জালাল আহমেদ
যারা মোকাম্মেল হককে চিনেন তাঁরা তাঁর সম্পর্কে ভয় দেখানো গল্প বলেন কিন্তু তাঁর সংগে আমার কাজের অভিজ্ঞতা অসাধারণ
জেলা প্রশাসক চট্টগ্রাম আব্দুর রব খান, যিনি এ আর খান হিসাবে পরিচিত ছিলেন, আমাকে বললেন ‘তুমি ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন এ কাজ করো’। আমি তো এই সুযোগই খুঁজছিলাম, রাজী হয়ে গেলাম। তিনি আমাকে নিয়োগ দিয়ে দিলেন স্টাফ অফিসার টু জোনাল রিলিফ কো-অরডিনেটর (জেডআরসি), এক অর্থে একান্ত সচিবের কাজ। কিন্তু প্রথম কয়েকদিন এই কাজ ছিল সর্বব্যাপী। যারা মোকাম্মেল হককে জানতেন বা চিনেন তাঁরা তাঁর সম্পর্কে ভয় দেখানো সব গল্প বলেন। কিন্তু তাঁর সংগে আমার স্বল্প কয়েকদিনের যে কাজের অভিজ্ঞতা তা অসাধারণ বললে কম বলা হবে। এই তিনদিন সিএমএম এর সংগে আমার দেখা নাই। ২ তারিখে জেলা প্রশাসকের আদেশ পেয়ে সিএমএম সাহেবের সংগে দেখা করে এই আদেশের কথা জানালাম। আমাকে অবাক করে দিয়ে মতিউর রহমান এর মত ফরমাল লোক সম্মতি দিয়ে দিলেন, আদেশের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুললেন না। জেলা প্রশাসকের রুমের পাশের রুমে মেকশিফট অফিস বানিয়ে বসা শুরু করলাম এবং সিদ্ধান্ত হল যে পাহাড়ের নীচে জেলা পরিষদে জেডআরসি’র অফিস হবে।
কঠিন সময় তখন। চারিদিক থেকে খারাপ খবরই শুধু আসছে। মোকাম্মেল সাহেব সারাদিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন দুর্গত এলাকায়, গাড়িতে, হেলিকপ্টারে। চট্টগ্রামের তৎকালীন জিওসি মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান সহযোগিতা করছেন। সন্ধ্যায় জেডআরসি অফিসে বসছেন এবং তখন অন্য কাজ শুরু করছেন, পরিকল্পনা, সরবরাহ লাইন, লোকবল ও বাস্তবায়ন। প্রতিদিন আমাকে একটা প্রতিবেদন লিখতে হত ঢাকার জন্য, এক পৃষ্ঠা থেকে চার পৃষ্ঠা’র এই প্রতিবেদন প্রতিদিন জেডআরসি’র অনুমোদনের পর টেলেক্সে ঢাকা পাঠাতে হত। আমার ধারনা প্রথম দুদিনেই আমাদের অফিসের চেহারা কি হবে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। জেডআরসিকে প্রচুর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছিল যার বলে তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশ দিলে তা মুহূর্তে প্রতিপালিত হত। প্রথম একসপ্তাহ আমি অফিস করেছি সকাল ৭ টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত। রাতে আমার স্ত্রী বারান্দার গ্রিলের দরজায় তালা লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমি রাত দুটোয় অফিস থেকে বের হয়ে কাজীর দেউড়িতে আসতাম, ফোরস্টার নামে একটা রেস্টুরেন্ট তখনো খোলা থাকতো, সেখানে রাতের খাবার খেয়ে বাসায় যেতাম। গ্রীলের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে তালা খুলে বাসায় ঢুকতাম, আবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে ৭/৭ঃ৩০ এর মধ্যে অফিসে।
ইতোমধ্যে মোকাম্মেল স্যারের নির্বাচিত অফিসাররা আসতে শুরু করেছেন। তাঁদের প্রায় সবাই ১৯৭০ সালে ভোলায় দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে দুজন এসজেডআরসি আসলেন, কক্সবাজারে ১৯৭০ এর ব্যাচ সিএসপি স্বনামখ্যাত ওমর ফারুক এবং চট্টগ্রামে ১৯৬৭ ব্যাচের ইপিসিএস কবি এটিএম গিয়াসউদ্দিন। প্রতি থানার জন্য একজন করে উপসচিব নিয়োগ করা হল। আগেই উল্লেখ করেছি ইপিসিএস ১৯৭০ ব্যাচের প্রবেশনাররা ভোলাতে ত্রাণ ডিউটি করেছেন, তাঁরা প্রায় সবাই সদ্য জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাগত। তাঁদেরকে এক এক উপজেলার দায়িত্বে দেয়া হল। সকল প্রাক্তন ডিসি, ঢাকার নিজামুদ্দিন, চাঁদপুরের এস এম শামসুল আলম, নোয়াখালীর খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সিলেটের হাবিবুর রহমানসহ অনেকেই থানা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। সদরে ছিলেন ইপিসিএস এম এ গনি, টাঙ্গাইলের ডিসি ১৯৭৩ ব্যাচের নাজমুল আহসান, ১৯৭৯ ব্যাচের আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ কয়েকজন।
নাজমুল আহসান রাজবাড়ী ও পরে টাঙ্গাইলের ডিসি ছিলেন। নাজমুল আহসান ১৯৮৮ এর বন্যার সময় যথাসময়ে অনুমতি না পেয়েও পুরনো যুগের কালেক্টরদের মত প্রয়োজনের নিরিখে খাদ্য গুদাম খুলে দিয়েছিলেন। রাজবাড়িতে বন্যার পানি বাড়ছে আর জিওসি যশোর ১০ টন ১৫ টন করে খাদ্য শস্য বরাদ্দ দিচ্ছেন। এদিকে গুদামে পানি উঠি উঠি, গুদামের দরজায় পানি ঠেকানোর পাকা প্রাচীর, লখিন্দরের বাসরের সকল ছিদ্র বন্ধ, তবুও গুদামে চুইয়ে পানি ঢুকছে। সে পানি মুছে তুলতে ও লোক লাগানো। অবশেষে বরাদ্দ না পেয়েও ৬০০ টন খাদ্য শস্য পরে সমন্বয় করা হবে এই শর্ত যুক্ত করে দিলেন বিতরন করে। জিওসিসহ সেনা সমন্বয়কারীরা বেজায় ক্ষুব্দ। সমর্থনে জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার আর সমন্বয়কারী সচিব মোকাম্মেল হক। রাষ্ট্রপতি যখন এলেন তখন তিনি বিরূপভাবে ব্রিফড, জেলা প্রশাসককে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তারপর আকস্মিক ভাবে তিনি চলে গেলেন জনগণের মাঝে। জিজ্ঞাসায় তাঁরা জানালো যে ১৫ কেজি করে খাদ্যশস্য তাঁরা পেয়েছে, তখন তিনি খুশী হয়ে বললেন, “ঃযধঃং যিু উবঢ়ঁঃু ঈড়সসরংরড়হবৎ রং যবৎব!”। জেলা প্রশাসক জিওসি’র ক্ষোভ থেকে বাঁচলেন আর পদায়ন হল টাঙ্গাইলে। তিনি পরিশ্রমী কর্মকর্তা ছিলেন ও কাজ আদায়ে পারঙ্গম ছিলেন।
নাজমুল আহসান স্যারের সংগে কাজ করা ছিল একই সংগে আনন্দদায়ক এবং ওয়ার্কিং আন্ডার প্রেশার যেটা পরে উপকারে এসেছে। এটিএম গিয়াসউদ্দিন স্যার ছিলেন কবি, কবিতা লিখতেন পড়ে শুনাতেন। তিনি ছিলেন একজন মানবিক দক্ষ কর্মকর্তা। আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া স্যার ছিলেন অসম্ভব পরিশ্রমী, দায়িত্ব পালনে নিবেদিতপ্রাণ। অযথা সমস্যা তৈরী করে বিরক্ত করতেন কক্সবাজারের এসজেডআরসি ওমর ফারুক। একাধিকবার তাঁর সংগে আমার কথাকাটাকাটি হয়েছে বিনা কারণে। তাঁকে যারা জানেন তিনি এমনই এবং আরো ১৩ বছর পরে ২০০৪ সালে তিনি যখন স্বরাষ্ট্র সচিব তখনো তাঁর সংগে আমার এমনই হয়েছে।
১৯৯১ সালের ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ইউনিক দিক ছিল ‘অপারেশান সি এঞ্জেল’, ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিন কোর এর অংশগ্রহন। ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই সরকার বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা চায়। যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত দ্রুত এই আহবানে সাড়া দেয় এবং ইউএস প্রেসিডেন্ট এর আদেশে ওকিনাওয়া, জাপানে অবস্থিত মেরিন কোর কমান্ডার হেনরী সি স্ট্যাকপোল এর নেতৃত্বে এক টাস্ক ফোর্স গঠন করে। পারস্য উপসাগরে ৫ মাস দায়িত্বপালন শেষে ফিরে যাবার পথে একটি উভচর (এমফিবিয়ান) ইউনিটকে চট্টগ্রামের পথে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। ১০ মে তারিখে তারা এই অপারেশন কাজ শুরু করে এবং ১৩ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলে ২০ লক্ষ লোককে সেবা দান করে।
“Two days after the President’s order, LtGen. Stackpole arrived with a small CJTF element. A Special Operations Forces (SOF) Disaster Assistance Response Team (DART) arrived later that day.The next day five UH-60 Blackhawk helicopters arrived from Hawaii, along with a Navy Environmental and Preventive Medicine Unit. Other joint assets continued to flow into the area, as required. Fifteen soldiers of B Company, 84th Engineer Battalion, already deployed to Bangladesh to construct schools, were diverted to Chittagong. The bulk of US forces were from the ATF consisting of the 4,600 Marines of the 5th MEB, 3,000 sailors of Amphibious Group 3, and 28 helicopters. The MEB also brought four Landing Craft Air Cushioned (LCAC) vehicles, which proved invaluable in delivering aid to isolated islands. Immediately upon his arrival in the capital city of Dhaka, LtGen. Stackpole began an assessment of the situation, and identified three critical concerns: First, the intelligence needed to adequately assess the situation was unavailable; Second, the problem of distribution quickly became apparent, and was considered the most pressing by the Joint Task Force (JTF) staff; Finally, the issue of Bangladeshi sovereignty required that the GOB be clearly viewed by the populace as being ‘in charge’.”