অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার আকলিমার লাশের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ॥ এনা বাসের টিকেট ও মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে সনাক্ত করা হয় খুনীকে ॥ পরকীয়া প্রেমিকাকে ঢাকা থেকে এনে কিভাবে হত্যা করেছে স্বীকারোক্তিতে তার বর্ণনা দিয়েছে ঘাতক

এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজিউড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভেড়িখাল থেকে আকলিমা আক্তার (২৫) নামে এক যুবতীর লাশ উদ্ধার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। নিহত আকলিমা তার পরকিয়া প্রেমিককে বিয়ের জন্য চাপ দেয়ায় ওই প্রেমিক তার সহযোগীদের নিয়ে তাকে হত্যা করেছে। গতকাল বুধবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান চালিয়ে নিহত আকলিমার পরকীয়া প্রেমিক আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবহান মিয়াকে গ্রেফতার করেছে। সে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার রাজিউড়ার আব্দুল আহাদের পুত্র। গতকাল সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।
সোবহানের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, আকলিমা আক্তারের সাথে ৭/৮ মাস পূর্ব মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবহান মিয়ার পরিচয় হয়। সোবহান মিয়া পেশায় ফার্নিচারের কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে। সে বিবাহিত। তার স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় স্ত্রীকে গত ৬/৭ মাস পূর্বে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এরপর আকলিমার সাথে মোবাইল ফোনে প্রতিদিন কথাবার্তা চলতো সোবহান মিয়ার। তবে তার স্ত্রী থাকার বিষয়টি আকলিমার কাছে গোপন রাখে সোবহান। মাঝেমধ্যে দুজনের মধ্যে ঢাকায় দেখা সাক্ষাত হতো। এক পর্যায়ে তাদের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হয়। ৪ মাস ধরে তাদের মধ্যে চলে শারীরিক সম্পর্ক। এ সম্পর্কের সফলতার জন্য আকলিমা সোবহানকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু সোবহান তাকে বিয়ে না করে বিভিন্ন কৌশলে সময় অতিবাহিত করে। এ অবস্থায় সোবহান আকলিমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ৪ মাস পূর্বে আকলিমা গার্মেন্টস এ কাজ করার জন্য ঢাকার গাজীপুরে চলে যায়। গত ২৩ ডিসেম্বর সোবহান মোবাইলে ফোন করে বিয়ের আশ^াস দিয়ে আকলিমাকে হবিগঞ্জ আসতে বলে। তার কথামত আকলিমা ওইদিন ঢাকা টঙ্গি থেকে এনা পরিবহনের একটি বাসে এসে সন্ধ্যায় অলিপুরে নামে। পূর্ব থেকে অপেক্ষমান আসামী সোবহান মিয়া আকলিমাকে নিয়ে তার নিজ বাড়িতে গোপনে তার ঘরে নিয়ে রাখে। নিজ কক্ষে আকলিমাকে নিয়ে রাতযাপন করে এবং স্বামী-স্ত্রীর মতো রাত কাটায়। পরদিন ২৪ ডিসেম্বরও আকলিমাকে তার ঘরে রাখে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করায় তখনো বিয়ের জন্য সোবহানকে চাপ সৃষ্টি করে আকলিমা। কিন্তু সোবহান বিভিন্ন কৌশলে এড়িয়ে যায়। ২৫ ডিসেম্বর ফজরের সময় সোবহান আকলিমাকে নিয়ে বিবাহের উদ্দেশ্যে তার আত্মীয়ের বাড়ি রওয়ানা দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। আকলিমা তার কথায় বিশ্বাস করে বাড়ির পাশের শুকনো পথে হাওর দিয়ে যাওয়ার সময় খালের পাড়ে (ইকড়ের ঝোপের পাশে) আকলিমাকে গলায় ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় সোবহান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, ২৫ ডিসেম্বর আকলিমার লাশ উদ্ধারের পর থেকে আমরা এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য কাজ করেছি। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিহত আকলিমার পরকিয়া প্রেমিক আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবহান মিয়াকে গ্রেফতার করি। আকলিমাকে শ^াসরোধ করে হত্যা করেছে বলে গতকাল সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকালই পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেছে।
হবিগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী জানান, আকলিমাকে হত্যার পর সোবহান লাশ রেখে বাড়িতে চলে আসে এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করতে থাকে। গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে সদর থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের জিন্মায় হস্তান্তর করে। লাশটি উদ্ধার হওয়ার পরই সন্দেহ হয় এটি একটি হত্যা। এরপর এনা বাসের টিকেট ও কল লিস্টের সুত্র ধরে ঘাতক সোবহানকে সনাক্ত করে পুলিশ। তিনি আরও জানান, ঘাতক নিজেই তার দোষ স্বীকার করেছে। অচিরেই তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, ২৫ ডিসেম্বর রাতে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজিউড়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী ভেড়িখাল থেকে অজ্ঞাত এক যুবতীর (২৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। উদ্ধারের পর পুলিশ তার ছবি বিভিন্ন মিডিয়ায় দিলে স্বজনরা এসে তার লাশ সনাক্ত করে। নিহত আকলিমা আক্তার মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার জাম্বুরাছড়ার হেলাল মিয়ার কন্যা। পরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নিহতের বড় ভাই আমির উদ্দিনের কাছে লাশ সমজিয়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমির উদ্দিন হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।