
নারী সমাবেশে জি কে গউছ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছ বলেছেন- বাংলাদেশ আমাদের সবার। এই দেশেই আমরা জন্মগ্রহণ করেছি, এই দেশেই আমরা বসবাস করব। দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাস বিএনপির নেই। যদি আমাদের এই দেশে থাকতে হয়, তবে সকলকে নিয়েই থাকতে হবে। শেখ হাসিনা পালিয়েছে, আওয়ামী লীগ পালিয়েছে, অতি উৎসাহী কতিপয় পুলিশ সদস্যরাও পালিয়েছে। এবার সুযোগ এসেছে আমার ভোট আমি দেব, লাইনে দাঁড়িয়ে যাকে খুশি তাকে দিব। গতকাল বুধবার বিকেলে হবিগঞ্জ পৌরসভা মাঠে হবিগঞ্জ পৌর ও সদর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ‘নারীদের ভাবনায় আগামীর বিএনপি’ শীর্ষক নারী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে জি কে গউছ আরও বলেন- দীর্ঘ ১৭টি বছর গ্রামে গ্রামে গিয়েছি, ইউনিয়নে ইউনিয়নে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরেছি। যেখানেই আমরা গিয়েছি সেখানেই বাঁধা দেয়া হয়েছে। আমরা যেন জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলতে না পারি। কি ছিলো তার উদ্দেশ্য? জনগণের কণ্ঠ চাপিয়ে রেখে, জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে, জনগণকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। এই দেশে সকল মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল। আওয়ামী লীগ জোর করে সেই অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আল্লাহ্ সবকিছু সহ্য করলেও সীমালঙ্গনকারীকে বরদাস্ত করেন না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কারাগারে রেখে নির্যাতন করেছে। আমাদের মিছিল মিটিং করতে দেয়নি। মা-বোনদের কাছে যেতে দেয়নি। আমরা কেউ আওয়ামী লীগের এসব নির্যাতনের কোন প্রতিশোধ নেইনি। তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়িনি। আমরা চেয়েছি দেশের মানুষ যেন ঐক্যবদ্ধ থাকে। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা দেশের ক্ষতি করতে পারে না।
জি কে গউছ বলেন, নারী সমাজকে দমিয়ে রাখতেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ৬ বছর কারাগারে আটকে রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। অথচ খালেদা জিয়ার হাত ধরেই মূলত নারী সমাজের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। একজন গৃহবধূ থেকে তিনি আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের অবিসংবাদিত নেত্রী হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের নারীদের জন্য যদি কেউ কিছু করে থাকেন তিনি হলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি সর্বক্ষেত্রে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। যারা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালিন ভাতা, শিশু ভাতা পাচ্ছেন এটা বেগম খালেদা জিয়া চালু করেছিলেন। খালেদা জিয়া নারী শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পড়ালেখার ব্যবস্থা করেছিলেন, বিনামূল্যে বই দিয়েছিলেন, উপবৃত্তি দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া নারী সমাজের জন্য কথা বলেছেন, মায়েদের জন্য কথা বলেছেন। যখনই আমাদের কোনো মা, কোনো মেয়ে, কোনো বোন বিপদগ্রস্ত হয়েছে খালেদ জিয়া জ্বলে উঠেছেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বাধ্য করেছেন অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। খালেদা জিয়া বিরোধী দলে থেকেও দেশের পক্ষে কথা বলেছেন, মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন। এ জন্যই দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে ভালবাসে। বেগম খালেদা জিয়ার এই জনপ্রিয়তায় ইশর্^ান্বিত হয়ে শেখ হাসিনা মিথ্যা মামলা দিয়ে ৬ বছর খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেছেন।
আমরা দেখেছি গত বছর ৫ আগস্টের পর জনরোষের ভয়ে জান বাঁচাতে আওয়ামী লীগের সব এমপি, মন্ত্রী, অত্যাচারী নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তখন সারা বাংলাদেশ উত্তপ্ত। আর সেই সময় জাতির সামনে আবারও আল্লাহ’র রহমত হিসেবে আবির্ভূত হলেন অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া। মাত্র ৩ মিনিটের অডিও বার্তায় জাতিকে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন। কেউ যেন বেপরোয়া না হয় সে আহ্বান জানালেন। কেউ যেন কারও প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ না করে, কেউ যেন প্রতিশোধ পরায়ন না হয়, আমরা যেন ভিন্ন দল ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ না করি। খালেদা জিয়ার সেই দিনের কথায় পুরো দেশ শান্ত হয়ে গেলো।
জি কে গউছ বলেন- আমি হবিগঞ্জ পৌরসভার দায়িত্ব নিয়েই মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। দল ও মতের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। জনগণকে পৌরসভার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছিলাম। পৌর এলাকার কন্যাদায়গ্রস্থ পিতা-মাতার দায়িত্ব নিয়ে গণবিয়ের আয়োজন করেছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের সুন্নাতে খতনার ব্যবস্থা করেছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে তাদের উপহার দিয়েছি। অর্থের অভাবে যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখা করতে পারেনি তাদের দায়িত্ব নিয়েছি। বই দিয়েছি, ড্রেস দিয়েছি, ব্যাগ দিয়েছি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতনের ব্যবস্থা করেছি। পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জাতির ঐতিহ্য। তাই পৌরসভায় বৈশাখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি। পৌর এলাকার পবিত্র হজ্বযাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে হজ্বযাত্রীদের উপহার সামগ্রী দিয়েছি। ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বছর দুইবার সংবর্ধনা দিয়েছি। পৌর এলাকার সম্মানীত খতিব, ইমাম ও মোয়াজ্জিন সাহেবকে দুটি ঈদে পৌরসভার পক্ষ থেকে সম্মানী দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। দুর্গাপূজায় প্রতিটি মন্ডপে প্রতি বছর ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে বই মেলার আয়োজন করেছি। এসব কাজের মাধ্যমে পৌরবাসীর হৃদয় জয় করেছিলাম। ফলশ্রুতিতে সিলেট কারাগার থেকে মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এই জনপ্রিয়তার কারণে আমি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি। অসংখ্য মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে ১৫শ’ ১৭দিন কারাভোগ করেছি। আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে পৌরবাসীকে উন্নয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, জনগণের ভালোবাসায় আমি এমপি নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ ১৬ বছরে যা করতে পারেনি তা ২ বছরে করে দেখাবো।
সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান কাজলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সামছুল ইসলাম মতিন ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম আওয়ালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী ফরিদ। বিজ্ঞপ্তি