স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ শহরে ইজিবাইক (টমটম) স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ী শেখ আব্দুর রশিদ হত্যার বিচার দেখে যেতে চান নিহত রশিদের মা শেখ ভানু বিবি। গতকাল রবিবার বিকেলে এ প্রতিনিধির কাছে আক্ষেপ করেন তিনি। তিনি বুকে নিহত ছেলে আব্দুর রশিদের ছবি জড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন- ৮০ বছরের জীবনের অধিকাংশ সময় উমেদনগর কাটিয়েছি। উমেদনগর এলাকায় এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা আর ঘটেনি। ঘাতকরা আমার ছেলে রশিদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমার ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামী হাজী লুৎফুর রহমান নানুর মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকা ছিলো। ওই সময় নানু এলাকার নিরীহ মানুষকে হয়রানী ও তাদের বাড়িঘরে লুটপাট করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর নানু আত্মগোপনে ছিলো। এখনও উমেদনগর এলাকার লোকজন নানু মিয়ার বিতর্কিত ভূমিকার সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে নানু মিয়াসহ তার স্বজনরা এলাকায় অবৈধ দখল ও চাঁদাবাজি করে আসছিল।
নিহত আব্দুর রশিদ উমেদনগর পূর্ব এলাকার শেখ আব্দুল আলীর ২য় ছেলে। আব্দুর রশিদ এর ছোট ভাই শেখ আব্দুল হান্নান জানান, হাজী লুৎফুর রহমান ওরফে নানু মিয়া, তার ছেলে, ভাই মধু মিয়া, তার ছেলেসহ তাদের আত্মীয় স্বজনদের সিএনজি, টমটম, বাসস্ট্যান্ড দখলসহ চাঁদাবাজি আর মাদক ব্যবসাই হলো উপার্জনের উৎস। নানু ও মধু বাহিনীর দখলে হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ রোডে সিএনজি স্ট্যান্ড, হবিগঞ্জস্থ নবীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, টেম্পু স্ট্যান্ড, মোটর সাইকেল স্ট্যান্ড, টমটম স্ট্যান্ড, মির্জাপুর রাস্তার টমটম, শরবতে গাড়িসহ বিভিন্ন স্ট্যান্ড দখল করে অবৈধভাবে চাঁদা উত্তোলন করে আসছে। হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার নতুন খোয়াই মুখ এলাকার আমার চাচাত ভাই শেখ আব্দুল মতিনের দখলে ছিল। কিন্তু গত ১৯ নভেম্বর নানু, মধু, মুক্তার বাহিনী ওই টমটম স্ট্যান্ড দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দখলে নেন। এ সময় আমার চাচাত ভাই বাঁধা দিলে ওই বাহিনীর সদস্যরা তার উপর হামলা চালায়। পরে এ বিষয়টি জেনে আমিসহ আমার ভাই আব্দুর রশিদ ঘটনাস্থলে যাই কিন্তু ঘাতকেরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের লোকজনদের উপর হামলা চালায় এবং আমার ভাইকে টেটা দিয়ে আঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত ডাক্তার আশংকাজনক অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ইউসিইউতে ৫দিন চিকিৎসা শেষে ৬ দিনের মাথায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
শেখ আব্দুল হান্নান আরো বলেন- প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি আমার ভাই হত্যা মামলার আসামীদের যেন দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়। মামলার বাদী নিহতের ছোট ভাই মখলিছ মিয়া জানান, হাজী লুৎফুর রহমান, তার ভাই মধু মিয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। নিহত রশিদের চাচাত ভাই রহমত আলী জানান, রশিদ অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। সেটি তার জানাজার নামাজে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করেছে। তিনি তার চাচাত ভাইয়ের ঘাতকদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। অন্যথায় উমেদনগরবাসী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি হাতে নেবে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার খোয়াইমুখ টমটম স্ট্যান্ড দখল নিয়ে পৌর এলাকার উমেদনগর আলগাবাড়ি বনাম পূর্ব এলাকার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্ট্যান্ড এলাকায় সংঘর্ষ হলেও পরে নবীগঞ্জ সড়কের মাদ্রাসা এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে একপক্ষ অপর পক্ষের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম পিপিএম ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মো. মাসুক আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে উভয়পক্ষের ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষে নিহত শেখ আব্দুর রশিদ, পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় আব্দুর রশিদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ইউসিইউতে ৫দিন চিকিৎসা শেষে ৬ দিনের মাথায় তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় ৩৬জনকে আসামী করে ২৭ নভেম্বর হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই মখলিছ মিয়া। ওই মামলায় ৩ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উমেদনগর আলগাবাড়ির নিমরাজ মিয়া ছেলে রিয়াদ হাসান, আরব আলীর ছেলে মিতু ও আব্দুস সালামের ছেলে সায়েম মিয়া। এদিকে ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ হত্যা মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।