সুতাং নদীর পানি দূষণ রোধ এবং নদীটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই করা হবে। পরিবেশ রক্ষায় কোম্পানীগুলোকে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করা হবে
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ হবিগঞ্জে মহান বিজয় দিবস উদযাপনে কারো কাছ থেকে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোন অনুদান গ্রহণ করা হবে না। অতীতে মহান বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে একটি কোম্পানী জুস ও পানি দিত। আর তা মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানো হতো। অথচ ওই কোম্পানীর বর্জ্যে হবিগঞ্জের সুতাং নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। মাছসহ জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। কৃষি জমিতে কাজ করতে পারছেন না কৃষকরা। ওই এলাকার মানুষ চর্ম রোগসহ নানা রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই কোম্পানীর পানি ও জুস খেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতি কোন সহানুভূতি প্রকাশ করবেন না। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধারা ওই কোম্পানীর পানি ও জুস পান করবেন না মর্মে কথা দিয়েছেন। ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব হবিগঞ্জের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, কারো কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করলে তার অন্যায় আবদারও রক্ষা করতে হয়। তাই কারো কোন অনুদান গ্রহণ করা হবে না, অন্যায় আবদারও রাখা হবে না। তাছাড়া সুতাং নদীর পানি দূষণ রোধ এবং নদীটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই করা হবে। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, কোন কোম্পানীই ইটিপি ব্যবহার করে না। পরিবেশ রক্ষায় তাদেরকে ইটিপি ব্যবহারে বাধ্য করা হবে। প্রাণ আরএফএল গ্রুপের দাবি তাদের বর্জ্যে সুতাং নদীর পানি দূষিত হচ্ছে না। উজান থেকে স্কয়ারের ক্যামিকেলযুক্ত পানি এসে সুতাং নদীর পানি দূষিত করছে। অপরদিকে স্কয়ার কোম্পানীর দাবি তাদের কোন পানি খালে ছাড়া হয় না। প্রাণ কোম্পানীর পানি খাল দিয়ে ছাড়া হয়। ওই পানি সুতাং নদীতে গিয়ে মিশে সুতাং নদীর পানি দূষিত করছে। ফলে ওই এলাকার জীব বৈচিত্র হুমকির সম্মুুখিন। এ প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক প্রাণ এবং স্কয়ার উভয় কোম্পানীকে আলাদা খাল খনন করে ওই খালে পানি ছেড়ে নিশ্চিত করতে হবে পানি কার। আলাদা খাল খনন করে দিতে তিনি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসানের সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার ঘোষণা দিয়ে নিজে তা তদারকি করার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক।
সোসাইটির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন উপলক্ষে শনিবার সকাল ৯টায় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামুলক সাইনবোর্ড ও স্টিকার লাগানো এবং উদ্যানে বৃক্ষরোপন অভিযান পরিচালনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বন পরিবেশ ও জলবায়ূ পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহমুদ হাসান।
সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জালাল আহমেদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মোঃ মাসুক মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মিজানুর রহমান, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ, চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সত্যজিত রায় দাশ, বাহুবলের নয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ¯িœগ্ধা তালুকদার, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন ইকবাল, কবি ও লেখক তাহমিনা বেগম গিনি, চুনারুঘাট পৌর মেয়র নাজিম উদ্দিন, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের সিএমসি সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামছুন্নাহার চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকবর হোসেন জিতু, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা সভাপতি তোফাজ্জল সোহেল, আয়োজক ডাঃ এসএস আল-আমিন সুমন, সিএমসি সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, কোষাধ্যক্ষ সত্যেন্দ্র চন্দ্র দেব, অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির সৈকতসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, প্রকৃতির সান্নিধ্যে ছবি তোলা এবং ট্রেইল হাইকিং। এতে ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্যবৃন্দ অংশ নেন।