মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ পিতা ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তিনি এলাকার শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে গেছেন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত। তাই পিতার স্বপ্নপূরণে কাজ করে যাচ্ছেন স্বপ্নচারি যুবক মামুন আল সালেহ। স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে হবিগঞ্জ শহরের মহিলা কলেজ রোডে একটি ভাড়া বাসায় একাকী প্রতিষ্ঠা করেন ‘জ্ঞানদ্বীপ আধুনিক কেজি স্কুল’।
এ ব্যাপারে জ্ঞানদ্বীপ আধুনিক কেজি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মামুন আল সালেহ বলেন, আমার পিতা ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী। ছিলেন একজন স্বনামধন্য জনপ্রতিনিধিও। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এলাকার শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে গেছেন। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে এনেছেন। তিনি গ্রামের অধিকাংশ মাদ্রাসা, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। আমার পিতার মৃত্যুর পর আমিও পিতার মতো স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চাই। তাই ২০১৮ সালে শহরের মহিলা কলেজ রোডে জ্ঞানদ্বীপ আধুনিক কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করি। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে আমার প্রতিষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম বছর প্লে থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রথম বছর প্লে শ্রেণিতে ১৫ জন, কেজিতে ১০ জন, ১ম শ্রেণিতে ১০ জন, ২য় শ্রেণিতে ২৪ জন এবং ৩য় শ্রেণিতে ৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে ভর্তির পর ২য় শ্রেণির ৪ জন অন্যত্র চলে যায়। অবশিষ্ট শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২০ সালে এক শ্রেণি উন্নীত করা হয় অর্থাৎ ২০২০ সালে ৪র্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। আর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৭ জন।
স্কুলটিতে দুই শিফটে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রথম শিফট (প্লে, কেজি ও ১ম শ্রেণি) শীতকালে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১১.৩০ মিনিট পর্যন্ত। দ্বিতীয় শিফট (২য় থেকে ৪র্থ শ্রেণি) দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্তÍ। তবে শীতকাল ব্যতিত ক্লাস শুরু হয় প্রথম শিফট (প্লে, কেজি ও ১ম শ্রেণি) সকাল ৯টা থেকে ১১টা এবং দ্বিতীয় শিফট (২য় থেকে ৪র্থ শ্রেণি) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্তÍ।
স্কুলের সাফল্য প্রসঙ্গে মামুন আল সালেহ্ বলেন, স্কুলের বয়স মাত্র ১ বছর। তবে প্রথম বছরই তিনি আশাতীত সাফল্য পেয়েছেন। এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের আন্তরিকতার কারণে। ২০১৯ সালে হবিগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন ফোরাম আয়োজিত বৃত্তি পরীক্ষায় জ্ঞানদ্বীপ আধুনিক কেজি স্কুলের ৩২ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাশ করেছে ২৩ জন। তন্মধ্যে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়েছে ১৫ জন এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে ৮ জন। বিকেজিসি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এ প্রতিষ্ঠান এবং এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের ২৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে ১৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে।
স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মামুন আল সালেহ আরও বলেন, তিনি ছাত্রজীবন থেকে শিশুদের পড়িয়ে আসছেন। তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তৃণমূল থেকে তিনি উঠে এসেছেন। জীবনের সাথে যুদ্ধ করেছেন। তিনি যখন থেকে বুঝতে শিখেছেন তখন থেকে বাড়ি থেকে কোন টাকা পয়সা আনেননি। ছাত্রজীবন থেকে প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা রোজগার করে নিজের খরচ বাদে বাকি টাকা সঞ্চয় করেছেন। সেই টাকায় কিছু একটা করার মানসে ২০১৮ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। সীমাবদ্ধতা থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। তবুও সমাজের কল্যাণে কিছু একটা করার চেষ্টা করছেন। স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার বিস্তারের পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠানে অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হবে। এখান থেকে উপার্জিত অর্থে তাদের সংসার চলবে। আর এ বিষয়টিকেও তিনি মানবসেবা হিসেবেই দেখছেন।
পাশাপাশি তিনি এমন প্রতিষ্ঠান করতে চান যেখানে অসহায় দরিদ্ররা ফ্রি লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। অনেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সন্তানকে পড়াতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাদের ধারণা এসব প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করালে অনেক টাকা লাগে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়টিকে বিশেষভাবে দেখা হয় যাতে কেউ টাকার অভাবে লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে না থাকে।
প্রতিষ্ঠানটিতে মহান বিজয় দিবস, মহান স্বাধীনতা দিবস, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, জাতীয় শিশু দিবস, জাতীয় শোক দিবসসহ রাষ্ট্রীয় সকল অনুষ্ঠান পালন এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শিশুদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার সুব্যবস্থা। স্কুলটিতে সরকার নির্ধারিত পাঠ্যবই ছাড়াও শিশুর মেধা বিকাশে কম্পিউটার শিক্ষা, চিত্রাংকন, সাধারণ জ্ঞান পড়ানো হয়।
বৃক্ষ তোর নাম কি? ফলে পরিচয়। মামুন আল সালেহ তার প্রতিষ্ঠিত ‘জ্ঞানদ্বীপ আধুনিক কেজি স্কুল’কে এমন প্রতিষ্ঠান করতে চান যার শিক্ষার্থীদের ফলাফল সেই পরিচয় বহন করবে। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই জ্ঞানদ্বীপ আধুনিক কেজি স্কুলে শিক্ষা দিয়ে আসছেন তিনি। এজন্য তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।