পানিতে নিমজ্জিত অসংখ্য বাসাবাড়ি ॥ বিদ্যুত না থাকায় জনজীবনে নাভিশ^াস ॥ ফেসবুক ইউটিউব ইমেইল কোন কিছুই কাজ করেনি ॥ মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় মানুষজন ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ॥ বিশুদ্ধ পানির সংকট ॥ ফ্রিজের মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ॥ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে হবিগঞ্জ শহরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরে স্মরণকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে টানা বৃষ্টিপাত। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার টানা বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে অসংখ্য বাসাবাড়ি। মানুষজন নিজ বাসায় পানিবন্দী। রাস্তাঘাট ডুবে আছে পানিতে। গতকাল শুক্রবারের প্রবল বর্ষণের কারণে শহরের অনেক দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ। খুব অল্প সংখ্যক মানুষকে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে। নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হননি।
একটি বৃষ্টিতে মানুষের জীবনযাত্রা অচল, অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দিনভর বিদ্যুত না থাকায় জনজীবনে নাভিশ^াস উঠেছে। গতকাল বিকেল থেকে হবিগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও অধিকাংশ এলাকা রয়েছে বিদ্যুৎবিহীন। গতকাল দিনভর শহরে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক ছিল না। ছিল না অনলাইন সেবা। ফেসবুক, ইউটিউব, ইমেইল কোন কিছুই কাজ করেনি। বলা চলে গতকাল হবিগঞ্জ শহরবাসী চলে গিয়েছিলে আদিম যুগে।
শহরের শ্যামলী এলাকার বাসিন্দা কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন- আমরা বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাইনি। আমাদের বিশুদ্ধ পানি সমস্যা দেখা দিয়েছে। ফ্রিজে থাকা মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে কারো সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছি না। ইন্টারনেটও কাজ করছে না। অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। বিদ্যুৎ কবে কখন পাবো তাও কেউ বলতে পারছে না। বিদ্যুৎ বিভাগকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমাদের রিপোর্টার অপু আহমেদ রওশন জানান, অবিরাম বৃষ্টিপাতে হবিগঞ্জ পৌর এলাকার শায়েস্তানগর থেকে উমেদনগর পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সদর হাসপাতালের মোড়, ইনাতাবাদ, মোহনপুর, মাহমুদাবাদ, রাজনগর কলেজ রোড, ঘাটিয়া বাজার, চৌধুরী বাজার, কামড়াপুর, নাতিরাবাদ, হরিপুর উত্তর শ্যামলীসহ শহরের প্রধান সড়ক সহ প্রতিটি রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে দামী ফ্রিজ পানির মটরসহ অন্যান্য আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে শহরের প্রধান সড়কের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে, দোকানে থাকা জিনিস পত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শুধু তাই নয়, হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৫টি ফিশারী পানিতে তলিয়ে গেছে। কোটি টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের নাতিরাবাদ এলাকার বিশাল বড় ৩/৪ টি ফিসারীর পুকুর পানিতে ডুবে ১০/১২ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। এসময় শত শত মানুষ মাছ ধরতে নেমে পড়ে। অনেককেই বড় বড় রুই কাতল সহ মাছ ধরতে দেখা গেছে। ওই ফিসারীর মালিকপক্ষ জানান, নাতিরাবাদ এলাকাবাসীর বড় পুকুর ও বসুন্ধরা সংসদ এর পুকুরসহ ৩টি ফিসারী গত ২/৩ বছর যাবত লীজ নিয়ে লাভের আশায় ফিসারীতে মাছ চাষ করে আসছিলেন, এতে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লোন ও কর্জ নিয়ে এই ফিসারিগুলোতে দেশীয় মাছ রুই কাতল চিতল সিলভার তেলাপিয়া সহ অন্যান্য মাছ চাষ করছিলেন। মাছগুলো দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের হয়েছিল। কিছুদিন পরই বিক্রি করার কথা থাকলেও সেই স্বপ্ন আর পূরণ হল না। এরই মধ্যে সব মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাওয়ায় বেশ লোকসান হয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া শহরের আমিরচাঁন কমপ্লেক্স সংলগ্ন হবিগঞ্জ পৌরসভার পুকুর সহ একাধিক ফিসারীর মাছ পানিতে ভেসে গেছে।