
শায়েস্তাগঞ্জে মহিলা মেম্বার আয়েশা আক্তার লাকী ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ফ্রান্স পাঠানোর কথা বলে ভূয়া ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা দিয়ে ১০২ জন যুবকের কাছ থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছেন শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার আয়েশা আক্তার লাকীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। মহিলা মেম্বারের প্রতারণায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত যুবকরা এখন সর্বশান্ত। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন যুবক হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদানসহ থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এসব মামলার লিখিত অভিযোগ ও ক্ষতিগ্রস্ত যুবকরা জানান, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চরহামুয়া গ্রামের ফিরোজ আলীর ছেলে আব্দুল মতিন পরিবার নিয়ে ফ্রান্স বসবাস করেন। বড় ভাই ফ্রান্স থাকার সুবাদে আদম ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তার ছোট বোন শায়েস্তাগঞ্জ ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার আয়েশা আক্তার লাকী। হবিগঞ্জ জেলাসহ আশপাশ জেলার উঠতি বয়সের যুবক, ছাত্রীদের ওয়ার্কপারমিট মাধ্যমে ফ্রান্স পাঠানোর কথা বলে ১০২জন যুবকের কাছ থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন লাকী। লাকীর এ কাজে সহযোগিতা করেন তার স্বামী নানু মিয়া, মেয়ে জুবাইদা আক্তার নিপা ও ছোট ভাই নানু মিয়া। তারা সম্মিলিত ভাবে এসব ক্ষতিগ্রস্ত যুবক ও তাদের পরিবারের কথা বলে রোমানিয়া, সার্বিয়া হয়ে ফ্রান্স নেওয়ার জন্য চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী কারো কাছ থেকে ২০ লাখ কারো কাছ থেকে ১৫/১৬/১৭ লাখ টাকা নেন। টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর যুবকদের জাল ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট তৈরী করে ভারতে পাঠান। যুবকরা ভারতে কেউ ২ মাস আবার কেউ ৩মাস থাকার পর হাইকমিশনে যাওয়ার পর ওয়ার্ক পারমিট ও ভিসা ভূয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। ভূয়া ভিসা প্রমাণিত হওয়ার পর যুবকরা দিশেহারা পড়েন। অনেকটা হতাশা নিয়ে নিজের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য মহিলা মেম্বার লাকীকে চাপ সৃষ্টি করেন তখন লাকী টাকা ফেরত দেই দিচ্ছি বলে সময় কর্তন করেন। অনেক যুবকদের মেম্বার লাকী টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চেক প্রদান করলেও যুবকরা ব্যাংকে গিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা পাননি। পরবর্তীতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকগুলো ডিজঅনার করেন। ক্ষতিগ্রস্ত যুবকদের কয়েকজন চেক জালিয়াতির মামলাও আদালতে দায়ের করেছেন। চেক ডিজঅনার মামলাসহ অন্যান্য মামলার কার্যক্রম ধীরগতিতে হওয়ায় যুবকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আরো চরম হতাশা।
ক্ষতিগ্রস্ত যুবক হবিগঞ্জ সদর উপজেলার তেতৈয়া গ্রামের মাওলানা আব্দুল আজিজের ছেলে লোকমান মিয়া জানান, ইউপি সদস্য আয়েশা আক্তার লাকী তার বড় ভাই ফ্রান্স প্রবাসী আব্দুল মতিনের মাধ্যমে ফ্রান্সে নেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। পরবর্তীতে তিনি আমাকে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে আমাকে ভারতে পাঠান। ভারতে আমি ৩ মাস থাকার পর এ্যাম্বাসিতে গিয়ে ওয়ার্ক পারমিট দেখালে তারা সেটিকে ভূয়া হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর আমি দেশে ফিরে তাকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তিনি আরো কিছুদিন সময় নিয়ে আবারও আমাকে ভারতে পাঠান। সেখান থেকে আমাকে ওয়ার্ক পারমিট (ভিসা) লাগিয়ে দেবেন বলে জানান। তার কথামতো আবারও ভারতে গিয়ে ২৫ দিন থেকে আসি। কিন্তু তিনি আমাকে ভিসা দিতে পারেননি। দেশে আবারও টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তিনি আমাকে ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকার একটি চেক দেন। ওই চেক নিয়ে আমি ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলন করতে চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান আয়েশা আক্তার লাকীর একাউন্টে উল্লেখিত পরিমান টাকা নেই। পরে তারা চেকটি ডিজঅনার করে দেন। আদালতে আমি চেক জালিয়াতির একটি মামলা দায়ের করেছি। কিন্তু মামলা ধীরগতিতে চলছে। এ অবস্থায় আমি যাদের কাছ থেকে ধার/কর্জ করে টাকা এনেছি তারা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমাকে চাপ সৃষ্টি করেছেন। কিভাবে আমি এখন এতো টাকা ফেরত দেব। লাকীর কাছ থেকে আমার টাকা দ্রুত উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য আমি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
লাখাই উপজেলার ভবানীপুর (বেগুনাই) গ্রামের অমূল্য ভুষন দাশের ছেলে বিপুল চন্দ্র দাশ জানান, সার্বিয়া হয়ে আমাকে ফ্রান্স পাঠানোর কথা বলে ১৪ লাখ টাকা নেন ইউপি সদস্য আয়েশা আক্তার লাকী। কিন্তু আমাকেও তিনি সার্বিয়ার ভূয়া ওয়ার্ক পারমিট (ভিসা) দেন। ভারতে যাওয়ার পর আমার ভিসা ভূয়া হিসেবে প্রমাণিত হয়। একই ভাবে শায়েস্তাগঞ্জের দক্ষিণ চরহামুয়া গ্রামের কুতুব আলীর ছেলে নুরুল আমিন জুয়েলের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা ও ধুলিয়াখালের সামছুল হকের ছেলে তৌফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ১৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নেন ইউপি সদস্যা আয়েশা আক্তার লাকী। অভিযোগকারী ওই ৪জনই এর প্রতিকার চেয়ে আদালত ও থানায় ইউপি সদস্যা আয়েশা আক্তার লাকী, তার স্বামী নানু মিয়া, মেয়ে জুবাইদা আক্তার নিপা, ভাই আব্দুল মতিন ও নানু মিয়াকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, এভাবে অন্তত ১০২ জন যুবকের কাছ থেকে প্রায় ৯ কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাত করেছেন ইউপি সদস্য আয়েশা আক্তার লাকীসহ তার পরিবারের সদস্যরা। তারা ওই টাকা আত্মসাত করে এখন দেশে ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পায়তারা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।