এসএম সুরুজ আলী ॥ পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে বানিয়াচঙ্গের শেখের মহল্লা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট গোলাম ওয়াহিদ রেড কিং নামে বিশাল আকৃতির ষাড় লালন-পালন করেছেন। তিনি নিজের খামারের অস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়ান (শংকর) জাতীয় গাভির বাচ্চাকে গাভীর দুধ, দেশীয় খাবার, খৈল ভূমিসহ ঘাস খাওয়ানো মাধ্যমে সাড়ে ৩ বছর লালন-পালন করে বিশাল আকৃতিতে পরিণত করেন। তিনি ওই ষাড়টির নাম দিয়েছেন রেড কিং। আবার অনেকেই ষাড়টিতে লাল বাদশা নামে ডাকেন। ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে যখন তিনি ষাড়টি বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন এলাকার লোকজন ষাড়টি দেখার জন্য প্রতিদিনই তার বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। গরুটি লালন-পালন করতে গোলাম ওয়াহিদের সাড়ে ৩ বছরে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে এবারের বাজারে গরুটি দাম দেখে তিনি বিক্রি করতে চান। ওই বিশাল আকৃতির গরুটির লালন-পালনে কোন মোটা তাজাকরণের ইনজেকশন ও পুশ করা হয়নি বলে জানিয়েছন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কাশেম। এলাকাবাসি জানিয়েছেন এতো বড় আকারের গরু আর বানিয়াচঙ্গের কেউ লালন পালন করেননি। তাই গোলাম ওয়াহিদের রেড কিংকে দেখার জন্য লোকজন প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন। গত ২৪ জুলাই সরেজমিনে গোলাম ওয়াহিদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, রেড কিং দেখার জন্য লোকজন ভিড় জমিয়েছেন। এ সময় অনেকেই রেড কিং এর দাম এবারের বাজারে কত টাকা হতে পারে এ নিয়ে আলোচনা করছেন।
এ ব্যাপারে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট গোলাম ওয়াহিদ জানান, চাকুরী থেকে অবসর নেয়ার পর বাড়িতে নিজের কৃষি জমি-জমা চাষ করছি। চাকুরীতে থাকাকালেই গরু খামার করার স্বপ্ন ছিল তাই কয়েকটি গাভি গরু’র ছোট একটি খামার করি। আমার নিজ খামারের গাভির গর্ভে রেড কিং এর জন্ম হয়। রেড কিং এর জন্মের পর তাকে আমার দেখে সুন্দর লাগে। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই ওকে বড় করে গড়ে তোলার। কিন্তু রেড কিংকে কিভাবে বিশাল আকৃতির করা যাবে। তা নিয়ে অনেকটা চিন্তার মধ্যে পড়ে যাই। এক পর্যায়ে পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ নেই। পশু চিকিৎসক আমাকে পরামর্শ দেন রেড কিং এর মা থেকে যে দুধের উৎপাদন হয় সেই দুধগুলো তাকে পুরোপুরি খাওয়ানোর জন্য। তারপর আমি দুধ বাজারে বিক্রি না করে প্রতিদিন ১০ লিটার দুধ রেড কিংকে খাওয়াই। যখন রেড কিং বড় হতে শুরু করে তখন দেশীয় ঘাস, চালের কুড়া, খৈল ভূমিসহ অন্যান্য দেশীয় খাবার খাওয়ানো শুরু করি। এ ভাবে আস্তে আস্তে রেড কিং বড় হতে থাকে। গত বছর ঈদুল আযহার হাটে রেড কিং বাজারে তুললে এর দাম ৫ লাখ টাকা উঠে। কিন্তু আমি বিক্রি করিনি। সব মিলিয়ে রেড কিং এর পেছনে খরচ হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এর উচ্চতা হবে ৬ ফুট, লম্বায় ৮ ফুট, বুকের মাপ সাড়ে ৮ ফুট। রেড কিং থেকে ৪০ মণ মাংস হবে বলে গোলাম ওয়াহিদ জানান। তিনি এবারের পশুর হাটে সেটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান। এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আবুল কাশেম জানান, রেড কিং এর জন্মের থেকেই আমি চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি এবং যখন যা লাগে এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আসছি। তিনি বলেন- রেড কিং বড় করতে গিয়ে দেশীয় খাবার খাওয়ানো হয়েছে। এটিকে শুধু কৃমির ঔষধ খাওয়ানো হয়েছে। মোটা তাজা করণের কোন ধরণের ইনজেকশন দেয়া হয়নি বা কোন পেটেনিং ক্যামিকেল খাওয়ানো হয়নি। দেশীয় খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে এটি হতো বড় করা হয়েছে। এর মাংস সুস্বাদু হবে। গরুটির মালিক গোলাম ওয়াহিদ রেড কিংয়ে ৪০ মণ মাংস হওয়ার কথা বললেও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জানিয়েছেন মাংস ৪০ মণের চেয়ে কিছু কম হবে। এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন জানান, এতো বড় আকৃতির গরু আমাদের এলাকায় আর কেউ লালন-পালন করেননি। তাই গোলাম ওয়াহিদের গরুটি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ তার বাড়িতে এসে ভিড় জমান।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com