হবিগঞ্জ শহরে বহিরাগত লোকজন এনে পাড়ায় পাড়ায় ও বাসাবাড়িতে পাঠানো হচ্ছে, এতে শান্তিপ্রিয় মানুষ আতঙ্কিত
নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হওয়ার পর থেকে রাতব্যাপী ও নির্বাচনের দিন শহরের প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানোর দাবি, যাতে সন্দেহজনক লোকজন ও বহিরাগতরা ওই সময়ে শহরে প্রবেশ করতে না পারে। নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধের পর থেকে শহরের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়াগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করতে হবে
স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু বলেছেন- হবিগঞ্জ শহর একটি শান্তিপূর্ণ জনপদ। এখানকার সাধারণ মানুষ এবং তরুণ সমাজের নীতি-নৈতিকতার ভিত্তিও প্রখর। কিন্তু আসন্ন পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা মার্কার প্রার্থী যে হারে ভোট খরিদ করতে টাকা-পয়সার ছড়াছড়ি ঘটাচ্ছেন, তাতে সাধারণ মানুষ ও তরুণদের নৈতিকতার ভিত্তিটাই ভেঙ্গে পড়ছে। এছাড়া নানা স্থান থেকে খবর আসছে, পৌর এলাকার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়াগুলোতে ওই প্রার্থীর লোকজন গিয়ে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছেন। ক্ষেত্রবিশেষে নৌকা মার্কায় ভোট না দিলে খুবই খারাপ হবে- এ মর্মেও হুমকি-ধামকি প্রদান করে যাচ্ছেন। শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন- শহরের বহু এলাকায় বহিরাগত লোকজন এনে পাড়ায় পাড়ায় ও বাসাবাড়িতে পাঠানো হচ্ছে, এতে শান্তিপ্রিয় মানুষেরা আতঙ্কিত হচ্ছেন। সবমিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে শান্তিকামী শহরবাসী, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ভোটকেন্দ্রে না যেতে পারেন। এ পরিস্থিতিতে ভোট কেন্দ্রে যেতে ইচ্ছুক ভোটারগণ ও নৌকা মার্কার সমর্থকদের মধ্যে যদি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার মতো কোনও ঘটনা ঘটে যায়, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। আর এমনটা ঘটে গেলে এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব নৌকার প্রার্থীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই বহন করতে হবে, কারণ নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকেরাই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
মেয়র প্রার্থী টিটু বলেন- বর্তমান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচনের দিন বহিরাগত লোকজন জড়ো করে সারা শহরে চরম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলেন। এই নির্বাচনেও ওই প্রার্থীর একই রকম তৎপরতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাই ভোটারদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি প্রশাসনের নিকট ৬টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে- নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ হওয়ার পর থেকে রাতব্যাপী ও নির্বাচনের দিন শহরের প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হউক, যাতে সন্দেহজনক লোকজন ও বহিরাগতরা ওই সময়টিতে শহরে প্রবেশ করতে না পারে। নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধের পর থেকে শহরের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়াগুলোতে পুলিশি টহল জোরদার করতে হবে। কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। পৌর এলাকার সকল ভোটার যাতে স্বাচ্ছন্দে এবং নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজন যাতে দলবদ্ধভাবে অবস্থান না নিতে পারে অথবা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসার সময় কোনরূপ হুমকি-ধমকি প্রদান করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসনকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। নির্বাচনের দিন ভোটারদের নিরাপত্তার স্বার্থে বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট তাজউদ্দিন সুফি, সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, জেলা জাসদ নেতা শাকিল মোহাম্মদ, বাসদ নেতা হুমায়ুন খান, পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু সালেহ মোহাম্মদ শিবলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী মো. মাসুদ আলী ফরহাদ, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব রায় চৌধুরীসহ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকগণ।
রাতে নারিকেল গাছ মার্কার সমর্থনে শহরের বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় সভা ও গণসংযোগ করেন মেয়র প্রার্থী টিটু।