স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে পূর্ব বিরোধের জের ধরে দু’দল দালালের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টায় হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় অনন্তপুরের আব্দুল খালেক (৩৫) ও চরণ চন্দ্র দাসকে (৩০) সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শনিবার সদর থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
আহত সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হবিগঞ্জ আড়াইশ’ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে একটি সঙ্গবদ্ধ দালাল চক্র গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। আর তাদেরকে সহযোগিতা করছেন হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মচারী। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীর বাহিরে ঔষধের দোকান রয়েছে। নিয়োগ দেয়া আছে কয়েকজন দালাল। রোগী আসা মাত্র ওই ফার্মেসিতে ভাগিয়ে নেয়াই তাদের কাজ। রাত ভোর হলেই সঙ্গবদ্ধ হয়ে ৫/৮ জন দালাল দাঁড়িয়ে থাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে। মাঝে-মাঝে রোগীদের সাথে ঔষুধের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঘটে টানা-হেচড়া ও হাতাহাতির ঘটনা। সম্প্রতি হাসপাতাল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে দালালদের তালিকা তৈরি করে অভিযান চালালে কয়েকদিন গাঁ ঢাকা দিলেও পরে আবার যেই-সেই। ওইদিন রাতে তালিকাভূক্ত দালাল আব্দুল খালেক ও হারুন মিয়ার মাঝে রোগী ভাগিয়ে নেয়া নিয়ে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় হারুন ও তার লোকজনের হামলায় আব্দুল খালেক ও চরণ দাসসহ উল্লেখিতরা আহত হয়। এ ঘটনায় সদর হাসপাতাল এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ নিয়ে যেকোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপর একটি সূত্র জানায়, প্রায় ১ মাস পূর্বে দালাল হারুনের সাথে কথা কাটাকাটি হয় এক ফার্মেসীর সেলসম্যান কাউছার মিয়ার। এ নিয়ে হারুন মিয়া বাদী হয়ে কাউছারের উপর হবিগঞ্জ সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পরে বিষয়টি স্থানীয়রা মিমাংসা করে দেন। কিন্তু এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি ওই ফার্মেসীর মালিক ও দালালরা। তাদের অত্যাচারে কাউছার মিয়া চাকুরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। শুক্রবার রাতে কাউছার মিয়া তার ব্যক্তিগত কাজে হাসপাতালে আসে। এ সময় কাউছার ফার্মেসীর সেলসম্যান চয়ন চন্দ্র দাসের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। বিষয়টি হারুনসহ তার সহযোগীরা দেখতে পায়। কিছুক্ষণ গল্পগুজব শেষে কাউছার চলে যায়। এদিকে চয়ন দাসও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সামনে যাওয়া মাত্র হারুন ও তার সহযোগীরা চয়নের গতিরোধ করে কাউছার কোথায় জানতে চায়। এ সময় কাউছার তার বাসায় চলে গেছে জানালে হারুন, সেলিমসহ অন্যান্যরা চয়নের উপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। তার শোর-চিৎকারে আশপাশের ফার্মেসী থেকে আব্দুল খালেক ও আব্দুস সামাদসহ অন্যানরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা তাদের উপরও চড়াও হয়। তাদের হামলায় খালেক ও সামাদ মিয়া গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে হারুন, রুবেল, সেলিম গং পালিয়ে যায়। আহত অবস্থায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আহতদের উদ্ধার করে হবিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে চয়ন দাসের হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে যায় এবং খালেক মিয়ার একটি হাত ভেঙ্গে যায়। এ ঘটনায় সদর হাসপাতাল এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। হামলার ঘটনায় চয়ন দাস বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।