অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের দেড় বছর পর রহস্য উদঘাটন

নুর উদ্দিন সুমন ॥ চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি গহীন জঙ্গল থেকে উদ্ধার অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় ও হত্যার ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত যুবকের নাম মো: আলমগীর (২৫)। সে মাধবপুর উপজেলার বনগাঁও গ্রামের মৃত রহমত আলীর পুত্র। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার সার্বিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে চুনারুঘাট থানার একদল পুলিশ পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘাতকদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো- মাধবপুর উপজেলার বেজুড়া গ্রামের ছফন উদ্দিন ওরফে ছউফ্ফার ছেলে মুসলিম মিয়া (২৭), বানিয়াচং উপজেলার জাতুকর্ণপাড়া গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে সোহেল মিয়া (৪০) ও মাধবপুর উপজেলার খড়কী গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে মো: রোকন মিয়া (৩০)।
২০১৯ সালের ১৭ জুলাই চুনারুঘাট থানাধীন সাতছড়ি টিলায় প্রায় ২৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত যুবকের মৃতদেহ পাওয়া যায়। লাশের কিছু অংশে জখম থাকায় পুলিশ নিশ্চিত হয় এটি হত্যাকান্ড। অজ্ঞাত যুবকের নাম-ঠিকানা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত না হওয়ায় চুনারুঘাট থানা পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রুজু করেন, মামলা নং ১৫। পরবর্তীতে লাশটি আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়। ঘটনার দেড় বছরে পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন। সর্বশেষ নিবিড় তদন্তে নামেন মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল মোতালিব। তিনি প্রযুক্তির মাধ্যমে অজ্ঞাত ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে আসামী মুসলিম মিয়াকে গ্রেফতার করেন। আসামী মুসলিম মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে ১৮ ডিসেম্বর হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেয়। মুসলিমের দেয়া তথ্যমতে ২০ ডিসেম্বর রাতে আসামী সুহেল ও রুকনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আসামীরা হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কা:বি: ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেয়।
এ ঘটনায় হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা সাংবাদিকদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। ব্রিফিংয়ে তিনি আসামীদের বরাত দিয়ে জানান, আসামিরা টমটম ছিনতাইয়ের জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে আলমগীরকে রমণীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের প্রলোভন দেখিয়ে সাতছড়ির গেইটের নিকট টমটম দাঁড় করায়। পরে টমটমটি রাস্তার বিপরীত পাশে রেখে সাতছড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। উদ্যানের অনেক ভিতরে প্রবেশ করার পর চালক আলমগীর সোহেল ও অন্যদের জিজ্ঞেস করে রমনী কোথায়। তখন আসামিরা আলমগীরকে গহীন জঙ্গলে টিলার দিকে দেখায়। তখন আলমগীর সহ ৪ জন টিলায় উঠে। তখনো কোন রমনী না দেখে আবার জিজ্ঞেস করে আলমগীর। তখন আসামি সোহেল মিয়াকে ইশারা দিলে মুসলিম মিয়ার গায়ের পরিহিত গেঞ্জি দিয়ে আলমগীরের পিছন থেকে মাথা পেঁচিয়ে ধরে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে সোহেল মিয়া আলমগীরকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। আসামি রুকন মিয়া আলমগীরের পায়ে, মুসলিম মাথায় ও হাতে এবং সোহেল মিয়া মুখ ও গলা চেপে ধরে। তখন আলমগীর চেঁচামেচি করে এবং সোহেলের ডান হাতের আঙ্গুলে কামড় দেয়। মুসলিমের কোমড়ে থাকা রশি সোহেল মিয়া টেনে নিয়ে মুসলিম সহ সোহেল মিয়া আলমগীরের গলায় রশি পেঁছিয়ে আলমগীরের মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং আলমগীরের লুঙ্গির প্যাঁচে থাকা টমটমের চাবি ও মোবাইল সোহেল মিয়া নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে আসামীরা জঙ্গল থেকে বের হয়ে টমটম নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তারা বানিয়াচং গিয়ে টমটমটি ৬০ হাজার টাকা মূল্যে সোহেলের কাকা রুবেল মিয়ার নিকট বিক্রি করে টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই সকালে চুনারুঘাট থানাধীন সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের অনুমান ৩শ’ গজ উত্তর পশ্চিম দিকের সাতছড়ি ন্যাশনাল পার্কের টিলার উপর জঙ্গল থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিকৃত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে মৃত ব্যক্তির হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে এনআইডিতে তার নাম পরিচয় সনাক্ত করে তিন আসামী গ্রেফতার করে চুনারুঘাট পুলিশ।