লিটন পাঠান
মাধবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মাঠ পর্যায়ে চলছে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ। মহামারী করোনার বিপর্যয়ের মধ্যে এবার উপজেলায় দীর্ঘ সময়ের স্থায়ী বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে সরকারি হিসেবে বলা হচ্ছে। বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান- করোনাভাইরাসের প্রকোপের মাঝে বন্যায় তারা চরম অসহায় অবস্থায় আছেন। এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই জমি চাষ করে লাউ, করলা, বেগুন, কায়তাসহ বিভিন্ন শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাধবপুরের সবজি চাষিরা। জমি চাষাবাদ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় আবার ঝড়-বৃষ্টি। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-বৃষ্টির কারণে আগাম সবজি চাষে অনেক বেশী খরচ হচ্ছে। এরই মধ্যে কৃষকরা সবজি লাগানোর জন্য একের পর এক জমি চাষ করে যাচ্ছেন। একটু খড়া হলেই শুরু হয় জমি চাষের প্রক্রিয়া। বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে এভাবেই সবজি চাষ করার জন্য জমিকে উপযোগী করে তৈরি করছেন চাষিরা। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এক মাসের মধ্যেই ক্ষেত থেকে উঠবে আগাম শীতকালীন শাক সবজি। বেশি লাভ ও বাম্পার ফলন হবে এমনটাই প্রত্যাশা চাষি ও কৃষি বিভাগের। বৈরী আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টির কারণে এবারের সবজি চাষাবাদ করতে খরচ বেশি হচ্ছে বলে জানান চাষিরা।
মাধবপুর উপজেলার পূর্ব মাধবপুর গ্রামের সবজি চাষি খোকন মিয়া জানান- এবার ঝড়-বৃষ্টি বেশি হওয়ার কারণে জমিতে বেশি হাল চাষ করতে হচ্ছে। একটু খরা হলে শুরু হয় চাষাবাদ। আবার কিছুক্ষণ পরেই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। আবার খরা হলে নতুন করে চাষ করতে হয়। এভাবেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে তৈরি করতে হচ্ছে সবজি চাষের জমি। দুর্যোগ যখন আসে চতুর্দিক থেকেই আসে। একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাস অপরদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আগাম সবজি চাষ করতে পারছিনা আমরা। মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে জীবনকে বাঁচাতে যেভাবে যুদ্ধ করতে হচ্ছে আমাদের। ঠিক সেভাবেই আগাম সবজি চাষ করার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। করোনার কারণে অনেক জেলার বেকার যুবকরা চাকরির দিকে না ঝুঁকে নেমে পড়েছেন সবজি চাষে। আবহাওয়া ভালো থাক আর না থাক তারপরও আগাম সবজি চাষ করতে পিছপা হননি সবজি চাষিরা। বর্তমানে বাজারে কম পাওয়া গেলেও মাসখানেকের মধ্যে সবজিতে ভরপুর হবে মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলো। দাম কিছুটা বেশি হলেও ভোক্তারা স্বাদ নেবেন শীতকালীন আগাম শাক সবজির। তাই নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত সবজি ক্ষেতে বাঁশ কেটে মাচা দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
উপজেলার বারাচান্দুরা গ্রামের সবজি চাষি ওয়াহাব মিয়া জানান- ঝড় বৃষ্টির কারণে অনেকে সবজি চাষাবাদ কমিয়ে দিয়েছেন। গত বছর যে চাষি ১০ বিঘা সবজি চাষ করেছিলেন এবারে তা কমে এসেছে ছয় থেকে সাত বিঘায়। টানা বৃষ্টির কারণে অনেকেই জমিতে পানি থাকার কারণে সবজি চাষ করতে পারেননি। এবার সবজি চাষে খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দাম ভাল পাবো বলে আশা করছি।
কৃষি বিভাগের সূত্রে জানা যায়- গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় কম সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। টানা ঝড় বৃষ্টির কারণে এবার হয়েছে সাত হাজার হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হবে দুই লাখ মেট্রিক টন শাক-সবজি। মাধবপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান- আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর তাই ফলন বেশি হয়। এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।