শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ জন্মগ্রহণ করেন করগাঁও গ্রামে। তার পিতা শেখ মফিজ উদ্দিন ও মাতা অলিমা খানম। শিক্ষাজীবনের শুরু হয় করগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আর সেই সময় থেকেই তিনি পরিচিত ছিলেন মেধাবী ও পরিশ্রমী এক শিক্ষার্থী হিসেবে। পরবর্তীতে মাধ্যমিকের জন্য ভর্তি হন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।
১৯৯০ সালে পারিবারিক প্রয়োজনে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। শুরুতে ভাষাগত সমস্যা, নতুন সংস্কৃতি আর পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও, শেখ মহিউদ্দিন তার অধ্যবসায় ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে সবকিছু জয় করেন। ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি তিনি শিক্ষাকে জীবনের অগ্রাধিকার দেন। কলেজ শেষ করে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডনে ভর্তি হন এবং একাউন্টিং ও ফাইন্যান্সে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।
শুধু স্নাতক ডিগ্রি অর্জনেই থেমে থাকেননি শেখ মহিউদ্দিন। তার পেশাগত জীবনে আরও দৃঢ়তা আনতে তিনি যুক্ত হন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সংস্থা অঈঈঅ-তে। এর পাশাপাশি, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের অধীন ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুল থেকে এমবিএ সম্পন্ন করে নিজের জ্ঞানভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ করেন।
বর্তমানে তিনি একজন অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিনিয়োগ ব্যাংকার। কর্পোরেট ফাইন্যান্স, বিনিয়োগ, শিল্প পুনর্গঠন, নিয়ন্ত্রক আর্থিক কাঠামো, বাজেট পরিকল্পনা ও অ্যাকাউন্টিং—এসব ক্ষেত্রে তার অভিজ্ঞতা অসাধারণ। তিনি একাধিক প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পরিচালক, চিফ ফিন্যান্স অফিসারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে কর্পোরেট সাফল্যের বাইরেও শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের পরিচয় রয়েছে। তিনি একাধারে একজন সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী ও মানবিক ব্যক্তি। তার নিজ এলাকার স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, ক্রীড়া ক্লাব কিংবা সামাজিক সংগঠন—সবখানেই তার অবদান ছড়িয়ে আছে। শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, দুর্যোগকালে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দেওয়া তার নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ।
বিশেষ করে নবীগঞ্জ-বাহুবলের তরুণ সমাজ নিয়ে তার ভাবনা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তিনি মনে করেন, বর্তমান সময়ের তরুণদের শুধু প্রথাগত শিক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না- তাদেরকে দক্ষ, আত্মনির্ভরশীল ও সমাজ-সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। তিনি কারিগরি শিক্ষা, পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের উপর জোর দেন।
তার মতে, “শুধু উচ্চ ডিগ্রি নয়, দরকার বাস্তব দক্ষতা। দেশের প্রতিটি তরুণ-তরুণী যদি আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে ওঠে, তাহলে আমরা কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দিকেও এগিয়ে যাব।”
তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সততা এবং দুর্নীতিমুক্ত পক্ষে অবস্থান নিয়ে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণদের সচেতন করে তুলছেন। তার মতে, এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে সৎ, মেধাবী ও মানবিক নেতৃত্ব। নতুন প্রজন্মই পারে একটি বৈষম্যহীন, উন্নত দেশ গড়ে তুলতে।
শেখ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের এই সমাজ ও দেশকে বদলাতে হলে তরুণদের সামনে আসতেই হবে। তারা যদি সৎ, শিক্ষিত ও দায়িত্ববান হয়, তবে পরিবর্তন কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাই আমি চাই, নবীগঞ্জ-বাহুবলের প্রতিটি কিশোর-তরুণ শিক্ষার পাশাপাশি দক্ষতার মাধ্যমে গড়ে উঠুক। এই সমাজের জন্য তারা হোক ভবিষ্যতের বাতিঘর।”
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে শেখ মহিউদ্দিন আহমেদের মতো ব্যক্তিত্বরা সমাজের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি কেবল একজন সফল পেশাজীবী নন- তিনি একজন দিকনির্দেশক, একজন প্রেরণাদায়ী, যিনি নিজ জীবন ও অভিজ্ঞতার আলোয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আলোকিত পথ দেখাচ্ছেন।