হবিগঞ্জের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্ব
হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডের সদস্য লাকী ভবিষ্যতে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন
এসএম সুরুজ আলী ॥ রওশন আরা ভুইয়া লাকী। তিনি হবিগঞ্জ জেলা পরিষদের সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ডের সদস্য। বানিয়াচঙ্গ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ড। ওই দুই উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তিনি। আবার বানিয়াচঙ্গ উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও উপজেলা মহিলা লীগের একাংশের সভাপতি। এছাড়াও তিনি জেলা কৃষকলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। তিনি নন্দীপাড়া গ্রামের ডাঃ আব্দুর রহমান ভূইয়ার কন্যা। ডাঃ আব্দুর রহমান ভূইয়া একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ^াসী ছিলেন। এই সুবাদে রওশন আরা ভূইয়া লাকী ১৯৯৭ সালে জনাব আলী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হওয়ার পরই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হন। পরবর্তীতে তিনি কলেজ ছাত্রলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর ছাত্রলীগের যত কর্মসূচি পালন করা হয়েছে সেগুলোতে লাকী নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০২ সালে তিনি ডিগ্রী পাস করার পর বানিয়াচঙ্গ উপজেলার মন্দরী গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলী আহমেদ লস্করের সাথে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে ১ পুত্র ও ১ কন্যা সন্তানের জননী তিনি। ২০১১ সালে বানিয়াচঙ্গ উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন তিনি। মহিলা লীগের দায়িত্ব নেয়ার পরই মহিলা লীগকে সুসংগঠিত করেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে তিনি বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে আরো সক্রিয় হন তিনি। ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর জেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি ১নং সংরিক্ষত ওয়ার্ডের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় প্রায় ৫৫ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন। বিগত সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও সর্বশেষ হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিন গণসংযোগ ও কর্মীসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। জেলা পরিষদ সদস্য রওশন আরা ভূইয়া লাকী জানান, পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। মহিলা হিসেবে যখন তিনি রাজনীতি শুরু করেন তখন বানিয়াচঙ্গে মহিলারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
রওশন আরা ভুইয়া লাকী বলেন- মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর ঘরে ঘরে গিয়ে মহিলাদের মহিলা লীগের সদস্য করি। তখন আমার সাথে উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন রুনা আক্তার। দীর্ঘদিন কাজ করে যখন মহিলা লীগকে বানিয়াচঙ্গের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করি তখন একদল সুযোগ সন্ধানী মহিলা লীগের রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। আমার কমিটির বিরুদ্ধে পাল্টা আরেকটি মহিলা লীগের কমিটি গঠন করে। আমি যখন জেলা পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করি তখনও আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়। সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে জনপ্রতিনিধিদের ভোটে আমি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। আমি ও আমার সাধারণ সম্পাদক নাসরিন আক্তার মায়ার নেতৃত্বাধীন কমিটি অনেক সুসংগঠিত। আমার বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন আজ তাদের মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমাদের কমিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি মনে করি, রাজনীতিতে গ্রুপিং লবিং থাকতেই পারে তবে কোন ধরণের প্রতিহিংসা নয়। আমি একজন মহিলা হিসেবে বলবো, জননেত্রী শেখ হাসিনা মহিলাদের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। তাই মহিলারা আজ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এগিয়ে আসছেন। আমি একজন নারী হয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকান্ডকে স্বাগত জানিয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।
রওশন আরা ভুইয়া লাকী আরো বলেন- ক্ষুধামুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত আরো শক্তিশালী করতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে মহিলাদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি করতে গিয়ে স্বামী কিংবা পরিবারের কারও বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারিবারিক বাঁধার সম্মুখীন হলে এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আর আমার স্বামী সব সময় আমাকে সহযোগিতা ও উৎসাহ প্রদান করছেন। আমার মত সব নারীদের যেন পারিবারিকভাবে রাজনীতিতে বাঁধা না দেয়া হয়। রাজনীতিতে নারীদেরকে যেন পরিবারের পক্ষ থেকে উৎসাহ প্রদানসহ সহযোগিতা করা হয়। রাজনীতিতে ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি এমন প্রশ্নের জবাবে রওশন আরা ভুইয়া লাকী বলেন, যদি রাজনীতি করি ভবিষ্যত পরিকল্পনা থাকবেই। ভবিষ্যতে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি নির্বাচিত হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবো। এই লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের ন্যায় মহিলা লীগকে শক্তিশালী করতে কাজ করছি। আশা করি তৃণমূল পর্যায়ের একটি সুসংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে মহিলা আওয়ামী লীগ।