চিকিৎসা
ডাঃ মো আখতার উদ্দিন মুরাদ

পৃথিবী এক আজব জায়গা, তার মাঝে সৃষ্টিকর্তার তৈরী মানুষ আরো আশ্চর্য সৃষ্টি। মানুষ তার জীবন ধারনের জন্য কত কিছু করে কত কিছু খায় তার হিসাব নিতে গেলে একটা আলাদা বিশ্বকোষ লিখতে হবে। কোভিড ১৯, ওরফে করোনা চীনের ওহান শহরে প্রথম ধরা পড়ে। একজন চক্ষু চিকিৎসক ডাঃ লি প্রথম এই রোগটির ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করেন যদিও প্রথম দিকে ডাঃ লি কে পুলিশের অনেক জেরার মধ্যে পড়তে হয় এমনকি তাকে মুচলেকা পর্যন্ত দিতে হয় এই বলে যে এসব প্রোপাগান্ডা, কিন্তু কিছু দিনের মাঝেই করোনা তার আসল রূপ প্রকাশ করতে থাকে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ডাঃ লি তার করোনা আবিষ্কারে প্রায় দেড় মাসের মাথায় জনৈক এক গ্লোকোমা রুগীনিকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে উনি নিজে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, ঐ রোগীনি করোনায় আক্রান্ত ছিল। কোভিড ১৯ একটি আর-এন-এ ভাইরাসজনিত রোগ। মারাত্মক ছোঁয়াছে। সাধারণত এরা প্রাণীদের শরীরে নিরাপদে বাস করতে পারে এতে ঐ প্রাণীর কোন ক্ষতি হয় না কিন্তু এই ভাইরাস যদি মানব দেহে কোন ভাবে প্রবেশ করতে পারে তাহলে এরা মারাত্মক আকার ধারণ করে। যার স্বরুপ আমরা এখন দেখছি। কথিত আছে উহান জনৈক মহিলা সী ফুড মার্কেট থেকে বাদুর জাতীয় কোন প্রাণীর মাংস কিনে নিয়ে খাওয়ার পর আক্রান্ত হয় এবং তা আস্তে আস্তে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কেউ কেউ বলছেন এটা ল্যাবরেটরিতে তৈরী চীনারা ইচ্ছে করে ছড়িয়েছে যদিও এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উহানে তা পরীক্ষা করতে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়েছে, দেখা যাক কি উত্তর আসে। অনেকে ৫এ নেটওয়ার্ক এর সাথে এই ভাইরাসজনিত কিছু যোগসূত্র বের করার চেষ্টা করছেন যেমন আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট এটা বিশ্বাস করতেন এবং সব কথায় উনি কোভিড ভাইরাস না বলে বলতে চাইনিজ ভাইরাস। যাক এসব বিশ্ব রাজনীতির কথা।
এবার আমাদের বিষয়ে কথা বলি। এই ভাইরাস সাধারণত নাক মূখ চোখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে তবে চোখের পানি পরীক্ষা করে এর কোন উপস্থিত পাওয়া যায় নাই। তারপর চোখের সাথে যেহেতু নাকের সম্পর্ক আছে তাই সতর্ক থাকা দরকার। কোভিড সর্বপ্রথম শ্বাস নালীতে আক্রমণ করে বিশেষ করে ফুসফুসে এরপর দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে আক্রমণ করে থাকে সবচেয়ে মারাত্মক হল সব সিষ্টেমগুলিতে আক্রমণের সময়টা এত তাড়াতাড়ি হতে থাকে যে ইনফেকশন কখন হল আর অন্যান্য সিষ্টেম কখন আক্রান্ত হল তা এত রেপিড ডায়াগনোসিস করা একটু কঠিন হয়ে যায়। কোভিড চোখেও আক্রমণ করে তার কিছু খতিয়ান দেই। চোখের চোখউঠা রুগ, চোখ দিয়ে পানিপড়া, চোখের সাদা অংশে যাকে আমরা কনজাংটিভা বলি তার মাঝে রক্তপাত হতে পারে যাকে বলা হয় ছাব কনজ হিমোরেজ। যাদের ডায়াবেটিস বা প্রেসারের রোগ আছে তাদের রেটিনাতে ও রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে ঐ রক্ত চোখের শিরা চোখের ভিতরে যে তরল পদার্থ আছে যাকে আমরা ভিট্রাস বলি ওখানে রক্ত চলে আসতে পারে। ফলে অনেক সময় রুগীরা এসে বলে করোনা হওয়ার পর থেকে চোখে কম দেখি। অবশ্য চোখে কম দেখার কারণ আরও থাকতে পারে তবে করোনায় অতিরিক্ত কাশির জন্য চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরী হওয়াতে এরকম রক্তপাত হতে পারে। তারপর থ্রম্বএম্বলিজম নামে একটা রোগ তৈরী হয় যা কিনা চোখের রেটিনার শিরায় প্রবেশ করে ঐ শিরা বন্ধ করে দিতে পারে। এবার আসুন চিকিৎসা, চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে গেলে সবার আগে আমার বিশেষ অনুরোধ কেউ যেন ভুলের কোন কিছু না লুকায়, কারণ এই রোগটা প্রথমত মারাত্মক ছোঁয়াচে তারপর রুগী যদি তার লক্ষণ না বলে অনেক সময় সাধারণ চোখের রুগ বলে ভুল হতে পারে। এতে করে রুগী ও তার ডাক্তার উভয়ের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। রোগী থেকে ডাক্তার আক্রান্ত হবে, ডাক্তার থেকে অন্য রোগীরা আক্রান্ত হবে। তা ছাড়া রোগীটার চোখের ভিতরে কোন সমস্যা আছে কিনা তাও চিকিৎসক এড়িয়ে যাবে কারণ চোখের ভিতরের রক্তপাত বুঝতে গেলে চিকিৎসকে বিশেষ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা আছে, যা সচরাচর করা হয় না। এতে করে রোগীরই ক্ষতি। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন রিসার্চে দেখা গেছে সামাজিক দূরত্ব, ব্যক্তিগত হাইজিন, ম্যাক্স, কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া বা সেনিটাইজার ব্যবহার সবচেয়ে কার্যকর পন্থা এই মরণঘাতি কোভিড ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ। একটা কথা মনে রাখবেন কোভিড আমাদের মাঝে কতদিন থাকবে তা হলফ করে বলা কঠিন আমাদের অতএব এই অভ্যাস গুলি নিজের মাঝে গড়ে তুলুন আশা করি সবাই ভাল থাকবেন। সবাই সুস্থ থাকুন এই আশা রেখে শেষ করছি।
চেম্বার
আখতার মেডিকেল
চিড়াখানা রোড, শায়েস্তানগর, হবিগঞ্জ
মোবাইল ০১৮১৭৫৮৪৬৩৬