স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চরহামুয়া গ্রামের গুলনাহার বেগম এলাকার একজন নিরীহ নারী। পিতা ও স্বামী কেউই বেঁচে নেই। গত প্রায় ৫০ বছর যাবত তাদের পূর্ব পুরুষের জমির উপর দিয়ে খোয়াই নদীর পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে রক্ষণা-বেক্ষণ করে ভোগ করে আসছেন। সরজমিনে ঘুরে জানা গেছে শুধু গুলনাহার বেগমই নয়, নদীর পশ্চিম পাড়ের মানুষের জমির উপর দিয়ে খোয়াই নদীর বাঁধ। নদীর বাঁধের নিচে তারা বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছের পাশাপাশি কাঠের গাছ রোপন করে ভোগ করে দিনযাপন করেন। গত ২৫ অক্টোবর গুলনাহার বেগম তার বসতঘর মেরামতের জন্য কাঠ প্রয়োজন হলে তার লাগানো কয়েকটি গাছ কাটেন। এসময় শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ বেলু মিয়া ও বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ গফুর মিয়া, লেঞ্জাপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানসহ আরো দুইজন তাকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে গাছগুলো নিয়ে যান। এই মর্মে ২৬ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন গুলনাহার বেগম।
লিখিত অভিযোগে গুলনাহার বেগম দুই কাউন্সিলরের সেই দিনের কথা তুলে ধরেন, তারা বলেন- গাছগুলো নাকি বনবিভাগের তাই আমরা ভোগ করতে পারব না। তারা গাছগুলো নিয়ে বনবিভাগে জমা দিবে। পরক্ষণে শুনা যায়, দুই কাউন্সিলর গাছগুলো ভাগবন্টন করে নিয়ে গেছেন।
পশ্চিম চরহামুয়া গ্রামের নিত্য গোপাল বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ও জমির উপর দিয়ে খোয়াই নদীর বাঁধ। এই বাঁধের নিচের অংশে আমরা গাছ ও বিভিন্ন ধরণের সবজি লাগিয়ে ভোগ করে আসছি। ইদানিং শত্রুর নজর পড়েছে আমাদের ফল গাছ ও কাঠ গাছের উপর। আমরা তাদের হাত থেকে রেহাই চাই।
আলাপুর গ্রামের মোঃ আকবর হোসেন বলেন, নদীর বাঁধের ভিতরে আমাদের বাড়ি এবং বাহিরে আমাদের পুকুর ও পারিবারিক কবরস্থান রয়েছে। আমাদের পূর্ব পুরুষরা নদীর বাঁেধর নিচে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে ভোগ করে আসছি। এখন একটি মহল আমাদের রোপনকৃত গাছগুলো কেটে নেওয়ার পায়তারা করতেছে। এই মহলের সাথে আব্দুস সামাদ সাবেক মেম্বারও জড়িত রয়েছেন। আরো দুষ্কৃতিকারী অনেকেই রয়েছেন, যারা জোরপূর্বক সাধারণ মানুষের গাছ কেটে নিয়ে যায়। এদের কারো পূর্ব পুরুষের জমিজমা নদীর ভিতরে নেই। আলাপুর গ্রামের আব্দুল মতিন বলেন, আমার লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছে নাম্বার দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া নিয়েছে রেঞ্জ অফিস। অথচ ৪০-৫০ বছর যাবত আমরা নদীর পাড়ে গাছ লাগিয়ে ভোগ করে আসছি। আলাপুর গ্রামের লিচু মিয়া বলেন, নদীর বাঁধের নিচে আমাদের পূর্ব পুরুষের জমি রয়েছে। নদীর বাঁধ হওয়ায় পর থেকে বাঁধে আমরা বিভিন্ন জাতের গাছ লাগিয়ে ভোগ করে আসছি। আলাপুর গ্রামের আব্দুল মালেক বলেন, আমার লাগানো ১৫-২০টি গাছে নাম্বার লাগানোর প্রক্রিয়া করেছে রেঞ্জ অফিস। আলাপুর গ্রামের শহিদ মিয়া বলেন, আমার লাগানো এবং যতœ করে বড় করা ৪০-৫০টি গাছ কেটে নেওয়ার পায়তারা করা হচ্ছে।
এছাড়াও একই গ্রামের বাচ্চু মিয়া, জামাল মিয়া, আলফু মিয়া, রহিম মিয়া, রফিক মিয়া, রশিদ মিয়া, শহিদ মিয়া, কালাম মিয়া, এখলাছ মিয়া, শামীম মিয়া,আব্দুল মতিন, আব্দুর রেজ্জাক, জুয়েল মিয়া, জগবন্ধুর লাগানো গাছেও শত্রুদের নজর পড়েছে।
এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অন্যায়ভাবে কোন লোক গাছ কাটার জন্য গেলে এখানে বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজরাতুন নাঈম বলেন, এ বিষয়টি আইনশৃংখলা মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগ ও ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা তদন্তপূর্বক বিষয়টি উপজেলা অফিসকে অবগত করবেন।
উপজেলা ফরেস্ট রেঞ্জার রামকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, গত ২৫ অক্টোবর এক মহিলা কিছু গাছ কেটেছেন খবর পেয়ে আমাদের অফিস থেকে লোকজন গিয়ে কিছু গাছ এনেছেন। বাকী কিছু গাছ রয়ে গেছে। সেগুলো আনা হবে।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com