেন না বললে তখন জহুর বলে তাহলে টাকাগুলো অন্য আরেকজন মহিলাকে দিয়ে দিবো, তখন নিভারানী বলেন আমি প্রবাসীদের জানিয়ে দিব। এই কথা শুনে জহুর আমিন ওই রাতে বাস যোগে ঢাকায় যান জহুর আমিন, রোগী নিভারানী ও তার মা। পরে ঢাকা পৌছাতে রাত প্রায় ২টা বাজে, এরপর হোটেলের একটি রুম ভাড়া নেন জহুর আমিন, একই রুমে যখন তাদের সাথে থাকার কথা বলে, তখন রোগী ও তার মা আপত্তি জানালে তাকে অশালীন ভাষায় গালি-গালাজ করেন জহুর আমিন। পরে বাধ্য হয়ে একই রুমে বসে রাত কাটান তারা। পরদিন সকালে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে গেলে রোগী ও তার মা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তাদের উপর চড়াও হয় জহুর আমিন। এমনকি দুপুর পর্যন্ত তাদের অনাহারে রাখেন তিনি। পরে রোগীর মাকে ভাত খাওয়ার জন্য ১৫০ টাকা দেন, কিন্তু রোগী নিভারানীকে ডাক্তারের অজুহাত দিয়ে কিছু না খাইয়ে রাখেন।
এদিকে প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জহুর আমিনকে বলা হয়েছিল ঢাকায় প্রাইভেট ভাল কোনো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে, আরও কিছু টাকা তাদের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশে বসবাসকারী সংগ্রহ করে দেওয়ার কথা ছিল জহুর আমিনের কাছে। কিন্তু এই টাকারও কোনো হদিস জানাতে পারেননি নিভারানী। পরে জহুর আমিন ও তার ঢাকার আরেক সহযোগি মিলে নিভারানীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে দ্বিতীয় তলায় নাক কান গলা বহিবিভাগে ৩০ টাকার রশিদ কেটে ডাক্তার দেখান। পরে ওই ডাক্তার জহুরের কথা বলে ২টি পরিক্ষা দেন, পরে জহুর আমিন দি ইবনেসিনা হাসপাতাল থেকে রক্ত পরিক্ষা ও অন্য আরেকটি পরিক্ষা করিয়ে ২১৭৫ টাকা বিল রিসিট নিভারানীর কাছে দেন। এসময় নিভারানী যেনো এই কাগজগুলো কাউকে না দেখায় সেই নির্দেশ দেন জহুর আমিন। এরপর রিপোর্টসহ রোগী ও তার মাকে রাতে ঢাকা থেকে একটি লোকাল বাসে তুলে দেন জহুর আমিন, গভির রাতে শায়েস্তাগঞ্জে নামেন তারা। পরে একটি সিএনজি যোগে বাড়িতে আসেন। তারপর থেকে রোগী নিভারানী আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন, প্রতিনিয়ত গলা দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। এসব দেখে তার পরিবার, যুবলীগ নেতা জহুর আমিনের সাথে যোগাযোগ করলে আরও উল্টো টাকা দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে অসুস্থ নিভারানী প্রবাসী কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কারও সাথে যোগাযোগ না করতে পারায় বিষয়টি কাউকে জানাতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জহুর আমিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমি তাদেরকে টাকাগুলো পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছি। তাদের উপকার করেছি। এই অভিযোগসমূহ মিথ্যা।