তিনটি পৌরসভা নির্বাচনে পরাজয়ের কথা মাথায় রেখে হবিগঞ্জ পৌরসভায় শক্তিশালী প্রার্থী দিবে আওয়ামী লীগ
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ৯ প্রার্থী কেন্দ্রে জোর লবিং করছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঢাকাতে অবস্থান করছেন। আবার কারো পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সাথে লবিং করে যাচ্ছেন। কয়েক দিনের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে বলে জানা গেছে। আর দলীয় মনোনয়ন দিলেই সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে। তবে জেলার শায়েস্তাগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের ঘটনায় হবিগঞ্জ পৌরসভায় শক্তিশালী প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন আওয়ামীলীগ হাইকমান্ড। জেলা আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ মনে করছেন হবিগঞ্জ পৌরসভায় এমন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হোক যার মাধ্যমে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় একক প্রার্থী মনোনয়নের জন্য হবিগঞ্জ থেকে যে ৯জনের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে, তাঁরা অঙ্গিকার করেছেন দলীয় মনোনয়ন না পেলে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ যাবেন না। তবে সেই অঙ্গিকার কতটা সঠিক থাকবে তা নিয়ে এখনই চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। আওয়ামীলীগ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন তাদের আর কোন নির্বাচনেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। এমন সিদ্ধান্ত আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন। এখনও তা বহাল রয়েছে। এ হিসেবে হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়নে চমক আসতে পারে।
হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, সাধারণ সম্পাদক মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরীর যৌথ স্বাক্ষরে হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯ জনের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে। তালিকায় প্রার্থীদের দলীয় পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্রে প্রেরিত তালিকায় ১ম স্থানে রাখা হয়েছে হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমকে। সেখানে তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- আতাউর রহমান সেলিম জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-প্রচার সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৫ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২য় স্থানে রাখা হয়েছে হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটুর নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক নির্বাচিত জিএস এর দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তালিকায় ৩ নাম্বার নাম রাখা হয়েছে হবিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ মিজানুর রহমানের নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১৯ সালে পৌরসভার উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত বর্তমান মেয়র। তালিকার ৪র্থ স্থানে রাখা হয়েছে মোঃ মর্তুজ আলীর নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক। ৫ম স্থানে রাখা হয়েছে সৈয়দ কামরুল হাসানের নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি হবিগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। ৬ষ্ঠ স্থানে রাখা হয়েছে একেএম নুর উদ্দিন চৌধুরী বুলবুলের নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং জেলা আওয়ামীলীগ নেতা। ৭ম স্থানে রাখা হয়েছে শংখ শুভ্র রায়ের নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য। ৮ম স্থানে রাখা হয়েছে মোঃ নুরুল আমিন ওসমানের নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি হবিগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য। ৯ম স্থানে রাখা হয়েছে শেখ তারেক উদ্দিন সুমনের নাম। তাঁর যোগ্যতা ও রাজনৈতিক পরিচয়ে লেখা হয়েছে- তিনি হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী জানান, হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে সর্বসম্মতিক্রমে ৯ জনকে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে রাখা হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড ১ জনকে দলের চুড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবেন। তাঁরা অতীত রাজনৈতিক কর্মকান্ড দেখে যাকে যোগ্য প্রার্থী মনে করবেন তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। তিনি বলেন- যেহেতু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে এ সপ্তাহের মধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। আলমগীর চৌধুরী বলেন- নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থীর বিজয় হয়েছে। একটি কেন্দ্রে সুক্ষ্ম কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে পরাজিত করা হয়েছে। আর শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকার কারণে দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। এছাড়াও মাধবপুরে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে সমস্যা ও বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় সেখানেও পরাজয় ঘটেছে। এবার আশা করি সব দিক মাথায় রেখে দলীয় হাই কমান্ড হবিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণ করবেন।