মোঃ নুরুজ্জামান ফারুক্বী, নবীগঞ্জ থেকে ॥ নবীগঞ্জ উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো এখন মরা খাল, বছরের অধিকাংশ সময় থাকে শুকনো ধু ধু বালুচর। নদীর বুক চিড়ে চাষ হচ্ছে সোনালী ফসল। অধিকাংশ নদী মরে গেছে। ভরাট হয়ে গেছে শতাধিক খাল, বিল, ডোবা ও জলাধার। সংকুচিত হয়ে পড়েছে পানি প্রবাহ। বিলীন হতে চলেছে নদীর অস্থিত্ব। ফলে বোরো ফসলের বিপর্যয় নেমে এসেছে। হুমকির মুখে পড়েছে হাওর ও বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, কচ্ছপ, শামুক, ঝিনুক সহ শতাধিক প্রজাতির দেশীয় মাছ। হারিয়ে গেছে জেলেদের জীবন যাত্রা। এলাকায় দেখা দিয়েছে মাছের আকাল। এছাড়া নদী ও হাওরের উপর নির্ভরশীল শতাধিক পরিবারের কর্ম সংস্থানের উপর প্রভাব পড়েছে। ওই নদীগুলো ছিলো ওই এলাকার জীবন জীবিকার মাধ্যম, নদীর পানি দিয়ে চলতো কৃষকের চাষাবাদ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো হাজার হাজার জেলে সম্প্রদায়। শুধু তাই নয় নদী থেকে পুরন করা হতো এলাকার দেশী মাছের চাহিদা। পরিবেশবিদদের মতে ভৌগলিক ভূ-ত্বাতিক অবস্থানগত কারনে নবীগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা নদীগুলো কোনটি হয়ে পড়েছে স্রোতহীন। অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে ডেবনা নদীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক নদী। এতে পানিপ্রবাহ হৃাস পেয়েছে। ফলে কৃষি চাষে কৃষকদের খরচ বেড়েছে। অনেক স্থানে নদীর চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে জীব বৈচিত্র। তেমনি নবীগঞ্জের খরস্রোতা ডেবনা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পলি ও বালু জমে নাব্যতা কমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে বিপন্ন হয়ে পড়েছে এর জীব বৈচিত্র। ডেবনা নদীটি বরাক নদীর শাখা নদী হিসেবে পরিচিত। সর্পিল গতির খরস্রোতা ডেবনা নদীটি নবীগঞ্জের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসলেও এখন তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাহাড়ি ছড়া দিয়ে নেমে আসা বালিমাটি ও পলি জমে নদীর উৎস মুখ ভরাট হয়ে গেছে। সেচ, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পানির অন্যতম উৎস নদীটি এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে শত শত জেলে ও তার পরিবার। বেকার জেলে পরিবারগুলো এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে ডেবনা নদীর পরিবেশ এখন বিপন্ন ও জীব বৈচিত্রহীন হয়ে পড়েছে। সম্ভাবনাময় ডেবনা নদীটি খনন না করায় একদিকে যেমন নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে তেমনি প্রাণহীন নদীর বুকে ব্যস্ত কৃষক, ভৌগলিক জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নদীর চর দখলে ব্যস্ত ভূমি খেকোরা। একসময়ে এ নদীর পানি দিয়েই হাজার হাজার হেক্টর জমি চাষ করতেন কৃষকরা।