কোরেশনগরে দিনদুপুরে এই ছিনতাই করে মোটর সাইকেল আরোহী তিন যুবক
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ শহরে আবারও দিনদুপুরে ফিল্মি স্টাইলে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা গতকাল শুক্রবার দুপুরে শহরের অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা, বিশিষ্ট আইনজীবী মনিরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার গলা থেকে ২টি স্বর্ণের চেইন নিয়ে গেছে। এ সময় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলামের কলেজ পড়–য়া কন্যা রওনাক ইসলাম আহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা রওশন আরা ও তার মেয়ে রওনাক ইসলামের কলেজের ফরম ফিলআপসহ নানা কাজ শেষে শহরের রাজনগর এলাকা থেকে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। দুপুর ১টার দিকে রিক্সাটি কনসালটেন্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ৫০ গজ দূরে কোরেশনগর আবাসিক এলাকায় পৌঁছামাত্র মোটর সাইকেলযোগে ৩ জন মুখোশধারী ছিনতাইকারী তাদের রিক্সার গতিরোধ করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা রওশন আরা ও তার মেয়ে রওনাককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাদের কাছে যা আছে দেয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু রওশন আরা হিজাব পরা থাকায় তার গলায় থাকা স্বর্ণের ২টি চেইন দেখা যাচ্ছিল না। এক পর্যায়ে তার দুদিকে দু’জন ছিনতাইকারী ঘেরাও করে ছুরি ধরে। এ সময় রওশন আরার মেয়ে রওনাক ছিনতাইকারী বলে চিৎকার দিলে এক ছিনতাইকারী তার হাতে ছুরিকাঘাত করে। আর অন্য দুই ছিনতাইকারী রওশন আরার গলায় থাকা ২টি স্বর্ণের চেইন জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ২টি স্বর্ণের চেইন ২ ভরি ওজনের। আহত অবস্থায় রওনাককে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেন রওশন আরা’র ভগ্নিপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল ভূইয়া।
ছিনতাই’র শিকার কলেজছাত্রী রওনাক ইসলামের ভাই রবিন আহমেদ জানান, তার মা ও বোন শহরের রাজনগর এলাকায় অবস্থিত বসুন্ধরা টেইলার্স থেকে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিলেন। কোরেশনগর এলাকার ভেতরে রাস্তায় রিক্সাটি পৌঁছামাত্র মোটর সাইকেল আরোহী একদল দুর্বৃত্ত তাদের গতিরোধ করে। পরে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তার কলেজ পড়–য়া বোনকে ছুরিকাঘাত করে সাথে থাকা ৩টি স্বর্ণের চেইন ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি জানান, কোরেশনগর একটি আবাসিক এলাকা। যা থানা থেকে মাত্র তিন মিনিটের রাস্তা। এমন স্থানে যদি প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তাহলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা কোথায়?
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী জানান, ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর পরই পুলিশ সেখানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের জন্য হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১১ ফেব্রুয়ারি দিনদুপুরে হবিগঞ্জ শহরের ঝিলপাড় এলাকায় জলি হালদার নামে এক শিক্ষিকাকে ছুরিকাঘাত করে স্বর্ণালঙ্কার ও মোবাইলসহ টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছিল মোটর সাইকেল আরোহী তিন দুর্বৃত্ত। ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে ওই শিক্ষিকা গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ছিনতাই’র শিকার শিক্ষিকা জলি হালদার শহরের পুরানমুন্সেফী এলাকার বিপ্লব রায়ের স্ত্রী ও স্টাফ কোয়ার্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এর পূর্বে শহরের অনন্তপুর এলাকার কবরস্থান রোডে মোটর সাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের কবলে পড়েন এক গৃহবধূ। দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ওই গৃহবধূর স্বর্ণের চেইনসহ টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে গিয়েছিল।
অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন সেলিম ঘটনাটি ফেসবুকে তুলে ধরলে তাঁর ফেসবুক ফ্রেন্ডদের মন্তব্যে আরো ছিনতাইর চিত্র উঠে আসে। অনেকেই তুলে ধরেন শান্তির শহরে এমন ঘটনায় তাদের আতঙ্কের কথা। কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো-
অ্যাডভোকেট ইকবাল ভূইয়া ঘটনাটি সম্পর্কে বলেন- এ ছিনতাই ঘটনার সময় মা-মেয়ে জোরালো বাধা দিলে হয়তো তাদের মৃত্যু হতো। এটাও ভাবার বিষয়। হবিগঞ্জে হয়তো নব্য কিশোর গ্যাং এর জন্ম হয়েছে। এদের এখনই আইনের আওতায় না আনলে সমস্যা হবে।
খান আজমত মন্তব্য করেন- হবিগঞ্জও দেখা যাচ্ছে ঢাকা শহরের মতো হয়ে গেছে, দিনেদুপুরে ছিনতাই। খুবই দুঃখজনক। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি দ্রুত ওদের ধরে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হউক। আর না হলে ছিনতাইকারীদের সাহস বেড়ে যাবে। আবার দেখা যাবে আরেকজনকে ছিনতাই করবে। তাই ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
ফয়েজ উদ্দিন লিখেন- ইতোপূর্বে আরো একটি ঘটনা মাস্টার কোয়ার্টারে ঘটেছে। ওইভাবে মোটর সাইকেলযোগেই। এ বিষয়ে সকলকে তৎপর হতে হবে। টিনেজার যারা মোটর সাইকেল ব্যবহার করে তাদের গতিবিধি নজরে আনতে হবে।
হামিদুর নাসির লিখেন- কিছুদিন আগে সকালে শায়েস্তাগঞ্জ থেকে একজনের কাছ থেকে গলার চেইন নিয়ে গেছে দুর্র্বৃত্তরা।
তবে অধিকাংশ লোকই অবিলম্বে দুষ্কৃতকারীদেরকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।