তৎকালীন সময়ে শহরের সিনেমা হল এবং বাজার ছিল খুবই জমজমাট
মুক্তিযুদ্ধকালে একটি চক্র পুরান বাজার কুড়িপট্টি এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করতো
মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হবিগঞ্জ শহরের শ্যামলী এলাকার সাধুর মাজার সংলগ্ন বাসিন্দা, জেলা সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ মর্তুজা ইমতিয়াজ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একটি চক্র পাঞ্জাবী (পাকিস্তানী সেনা) হবিগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেছে এরকম আওয়াজ তুলে মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে লুটপাটের ধান্ধা করতো। বিশেষ করে পুরান বাজার কুড়ি পট্টি এলাকার দোকানীরা (হিন্দু সম্প্রদায়) পাঞ্জাবীর কথা শুনলেই যে যেভাবে পারতো দোকান ফেলে পালিয়ে যেতো। এ সুযোগে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করতো সুযোগ সন্ধানীরা। একদিন সত্যি সত্যিই শহরে পাঞ্জাবী আসলো। তারা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ডাঃ আবুল হাশেম সহ বেশ কয়েকটি বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন পুরো শহরজুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তৎকালীন সময়ে শহরের সিনেমা হল এবং বাজার ছিল খুবই জমজমাট। বিনোদনের অন্যতম অনুসঙ্গ ছিল সিনেমা হল। তখন নতুন কোন চলচ্চিত্র এ হলে মুক্তি পেলে তা দেখার জন্য উপচেপড়া ভিড় থাকতো। টিকেটের জন্য প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতো। এমনকি এখানে টিকেটের জন্য খুনোখুনি পর্যন্ত হয়েছে। তৎকালীন সময়ে সিনেমা হলে ৪টি শো পরিচালনা করা হতো। সর্বশেষ শো শেষ হতো রাত ১২টায়। রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে রাস্তায় মানুষের ঢল নামতো। তবে যারা সিনেমা দেখে রাতে বাড়ি ফিরতেন তাদেরকে সাথে করে সিনেমার টিকিট হাতে নিয়ে ফিরতে হতো। না হলে রাত ১২টার পর রাস্তায় পেলে পুলিশ আটক করে থানা বা ফাঁড়িতে নিয়ে যেতো। পরদিন অভিভাবকের জিম্মায় ছাড়া হতো। তখনকার সময়ে শহরে লোকসংখ্যা ছিল কম। যারা বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ থেকে মামলা মোকদ্দমার কাজে শহরে আসতেন তারা আত্মীয়ের বাসায় রাত যাপন করতেন। তখনকার সময়ে ওই অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। সন্ধ্যার পর ভাটি এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন মাধ্যম ছিল না বললেই চলে। ওই এলাকার সড়কগুলোতে তখন জীপ গাড়ি ও মুড়ির টিন চলাচল করতো। আর এতেই ভাটি এলাকার অধিকাংশ মানুষ যাতায়াত করতেন। তখনকার সময়ে শহরের ঢাকাইয়া পট্টি এলাকায় ‘বানিয়াচং হোটেল’ নামে একটি হোটেল ছিল। শহরে আসা মানুষ ওই হোটেলে একসাথে ফ্লোরে ঢালাই বিছানায় রাত্রি যাপন করতেন। পায়ে হেঁটে চলাচল ছিল বেশি। তবে যারা একটু আর্থিক অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন তারা রিক্সায় চড়তেন।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com