স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই ॥ আদালত প্রাঙ্গণে মানুষের ভিড়
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়েই চলেছে। দুই দিনের মাঝে হবিগঞ্জে আক্রান্ত হয়েছেন হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান ও সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন। প্রতিদিন যে হারে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে তার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পজেটিভ আসছে বলে জানিয়েছেন হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোঃ মুখলিছুর রহমান উজ্জল। তিনি আরও জানান, বুধবার সকালে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আব্দুল হাই (৫৬) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। হবিগঞ্জ শহরের ইনাতাবাদ এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে আব্দুল হাই গত ২৩ মার্চ অসুস্থতা নিয়ে সিলেট রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তারপর সেখান থেকে তাকে সিলেট ওমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে আব্দুল হাইয়ের স্বজনরা তাকে সিলেট থেকে হবিগঞ্জে নিয়ে আসার পথে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই। হাট বাজার, আদালত ও বাসে যাত্রী পরিবহনে মানা হচ্ছেনা কোন নিয়ম নীতি। ফলে করোনার ঝুকি বেড়েই চলছে।
বুধবার সকালে সরজমিনে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর বাজারে দেখা যায় প্রতিদিনের ন্যায় শত শত মানুষের ভিড়। অধিকাংশ লোকজনের মুখে ছিল না কোন মাস্ক। সেখানে লোকজনের উপস্থিতি দেখে বোঝার কোন উপায় নেই সরকার করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়াতে ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেছে। বিশেষ করে সেখানকার মাছের বাজারে উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকার চাষী বাজারেও ছিল লোকজনের উপচেপড়া ভিড়। শত শত ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ছিল সেখানে। শহরতলীর বহুলা গ্রামের আব্দুল হাই নামে এক কৃষক এসেছিলেন সব্জি বিক্রি করতে। তিনি জানান, কোন বিধি নিষেধের কথা তার জানা নেই। লোকজন প্রতিদিনের ন্যায় স্বাভাবিকভাবেই আসছেন বাজারে। পাশেই পৌর বাস টার্মিনাল। সেখান থেকে ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায় বাস। কিন্তু অধিকাংশ বাসই ছিল যাত্রী বোঝাই। তবে ঢাকাগামী বাসে তুলনামূলকভাবে যাত্রী সংখ্য কমছিল।
এদিকে বুধবার হবিগঞ্জ আদালতে লোকজনের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশী। শবে বরাতের বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি থাকায় মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদের মামলার ধার্য্য তারিখ থাকায় লোকজনের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনে আমলী আদালতগুলোর সামনে পা ফেলার স্থান ছিল না। বুধবার আদালত চলাকালেই অসুস্থ হয়ে এজলাস থেকে নেমে যান সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আমজাদ হোসেন। পরে জানা যায় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আদালতে আসা বানিয়াচংয়ের মাতাপুরের সর্দার এস এম হাফিজুর রহমান জানান, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছাড়া আদালতে শুনানী না করলে লোকজনের উপস্থিতি আরও কম হত। তারা একটি মামলা হাজিরা দিতে আদালতে আসেন।
হবিগঞ্জে ১৮ দফা স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে প্রচার প্রচারনা জোরদার করা হয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান।