
স্টাফ রিপোর্টার ।। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ জি কে গউছ বলেছেন- আওয়ামীলীগ বিগত ১৬টি বছর এমন কোনো নির্যাতন নেই যা আমাদের ওপর করেনি। হামলা করেছে, মামলা করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নেতাকর্মীদেরকে কারাগারে আটক করে রেখেছে। একটি ত্রাসের রাজত্ব, ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। বিএনপিকে নির্মূল করার সমস্ত চেষ্ঠাই করেছে। তবুও বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। দেশের মুক্তিকামি মানুষ একটি শুভ দিনের অপেক্ষায় ছিল, এই শুভ দিনটি যখনই সামনে আসবে মানুষ গর্জে উঠবে সেভাবে তারা নিজেদের তৈরি করে রেখেছিল।
তিনি গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল ও সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জি কে গউছ আরও বলেন- আওয়ামী লীগ হাজার চেষ্টা করে, ভয়ভীতি দেখিয়ে, লোভ লালসা দেখিয়ে বিএনপির কোন দায়িত্ব শীল ঈমানদার কর্মীকে বিএনপি থেকে আওয়ামীলীগ আলাদা করতে পারেনি। আর এটাই হল বিএনপির শক্তি। সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদেরকে সর্বশক্তি দিয়ে লড়তে হবে। তাই তারেক রহমান বার বার বলছেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে হলে জনগণের ভালবাসা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের সঙ্গে যেতে হবে।
তিনি বলেন- আওয়ামী লীগ পালিয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়েছে। হাসিনার প্রশাসনের অতিউৎসাহী লোকজন পালিয়েছে, হাসিনার অবৈধ এমপি মন্ত্রী পালিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগ এখনো সমূলে পালিয়ে যায়নি। তারা আমাদের সমাজে ঘাপটি মেরে বসে আছে। তাদের অন্তরে প্রচন্ড বিষ নিয়ে বসে আছে। যখনই সুযোগ আসবে সেই বিষ গণতন্ত্রের বিপক্ষে, জনগণের বিপক্ষে, বিএনপির বিপক্ষে তারা সেই বিষ ব্যবহার করবে। সেই জন্য আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদেরকে ঐক্য বদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে হাসিনাকে আমরা যেভাবে পরাজিত করেছি। ইনশাআল্লাহ দেশী-বিদেশী সমস্ত চক্রান্ত প্রতিহত করে জনগণের ম্যান্ডেটের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ রেদোয়ান খানের সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ সিদ্দিকী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহবায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান, কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এডভোকেট আবেদ রাজা, জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল মুকিত ও সাবেক সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন মাতুক।
জি কে গউছ বলেন- কাউন্সিলের মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলার রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সুচনা হয়েছে। বিএনপি তৃণমূলের মতামতের মাধ্যমে দলের আগামী দিন যারা নেতৃত্ব দিবেন সেই নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূলকে লালন করেন, মূল্যায়ন করেন। তৃণমূলের মতামতকে তিনি প্রাধান্য দেন। সে জন্য মাঠে ময়দানে যারা ছিল আন্দোলন সংগ্রামে যারা ছিল দলের নেতাকর্মীদেরকে অরক্ষিত রেখে যারা মাঠ থেকে পালিয়ে যায়নি তাদেরকে নির্বাচনের জন্য তৃণমূলের হাতে দলের নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন। এ নেতৃত্বের মাধ্যমে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশে বিদেশে সমস্ত চক্রান্তকে প্রতিহত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করাই হবে প্রধান দায়িত্ব।
তিনি বলেন- ব্যক্তির চেয়ে দল বড় দলের চেয়ে দেশ বড়। এটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করছি। আজকে এই দলটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। এ বিএনপি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে দেশী বিদেশি চক্রান্ত করে হত্যার মাধ্যমে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির কবর রচনা করতে চেয়েছিল। তারা ব্যর্থ হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে তারা হত্যা করেছে ঠিকই কিন্তু বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটিকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন গৃহবধূ ছিলেন। দেশের প্রয়োজনে দেশের গনতন্ত্রের প্রয়োজনে তিনি রাজপথে নেমে আসেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করে স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ জাতিকে উপহার দিয়েছেন। জাতি তাঁর প্রতিদান দিয়েছে। সমস্ত চক্রান্ত ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়ে ১৯ ৯১ সালে জনগণের ভোটে বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধান মন্ত্রী নির্বাচিত হন।
বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিন-তিনবার রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার দেশি-বিদেশি চক্রান্ত বার বার মাথাছাড়া দিয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনা চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে বেগম খালেদা জিয়াকে জনগণ থেকে আলাদা করার জন্য মাত্র দুই কোটি টাকার মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন একটি মামলা দিয়ে আজ্ঞাবহ কোর্টকে কাজে লাগিয়ে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে ৬টি বছর জনগণের কাছ থেকে আলাদা করে রেখেছিল। তারা ভেবে ছিল খালেদা জিয়া যদি না থাকেন তাহলে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির হয়তো অস্ত্বিত্বই থাকবে না। তারা ভেবেছিল খালেদা জিয়া বন্দীর মাধ্যমে বিএনপিকে চূড়ান্ত ধ্বংসের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
জি কে গউছ আরও বলেন- দেশের জন্য গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দলের জন্য অতীতে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। যারা ত্যাগী যারা মাঠে ময়দানে ছিল।
যাদের পুলিশের ছোড়া গুলিতে ঝাঝড়া করে ফেলেছিল নিজের দেহ তারা আজকে অনেকটা অসহায়। যারা ৫ ই আগস্টের আগে যারা দূরে ছিলেন। তারা আজকে প্রথম সারিতে এসে নিজেরা দলের মালিকানা দাবি করছেন। খেয়াল রাখবেন দলের দুর্দিনের নেতাকর্মীরা সবকিছু ভুলে গেলেও অতীতের কথা কোনদিন ভুলতে পারে না। তারেক রহমান যাদের কথা বিশ্বাস করেন যাদের কথার গুরুত্ব দেন তারাই হচ্ছেন আমাদের দলের তৃণমূল। তৃণমূল বাঁচলে বিএনপি বাঁচবে। বিএনপি বাঁচলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বাঁচবে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বেঁচে যাবে। অতএব দেশের প্রয়োজনে দেশের গণতন্ত্রের প্রয়োজনে বিএনপিকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আমরা মাঠে ময়দানে ছিলাম আমরা মাঠে ময়দানে আছি। কেউ কেউ হতাশার কথা বলেন, আমরা চরম বিপদে হতাশ হইনি কারণ ঈমানি শক্তিতে বলীয়ান ছিলাম। অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র হয়েছে। সমস্ত চক্রান্ত প্রতিহত করে বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি রাজপথে ছিল জনগণের হৃদয়ে ছিল মানুষের ভালবাসায় ছিল। আমরা মানুষের ভালবাসায় আছি, এটাই হচ্ছে সত্য। প্রত্যেকটি নির্বাচনি আসনে দল আগামী নির্বাচনে যাকে যোগ্য বিবেচনা করে মনোনয়ন দিবে আমরা সকলে এক বাক্যে ধানের শীষ যার আমরা সকলে তার পক্ষে কাজ করবো এটাই হবে আমাদের অঙ্গীকার”।