বাংলাদেশের বন্দর শহর চট্টগ্রামের একজন নামকরা জাহাজ ব্যবসায়ী সুজিত কুমার সেন। কয়েকদিন হল তিনি হার্টের সমস্যায় হাসপাতালে শুয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তার হার্টের আর্টারিতে এমনভাবে ব্লকেজ হয়ে গেছে যেটা আর কোনো ভাবেই ঠিক করা সম্ভব নয়। বড়ো বড়ো হার্টের সার্জেনরা মিলে বোর্ড মিটিং বসিয়েছেন। বোর্ড মিটিং শেষে প্রত্যেকের মন্তব্য, “সুজিত বাবুর জীবনে বাঁচার কোনো সম্ভাবনা নেই।” হঠাৎ সার্জনদের মধ্যে একজন আশার আলোর মতো বলে উঠলেন, “আমেরিকায় একজন মহিলা হার্ট সার্জন আছেন, নাম ডা. মৌসুমী সেন, যিনি এরকম অপারেশন খুব ভালোভাবে করেন। তিনি নিশ্চই কিছু একটা উপায় বের করতে পারেন। তৎক্ষনাৎ একজন সিনিয়র হার্ট সার্জন ডা. মৌসুমী সেনের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা করলেন।
আমেরিকায় নিজ বাড়িতে বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন ডা. মৌসুমী সেন। হঠাৎ একটা মেইলে দেখলেন একজন বাংলাদেশী সার্জন এক পেসেন্টের সার্জারী নিয়ে তার মতামত চাইছে। পাঠানো সমস্ত তথ্যগুলো দেখে রিপ্লাই দেবার জন্য টাইপ করলেন, “হার্টের মধ্যে রক্ত প্রবাহিত হবার একটি আর্টারির মাত্র ৪০% রাস্তা বাদ দিয়ে, বাকী আর্টারিগুলি পুরোপুরি ব্লক হয়ে আছে। পেসেন্টের সার্জারি করা সম্ভব নয়।”
রিপ্লাই সেন্ড করতে যাবেন এমন সময় রোগীর নাম ও ঠিকানা দেখে চমকে উঠেন ডা. মৌসুমী। আগের লেখাটা মুছে দিয়ে নতুন করে টাইপ করলেন, “পেসেন্টের ফ্যামিলি ডিটেইলস এবং একটা ফটো যেন খুব শিঘ্রই তাকে পাঠানো হয়।”
কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে রোগীর ফটো সহ ফ্যামিলির তথ্য চলে এসেছে। মেইলে আসা ছবির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন ডা. মৌসুমী। তারপর রিপ্লাই দেন, “আমি নিজেই সুজিত বাবুর অপারেশন করতে চট্টগ্রাম আসছি।” কয়েকদিনের ইমার্জেন্সি ছুটির ব্যবস্থা করলেন এবং পরেরদিন ভোরবেলা বাংলাদেশ যাবার ইমার্জেন্সি ফ্লাইটের টিকিট বুক করে নিলেন ডা. মৌসুমী।
রাত্রে ডিনারের পর ডা. মৌসুমী তার মা লীলা দেবীকে বললেন, “তুমি যে এতো কষ্ট করে আমাকে আজ নামকরা ডাক্তার বানিয়েছ, তার জন্য তোমাকেও তো কিছু উপহার দেওয়া দরকার আমার। তাই আমি কাল সকালে বাংলাদেশ যাচ্ছি। ফিরে এসে তোমাকে সবকিছু বলবো; তুমি শুধু আশীর্বাদ করো আমি যেন আমার লক্ষ্যে সফল হই; তোমার মর্যাদা যেন আমি রাখতে পারি মা।”
পরদিন সকালে ডা. মৌসুমী আমেরিকা থেকে রওনা দিয়ে বাংলাদেশের ঢাকায় পৌঁছেন, সেখান থেকে ডমেস্টিক ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছাতে রাত দশটা বেজে যায়। রাতেই সেখানকার ডাক্তারদের সাথে বোর্ড মিটিংয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি অপারেশন করবেন যদিও এক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভবনা খুব কম, তাও তিনি রাজি হয়ে গেলেন।
পরের দিন সকাল দশটা বেজে সাত মিনিটে সুজিত কুমার সেনের হৃৎপিন্ডের বাই-পাস সার্জারি আরম্ভ হলো। টানা আট ঘন্টা চেষ্টা করার পর সুজিত বাবুর হৃৎপিন্ডের ব্লকেজগুলো খুলে গিয়ে রক্ত বয়ে চলেছে। ডা. মৌসুমী বলে উঠলেন, “অপারেশন সাক্সেসফুল”।
জ্ঞান ফেরার পর সুজিত বাবু মৌসুমী সেনের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি মানুষ নন ডাক্তার ম্যাডাম, আপনি ভগবান; আপনি আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। আমি তো স্বয়ং যমরাজকে দেখতে পাচ্ছিলাম। সেই বাবা-মা কতো ভাগ্যবান, যারা আপনাকে জন্ম দিয়েছেন।”
এবার ডা. মৌসুমী সেন বলেন, “যদি বলি আপনিই সেই ভাগ্যবান বাবা”। সুজিত বাবু বিষ্ময়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “মানে?”
এবার ডা. মৌসুমী বলেন, “লীলা সেনের কথা মনে আছে আপনার?” এবার একটু থতমত খেয়ে সুজিত বাবু জিজ্ঞেস করেন, “কোন লীলা?”
এবার ডা. মৌসুমী বলেন, “যাকে বিয়ের আগে ভালোবাসার মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়ে তাঁর শরীরটাকে ভোগ করেছিলেন আপনি; তারপর সে যখন আপনাকে জানায়, সে মা হতে চলেছে; তখন বাচ্চাটাকে পৃথিবীর আলো দেখবার আগেই শেষ করে দিতে বলেছিলেন। কিন্তু আমার মা গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলতে চাননি। তাই তো রাতের অন্ধকারে কাউকে কিছু না জানিয়ে আমাকে পেটে নিয়েই বাইরের জগতে বেরিয়ে পড়েন। সেদিন আপনি আমাকে মৃত্যু উপহার দিতে চেয়েছিলেন, আর আজকে আমি আমি আপনাকে জীবন উপহার দিলাম।”
আর আপনি ভাববেন না যে আপনি আমার বাবা, আমি বিদেশ থেকে শুধুমাত্র এখানে ছুটে এসেছি কারণ আমার মা এখনো আপনার নামে সিঁথিতে সিঁদুর দেয়। আমি আমার মায়ের সিঁথি সাদা দেখতে চাই না, তাই এটাই হলো আমার মা-কে দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।

-সংগৃহীত