
নব আবিষ্কৃত শনিমন্দিরটি কালেক্টরেট ভবনের আঙিনার দক্ষিণপূর্ব পাশের জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল
হিন্দু ধর্মাবলম্বীর শনি দেবতার ভক্তকুল এটাকে সংস্কার করে এর কলেবর বৃদ্ধি করেছেন
আতাউর রহমান কানন
২৮ জুন ২০০৮, শনিবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাধারণত বাসভবনের অফিসে কাজ করি। আজও সকাল থেকে কিছুক্ষণ পেন্ডিং কাজ করে সকাল ১১টায় হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে পূর্বনির্ধারিত ‘খন্দকার ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনাল এর বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করি। এই ট্রাস্টের হবিগঞ্জ শাখার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবু জাহিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়। হবিগঞ্জের মেধাবী ও কৃতী ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বৎসর এই ট্রাস্ট থেকে বৃত্তি দেওয়া হয়। আজ ৫ম, ৮ম ও ১০ম শ্রেণির ৩৩ জন ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি বিতরণ শেষে আমি বেলা ১টায় সার্কিট হাউজে এসে মৎস্য ও পশুসম্পদ সচিব সৈয়দ আতাউর রহমানকে রিসিভ করি। তিনি মূলত সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে নিজ জন্মস্থান হবিগঞ্জের রিচি গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। লাঞ্চের পর বিকেলে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। তাঁকে বিদায় দিয়ে আমি বাসায় ফিরে আসি।
পরের দিন সকাল থেকে নবীগঞ্জ উপজেলার পূর্বনির্ধারিত সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, শিপপাশা প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শন করে দুপুরে সদরদপ্তরে ফিরে আসি। বিকেল ৬টায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ভূমি অফিস সংলগ্ন নব আবিষ্কৃত শনিমন্দির দর্শন করি। অনেক প্রাচীন এই মন্দিরটি কয়েক বছর আগেই মাত্র এলাকাবাসি আবিষ্কার করেছেন। কালেক্টরেট ভবনের আঙিনার দক্ষিপূর্ব পাশের জঙ্গলে এটি হারিয়ে ছিল। আবিষ্কার হওয়ার পর সনাতন হিন্দু ধর্মাম্বলীর শনি দেবতার ভক্তকুল এটাকে সংস্কার করে এর কলেবর বৃদ্ধি করেছেন। পূজারিগণের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগের দিন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের চত্বর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিধানের জন্য একটি প্রাচীর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমানা টানা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। আজ আমি সরেজমিন দর্শন করে সীমানা নির্ধারণ করে দিই। তা মন্দির কমিটি মেনে নেয়।
৩০ জুন ২০০৮, সোমবার। দেখতে দেখতে আরেকটি অর্থবছরের আজ শেষ দিন। জেলা ট্রেজারিরও আজ হিসেব নিকেশের দিন। সকাল সোয়া ৯টায় আমার অফিসের সকল অফিসার নিয়ে জেলা ট্রেজারি ভেরিফিকেশন শুরু করি। আমি ঘণ্টানিক সময় ট্রেজারিতে কাজ করে জেলা কারাগার পরিদর্শনে যাই। ট্রেজারি অফিসারসহ অন্যান্য অফিসারগণ ভেরিফিকেশন কাজ করতে থাকেন। জেলা কারগার পরিদর্শন শেষে দুপুরের দিকে অফিসে ফিরে আসি। অতঃপর ট্রেজারি ভেরিফিকেশনের রিপোর্ট ও লেজারসমূহ আমার সামনে উপস্থাপন করলে তা স্বাক্ষর করে এ অর্থ বছরের ভেরিফিকেশনের সমাপ্ত করি।
বিকেল ৪টায় জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের কর্মচারীদের স্থায়ী হওয়া সংক্রান্ত বাছাই কমিটির সভা করি। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ সভা চলে।
২ জুলাই ২০০৮, বুধবার। সকাল ৯টায় হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবে যাই। সেখানে ‘ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে যোগদান করি। সভাতে এসে ম্যালেরিয়া যে আবার আমাদের দেশে ফিরে আসছে- সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ রিসোর্স পার্সনদের কাছ থেকে অবহিত হলাম। এ রোগের ভয়াহতা আমরা ছোটবেলায় দেখেছি। রোগটির প্রতিরোধমূলক ওষুধ বা টিকা এখনো আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। তবে কুইনাইন জাতীয় ওষুধ বের হওয়ার পর ম্যালেরিয়ায় আর তেমন একটা প্রাণহানি নেই। তবু এখনও আফ্রিকা মহাদেশসহ ক্রান্তীয় অঞ্চল ও উপ-গ্রীষ্মম-লী বিভিন্ন দেশে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বিদ্যমান। বিশ্বে বছরে গড়ে ৫০ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ৫-৬ লাখ প্রাণ হারান, যার অধিকাংশই দারিদ্রপীড়িত আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের শিশু।
আদিকাল থেকেই নাকি এই রোগ ছিল। প্রাচীন গ্রিসের ঔষধের জনক, পশ্চিমী চিকিৎসাশাস্ত্রের পিতা বলে অভিহিত চিকিৎসক হিপোক্রেটিস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০-৩৭০) প্রথম এই রোগের লক্ষণসমূহের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। এর ধারাবহিকতায় এ রোগের গবেষণা অব্যাহত থাকে। ১৬০০ সালে ম্যালেরিয়ার প্রথম নথিবদ্ধ চিকিৎসায় পেরুর আদিবাসীগণ সিনকোনা (চিনচোনা) গাছের তিক্ত ছাল ব্যবহার করত। ১৮৮০ সালে চার্লস ল্যাভেরন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর দেহের লোহিত রক্তকণিকায় এক কোষবিশিষ্ট পরজীবী প্রোটোজোয়াকে চিহ্নিত করেন। তবে রোগের কারণ কী বা কীভাবে রোগ ছড়ায় তার ওপর গবেষণা চলমান থাকে। এক পর্যায়ে ১৮৯৭ সালে ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ ডাক্তার রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়ার বাহক হিসেবে অ্যানোফিলিস নামক স্ত্রী জাতের মশাকে চিহ্নিত করে ১৯০২ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
এ রোগের হাত থেকে বাঁচার প্রধান উপায় হলো কীটনাশক ছিটিয়ে মশা নিধন, মশারি ব্যবহার, আর সেইসঙ্গে নিজের বাড়িঘর আঙিনার ঝোঁপঝাড়-ডোবানালা পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত রাখা। এছাড়া ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমই পারে প্রচারের মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। আজকের জ্ঞানগর্ব সেমিনারে আরও কিছুক্ষণ থাকার ইচ্ছে ছিল; কিন্তু অফিসে জরুরি কাজ থাকায় সাড়ে ১১টায় আমাকে ফিরে আসতে হয়। (চলবে…)