স্টাফ রিপোর্টার ॥ নদীর এপার থেকে ওপার বাঁশের মধ্যে দড়ি টানানো। ছোট ডিঙ্গি নৌকায় দশ থেকে বারো জন বোঝাই করে টেনে টেনে পারাপার। মাঝেমধ্যে নৌকা ডুবে হতাহতের ঘটনা। এ যেন দুর্ভোগের চূড়ান্ত সীমা। হবিগঞ্জ শহরতলীর পূর্ব ভাদৈ এলাকায় দুর্ভোগময় নদী পারাপারের এই দৃশ্য অর্ধশত বছরেরও বেশি পুরোনো। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে এ যাবৎকাল পর্যন্ত ত্রিশটিরও বেশি গ্রামের লাখো মানুষের দুর্ভোগে সমব্যথী হননি কোন জনপ্রতিনিধি।
অবশেষে ৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় উল্লেখিত এলাকায় ব্রীজ নির্মাণের ব্যবস্থা করলেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। গতকাল শুক্রবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন তিনি নিজেই। এলাকাবাসী আয়োজন করেন সুধী সমাবেশের। সমাবেশ নয়, এ যেন ঈদ উৎসব। এলাকাগুলোতে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন এমপি আবু জাহির। মুখে মুখে ফুটে উঠে কৃতজ্ঞতাপূর্ণ ভাষা।
নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, আপনাদের কাজ করার জন্য আপনাদেরই ভোটে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। সকলের দুঃখ-দুর্দশার সঙ্গী হওয়া এবং দুর্ভোগ লাঘব করাই আমার দায়িত্ব। আর জনগণের কাজকে আমি ইবাদত মনে করি। জননেত্রী শেখ হাসিনা হবিগঞ্জবাসীকে যা দিয়েছেন, তা অতীতের কোন সরকার দেয়নি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে ইনশাল্লাহ।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব ভাদৈ, ছয় ঘরিয়া, আসামপাড়া, গড়ের হাটি, পইল, দক্ষিণ পইল, পাচপাড়িয়া, পাইকপাড়া, আটঘরিয়া, অছিপুর, পূর্ব পইল, আউশপাড়া, শিয়ালদাড়িয়া, পশ্চিমগাঁওসহ প্রায় ৩০ গ্রামের লাখো মানুষ প্রতিদিন ছোট নৌকা নিয়ে ঝূঁকিপূর্ণ চলাচল করতেন। পূর্ব ভাদৈ এলাকায় খোয়াইতে একটি ব্রীজের অভাবে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। শিক্ষা থেকে পিছিয়ে ছিল এলাকার লোকজন। হবিগঞ্জ শহরের সাথে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার বড় বাঁধা ছিল এই নদী পারাপার। একের পর এক সরকার এবং জনপ্রতিনিধি ক্ষমতায় আসীন হলেও এই দুর্ভোগে নজর পড়েনি কারো। একটি ব্রীজ নির্মাণ ছিল এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এবং প্রাণের দাবি। অবশেষে এমপি আবু জাহির পূরণ করে দিচ্ছেন এই দাবি। এতে তারা অত্যন্ত আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এমপি আবু জাহিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তারা।
এ ব্যাপারে গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, এমপি আবু জাহিরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্রীজটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ায় ইউনিয়নবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। সবসময় সংসদ সদস্যের পাশে থাকতে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল বাছির জানান, হবিগঞ্জ এলজিইডি ৮ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্রীজটি নির্মাণ করছে। যার দৈর্ঘ্য ১৩৪.০৯ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৩০০ মিটার। ৬টি স্প্যানের উপর দাঁড়াবে ব্রীজটি। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে নির্মাণ কাজ। স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহিরের প্রচেষ্টায় ব্রীজটি নির্মাণ হচ্ছে। স্থানীয় জনগণ সংসদ সদস্য ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তার নামেই ব্রীজের নামকরণের দাবি জানালে সেটি অনুমোদন হয়। এর কাজ শেষ হলে ভাদৈ ও পইল এর কিছু এলাকা উপ-শহরে পরিণত হবে। পাশাপাশি এই ব্রীজকে কেন্দ্র করে বাহুবল উপজেলার সাথে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার মধ্যে একটি বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সরকারের গ্রামকে শহরে পরিণত করার যে স্বপ্ন তাও বাস্তবায়ন হবে।
উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোঃ আলমগীর চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ ইসমাইল হোসেন, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার ইকবাল, হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, রোটারিয়ান এমএ রাজ্জাক, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাইদুর রহমান, গোপায়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আক্তার হোসেন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই এমপি আবু জাহিরকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। প্রদান করা হয় সম্মাননা স্মারক। এতে এলাকার হাজারো মানুষ উপস্থিত ছিলেন। পরে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সুধী সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে।