নিতেশ দেব, লাখাই থেকে ॥ লাখাই উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল থেকে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হতে চলছে। এক সময়ে এ হাওর উপজেলায় দেশীয় মাছের স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে জাতীয় পর্যায়ের বাজার বন্দরে বাজারজাত সহ পর্যাপ্ত মাছ বিদেশে রপ্তানী করা হত। এখন আর তা হয় না বললেই চলে। মাছের দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্যতায় এ হাওর মানুষের মাছের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। খামারের মাছই এখন বাজারগুলো দখল করে ফেলেছে। অভিজ্ঞ জেলে ও গণ্যমান্য লোকজনের ভাষ্য হাওর থেকে ৫০ প্রজাতির দেশীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। এ উপজেলায় উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হল ধলেশ্বরী, সুতাং, গজারিয়া, বলভদ্র, বরাক, কলকলিয়া ও শাখাতি। জলমহালের সংখ্যা ৬৪টি যার আয়তন ১৪৭৭.১১ হেক্টর। খালের সংখ্যা ১০টি যার আয়তন ২৯.১৫ হেক্টর। মোট প্লাবনভূমি ৩৭৬০ হেক্টর। মিটা পানিতে পরিপূর্ণ এ উপজেলায় বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। মাছের জন্য সুপ্রসিদ্ধ এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানের লোকজন এসে মাছ শিকার এবং মাছের তৈরি সু-স্বাদু খাবার খেয়ে পরিবারের লোকজনের জন্য মাছ নিয়ে যেত। কিন্তু এখন আর তা নেই। নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস খাল বিল ভরাট করে কৃষি ক্ষেত অথবা বাড়ি ঘর তৈরী জলমহালগুলোতে, পাশর্^বর্তী জমিগুলোতে কীটনাশকের ব্যাবহারে মৎস্য সম্পদ উজাড় হয়ে গেছে। এছাড়াও অপরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ, পানি সেচের মাধ্যমে মাছ আহরণ, কারেন্ট জাল মশারী জালে রেনুপোনা ও মাছ ধরার কারণে এ হাওর অঞ্চলের মৎস্য সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বিলুপ্ত হতে চলছে। বিলুপ্ত হওয়া প্রধান মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- নানিদ মাছ, মাশুল মাছ, পাঙ্গাশ মাছ, টাকামাছ, কৈ মাছ, মাগুর মাছ, শিং মাছ, বাতাসী মাছ, গুং মাছ, রানী মাছ, পান মাছ, মৃগা মাছ, গাঘট মাছ খৈলিশা মাছ, বৈচা মাছ, কানলা মাছ, বামট মাছ, পাবদা মাছ, চেং মাছ, বাঘাইর মাছ, বেংরা মাছ, সিলুন মাছ, খল্লা মাছ, লাচ মাছ, এলগন মাছ, রামচেলা মাছ, গিলাকানি নাপিত মাছ ও গলদা চিংড়ি। এছাড়া ও বিলুপ্তির পথে প্রধান মাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- মলা মাছ, রুই মাছ, কাতলা মাছ, বজরী মাছ, হালনী মাছ, ডান কানা মাছ, গুতুম মাছ, স্বরপুটি মাছ, চান্দা মাছ, ডিমা চিংড়ী, বাইম মাছ ও মেনি মাছ। বুল্লা বাজার, বামৈ, লাখাই, মোড়াকরি, মাদনা, উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খামারের মাছই বাজার ভরপুর। নদী ও হাওরে দেশীয় প্রজাতির মাছ মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও এগুলোর দাম অত্যন্ত চড়া এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। খামারের মাছের দাম আনুপাতিক হারে কম।
বুল্লা বাজারের মাছ বিক্রেতা গোপি দাশ এ প্রতিনিধিকে জানান, দেশীয় প্রজাতির মাছ খুবই কম পাওয়া যায় এবং দাম বেশী। মাছ ক্রয় করতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, অধিক মুনাফার কারণে অবৈধ জাল দিয়ে মা মাছ ও পোনা মাছ অবাধে নিধনের ফলে এমনটি হচ্ছে। যদি প্রজননকালীন সময় স্থানীয় প্রশাসন সঠিকভাবে নজর রাখে তাহলে দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, নদী খাল হাওর পলিতে ভরে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত মাছ আহরণ, মিলকারখানার বর্জ্যরে কারণে দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছই হারিয়ে যাচ্ছে। তবে উৎপাদন বাড়াতে হলে দেশীয় মাছ বেশি ছাড়তে হবে, অভায়াশ্রম করতে হবে ও প্রজনন মওসুমে ডিমওয়ালা মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে বলে জানান তিনি।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com