এসএম সুরুজ আলী
এই তো ২০০৬ সালের দিকে তোমার সাথে আমার প্রেম সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল। এই সম্পর্কটা করতে গিয়ে তোমাকে কতই না চিঠি লেখেছি। কতই না অপমানিত হয়েছি তা বলা বাহুল্য। প্রথমে তুমি আমার চিঠি জবাবে সাড়া দাওনি। যখন চিঠির উত্তর পাঠাতে আমাকে গালি-গালাজ করতে তুমি। আমি নাছুরবান্দা হয়ে প্রতি দিনই কারোও না কারো মাধ্যমে তোমার কাছে চিঠি পাঠাতাম। এ ভাবে অনেক চিঠি লেখার পর সর্বশেষ আমার হাত কেটে রক্ত দিয়ে তোমার কাছে চিঠি লেখি। সেই চিঠিটা পড়ে তুমি আমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিলে এবং আমার ভালোবাসায় সাড়া দিয়ে আমার সাথে দেখা করার কথা বলেছিলে। তারপর তুমি স্কুলে যাওয়ার পথে রাস্তায় দেখা করি। পায়ে হেটে যেতে যেতে দু’জন অনেক কথাই বলেছিলাম সেদিন। প্রথম দেখার দিনই তুমি আমাকে একটি রুমাল উপহার দিয়েছিলে। সেই রুমালটিতে লেখা ছিল কখনও ভুলনা বন্ধু আমায়। আমি তোমাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালবেসে যেতে চাই। এই রুমালটি পেয়ে আমি তোমার প্রতি আরো দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম। সেদিন রাতে দু’চোখে ঘুম আসেনি। তোমার ছবি শুধু আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। ঘুমাতে গিয়ে বার বার তোমার এই আবেগময় কথাগুলো মনে পড়েছিল। আমি সেই মুহূর্তে তোমায় নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। মনে মনে ভাবতে শুরু করি, একদিন তুমি আমার জীবনসঙ্গি হয়ে আসবে। তোমায় নিয়ে আজীবন সুখ দুঃখে কাটাবো আমি। এমন স্বপ্ন নিয়ে দু’জনের দিনগুলো সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কেউ জানতো না দু’জনের মধুর স্বপ্নের খবর। দু’জনার বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় প্রতিদিন দেখা হতো, মধুর কথা হতো। তোমার আমার এই মধুর কথা বলাতে প্রথমে আমাদের আত্মীয় স্বজনসহ আশ-পাশের বাড়ির লোকজন বুঝতে পারেতো না যে, আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলছে। সেটি তুমি আর আমিও কাউকে বুঝতে দেইনি। দুয়েকজন কানাঘুসা করলেও কারো কাছে প্রকাশ করেননি তোমাকে ভালবাসার কথা। তুমি স্কুল থেকে এসে প্রতিদিনই আমার সাথে দেখা করতে, আমাকে নিয়ে তোমার স্বপ্নের কথাগুলো বলতে। যে দিন তোমার সাথে দেখা হতো না, মোবাইল ফোনে কথা বলতে। একদিন কথা না বলে তুমি থাকতে পারতে না। আমার জন্য প্রায় পাগল হয়ে যেতে তুমি। সে রকম আমি ছিলাম বটে। তোমাকে ঘেরা প্রতি মুহূর্তের স্বপ্ন ছিলো আমার। সেই সময়টায় প্রতি বছর বিশ^ ভালবাসা দিবস, কিংবা পহেলা বৈশাখের দিন তোমার সাথে আমার দেখা হতো। নির্জনে দু’জন বসে প্রাণ খুলে মনের লালিত স্বপ্নের কথাগুলো বলতাম। ভালবাসার উপহার হিসেবে ফুল বা টি শার্ট আমাকে উপহার দিতে তুমি। আমি তোমাকে উপহার হিসেবে ফুলের সাথে জামা দিতাম। আর মধূময় মায়ার দৃষ্টিতে তুমি আমার দিকে থাকিয়ে থাকতে। দু’জন দু’জনাকে পাওয়ার আবেগঘন এক মুহূর্ত সৃষ্টি হতো।
এ ভাবে দু’জনের সম্পর্কটা চলতে থাকে বহু দিন। এক পর্যায়ে লোক মুখে জানাজানি হয়ে যায় আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমাকে ভালোবাস। পাশাপাশি দু’জনের পরিবারের লোকজন জেনে যায় প্রেমের সম্পর্কের খবর। প্রথম দিকে তোমার আমার পরিবার থেকে কোন ধরণের বাঁধা ছিল না। তোমার মা আমার কাছে তোমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য রাজি ছিলেন। কিন্তু আমি বেকার থাকায় তোমার বাবা রাজি ছিলেন না। আর আমার বাবাও তোমাকে আমাদের পরিবারে বউ হিসেবে আনতে রাজি ছিলেন না। এ নিয়ে দু’পরিবারে ভেতরে ভেতরে চরম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই বাধা বিপত্তি পেরিয়েও আমাদের সম্পর্কটা চলতে থাকে। এরই মধ্যে তোমার সাথে দেখা ও কথা বলতে গিয়ে কতই না অপমানিত হয়েছি আমি। তোমার প্রেমের কারণে আমার আব্বা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তোমার পথ থেকে আমাকে এক পা সড়াতে পারেননি। আজ আমার আব্বা দুনিয়াতে নেই। তুমিও আমার জন্য অনেক অপমানিত হয়েছ, তুমি তোমার মা-বাবার মারধোর খেয়েছ, কিন্তু আমার পথ থেকে সড়ে যাওনি। আমাকে ভুলতে পারবে না বলে তুমি একবার ঘুমের অতিরিক্ত ঔষধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলে। মৃত্যুর পথ থেকে তুমি চিকিৎসা নিয়ে বেঁেচ এসেছিলে। যেদিন তুমি ঔষধ খেয়েছিলে সেইদিন তোমার মা-বাবা উঠানে দাঁড়িয়ে আমার আব্বার নাম নিয়ে আমাকে অনেক গালি-গালাজ করেছিলো। তাদের এই গালি-গালাজ শুনে লোক মুখে ছড়িয়ে পড়েছিলে আমি নাকি তোমাকে নিয়ে পালিয়ে গেছি। কিন্তু তখন তুমি ছিলে হাসপাতালে। যখন তুমি সুস্থ হয়ে আমাকে ফোন করেছিলে। তখন আমি তোমাকে বলেছিলাম এমন কাজ কি জন্য করলে পাগলী। প্রতি উত্তরে তুমি বলেছিলে যে পৃথিবীতে তোমাকে পাবো না, সেই পৃথিবীতে বেঁচে থেকে লাভ কি? আমি বলেছিলাম আমাকে পাবে না তো কি হয়েছে, তুমি তো বেঁচে থাকবে। তুমি বেঁচে থাকলেই আমার ভালবাসা বেঁচে থাকবে। আর যদি তুমি মারা যাও তাহলে আমি কি ভাবে বেঁেচ থাকবো। এই অবস্থায় দু’জনের পরিবারের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। আমার আব্বাকে আমি রাজি করাতে পারলেও তুমি পারোনি তোমার আব্বাকে রাজি করাতে। এরই মধ্যে ২০১১ সালের দিকে হঠাৎ করেই তোমার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। তুমি তোমার বিয়ের খবরটা নিজেই আমাকে ফোন করে জানালে। যখন জানলাম তোমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তখন আমার বুকে প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল? কিভাবে তোমায় ছাড়া বাঁচবো আমি। চেষ্টা করলাম তোমার বিয়ে ফেরাতে কিন্তু কিছুতেই তোমার বিয়ে ফেরাতে পারলাম না। তুমি লাল বেনারসি শাড়ী পরে অনেকটা লোভের বশবতি হয়ে এক প্রবাসীর ঘরে চলে গেলে, আমায় ফেলে একা। মধুময় বাসর রাত কাটানোর পরের দিন তুমি আমার কাছে ফোন করে খোঁজ নিলে আমি কেমন আছি। আমি বলেছিলাম তুমি ছাড়া কিভাবে ভালো থাকবো বলো। বিয়ের পরও তুমি আমার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে। কিন্তু একটা পর্যায়ে তুমি যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে। বর্তমানে তুমি দু’সন্তানের জননী। আমিও দু’সন্তানের জনক। তারপরও তোমাকে কিছুতেই ভুলতে পারছি না। ভালাবাসা দিবসকে সামনে রেখে বার বার তোমার কথা খুবই মনে পড়ছে। তাই তোমাকে ভালবাসার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। তুমি ভালো থাক, সুস্থ থাক।
লেখক
সাধারণ সম্পাদক, হবিগঞ্জ টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন
পাঠকের চিঠি
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com