পিতার হত্যা মামলা দায়ের ॥ ময়না তদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করা হবে জেরিনের লাশ

এসএম সুরুজ আলী ॥ অপহরণকারীদের কবল থেকে বাঁচতে গিয়ে সিএনজি অটোরিক্সা থেকে লাফ দিয়ে আহত হয়ে মারা গেছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী মদিনাতুল কুবরা জেরিন। এ ঘটনায় জেরিনের বাবা আব্দুল হাই বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার রাতে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, অপহরণে ব্যর্থ হয়ে সিএনজি চালক ও তার সহযোগিরা জেরিনকে গাড়ী থেকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে। এদিকে ঘটনায় জড়িত সিএনজি অটোরিক্সা চালকসহ সহযোগিদের গ্রেফতারে পুলিশ অব্যাহত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার লুকড়া ইউনিয়নের ধল গ্রামের আব্দুল হাই’র মেয়ে রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মদিনাতুল কুবরা জেরিন প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। এ সময় রাস্তায় এসে স্কুলে আসার জন্য একটি সিএনজি অটোরিক্সায় উঠে জেরিন। সিএনজি অটোরিক্সা স্কুলের সামনে আসলে জেরিন চালককে নামিয়ে দেয়ার কথা বললে সে স্কুলের সামনে জেরিনকে নামিয়ে না দিয়ে অপহরণের উদ্দেশ্যে সিএনজি চালিয়ে যেতে থাকে। এ সময় জেরিন চিৎকার করলে সিএনজি অটোরিক্সা চালক ও তার সহযোগিরা তাকে জোরপূর্বক গাড়ীতে বসিয়ে রাখে এবং তার শরীরে হাত দেয়। এক পর্যায়ে জেরিন বাঁচার জন্য সিএনজি অটোরিক্সা থেকে লাফ দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এতে সে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মারা যায় জেরিন।
এদিকে জেরিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে একই ইউনিয়নের বামকান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাখাই-মাদনা রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক ভাংচুর করে। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে রিচি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও হবিগঞ্জ-লাখাই সড়কের রিচি, ধল, করাবসহ কয়েকটি স্থানে রাস্তায় অবরোধ সৃষ্টি করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় লাখাই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাসুক আলী ও ইন্সপেক্টর দৌস মোহাম্মদসহ পুলিশের কর্মকর্তারা। তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেয়।
এদিকে গতকাল সোমবার বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় সিএনজি অটোরিক্সার ধাক্কায় স্কুল ছাত্রী জেরিন নিহত হয়েছে। এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর নিহতের নিজ গ্রাম ধল থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এ প্রতিনিধিকে জানান, জেরিন দুর্ঘটনায় মারা যায়নি। জেরিনকে অপরহরণ করতে চেয়েছিল সিএনজি অটোরিক্সা চালকসহ তার সহযোগিরা। সে অপহরণকারীদের কবল থেকে বাঁচার জন্য সিএনজি অটোরিক্সা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করতে চেয়েছিল। এতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে চিকিৎসাধিন অবস্থায় মারা যায়।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মাসুক আলী জানান, স্কুলছাত্রী জেরিন নিহতের ঘটনায় গতকাল রাতে তার বাবা অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামী করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার সকাল ৮টায় তার মেয়ে জেরিন বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রাইভেট পড়ার জন্য একটি সিএনজি অটোরিক্সা যোগে ধল থেকে রিচির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সিএনজিতে উঠার পরই সিএনজি চালকসহ সিএনজিতে থাকা তার সহযোগিরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জেরিনকে অপহরণের চেষ্ট করে। জেরিন তার বিদ্যালয়ের সামনে এসে সিএনজি অটোরিক্সা চালককে নামিয়ে দেয়ার কথা বললে সিএনজি অটোরিক্সা চালক তাকে ওই স্থানে নামিয়ে দেয়নি। এক পর্যায়ে সে শোর চিৎকার করলে তাকে সিএনজি অটোরিক্সা থেকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেয়া হয়। এরপর জেরিন গুরুতর আহত হয়ে মারা যায়।
তিনি আরও বলেন, ময়না তদন্ত ছাড়াই জেরিনের লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছিল। যেহেতু হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেহেতু ময়না তদন্তের জন্য জেরিনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হবে।