১৬টি শেয়ারের নামে ৪ কোটি টাকা আত্মসাত
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা ফাঁদ। ১৬টি শেয়ারের নামে ৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ী ঠিকাদার প্রতারণা করে কোটি টাকা ঠকিয়েছে এই অভিযোগে মামলা হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী আসামী মতিউর রহমান প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্ট এর মালিক জাবেদ রনি আহমদ এর সাথে। জাবেদ রনিকে তার সাথে ব্যবসায়িক শেয়ার দেয়ার প্রলোভন প্রদান করেন। এক পর্যায়ে জাবেদ রনি ও তার বন্ধু ইমরান আহমদের কাছ থেকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন। কিন্তু কোন লাভ বা শেয়ার না দেওয়ায় ৫টি শেয়ারের কথা উল্লেখ করে সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আসামী মতিউর রহমান বাদী ও ১নং সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ প্রলোভন দেখান যে, তিনি সরকার বাহাদুর থেকে কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নং খতিয়ানের ২০১৪, ২০১৫, ২২৮০, ৫০৭৬, ৫১৪০ নং দাগের ভূমি হতে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছেন। অনুমতিপত্র দেখান এবং উক্ত বালু উত্তোলন করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে তাই তিনি ১৬টি শেয়ার প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ত্রিশ লক্ষ টাকা করে বিক্রয় করবেন। তখন বাদী ও ১নং সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামীর নিকট প্রস্তাব করেন একত্রে ৪টি শেয়ার ক্রয় করলে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া যাবে কি না? আসামী মতিউর রহমান বাদী ইমরান আহমদ ও ১নং সাক্ষী জাবেদ রনির সহিত আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড় দেন এবং ৪টি শেয়ারের দাম একত্রে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। সে মোতাবেক ০৮/০১/২০২৪ ইং তারিখে ৪নং সাক্ষীর বাড়ি ১ম ঘটনাস্থলে সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে রাত ৮টায় নগদ তিন লক্ষ টাকা আসামীকে প্রদান পূর্বক আসামীর ব্যবসায়িক প্যাডে একখানা চুক্তিপত্র লিখে তাতে বাদী ইমরান আহমদ, ১নং সাক্ষী জাবেদ রনি ও আসামী মতিউর রহমান স্বাক্ষর করেন এবং বাকী ৯৭ লক্ষ টাকা বাদী ও ১নং সাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামীর সহিত ৩০০ (তিনশত) টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস অন্তর হিসাব করে আসামী বাদী ও ১নং সাক্ষী জাবেদ রনিকে ৪টি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বা অংশ লভ্যাংশ বাদী ও ১নং সাক্ষীকে প্রদান করবেন বলে আসামী চুক্তিপত্রে উল্লেখ করেন। এরপর আসামী নিজে ও তাঁর লোক মারফতে ব্যাংকিং মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট এক কোটি ঊনত্রিশ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। যাতে বাদী ও ১নং সাক্ষীর ৪টি শেয়ার বাবদ এক কোটি টাকা এবং অন্যান্য শেয়ার হোল্ডারদের কাছে থেকে বাকী উনত্রিশ লক্ষ টাকা ১নং সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ একাউন্ট থেকে আসামী গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে উক্ত টাকা গ্রহণ করার পর ০২/১১/২০২৪ ইং তারিখে তিনশত টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বাদী, আসামী, ১নং সাক্ষী জাবেদ রনি ও অপরাপর সাক্ষীর সম্মুখে ব্যবসায়িক চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হন। দরখাস্তকারী বাদী ও ১নং সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ ব্যাংক মারফতে টাকা পরিশোধ করার কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামীকে বললে আসামী নানান অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আসামি মতিউর রহমান গা ঢাকা দেন। পরে শেয়ার হোল্ডার ইমরান আহমদ চৌধুরী বাদি হয়ে আসামির উপর প্রতারণার অভিযোগে সিলেট আদালতে মামলা করলে আদালত এফআইআর গণ্যে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় হচ্ছে। ব্যবসায়িক শেয়ার হোল্ডাররা হন্য হয়ে মতিউর রহমানকে খুঁজছেন। কিন্তু তার কোন হদিস পাচ্ছেন না।