দ্য প্যালেস রিসোর্টে আইন মন্ত্রণালয়ের মতবিনিময় সভা

হিন্দু বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা, মামলার বিচার সম্পন্নের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করা ও সরকারি কর্মচারিরা রাষ্ট্রের মালিক জনগণকে যাতে সম্মানের সাথে সহজে সেবা প্রদান করেন তা আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের বাহুবলের পুটিজুরীতে দি প্যালেস লাক্সারি রিসোর্টে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ড-২ এর সহায়তায় ‘দেশের প্রচলিত আইনে অসামঞ্জস্যতা ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে স্টেক হোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক।
মতবিনিময় সভায় দেশের প্রচলিত আইনে অসামঞ্জস্যতা ও বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে কি ধরণের আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন সেই পরামর্শ চাওয়া হয় অংশগ্রহণকারীদের কাছে। সভায় অংশগ্রহণকারীদেরকে ৫টি গ্রুপে ভাগ করে প্রতিটি গ্রুপ থেকে সমষ্টিগতভাবে মতামত দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক। প্রতিটি গ্রুপ তাদের লিখিত পরামর্শ তৈরি করে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করেন। প্রথম গ্রুপের গ্রুপ লিডার অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর টিটু তার উপস্থাপনায় বলেন- হিন্দু ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্ণার বাধ্যতামূলক করে দেয়া প্রয়োজন। ভূমি ব্যবস্থাপনা ওয়ান স্টপ সার্ভিস করা সময়ের দাবি। দ্বিতীয় গ্রুপের গ্রুপ লিডার বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি হারুনুর রশিদ চৌধুরী তার গ্রুপের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন- ১৮ বছরের কম বয়সের কিশোরেরা বড় ধরণের অপরাধ করেছে যা খুবই ভয়ঙ্কর। কিন্তু আইনে ১৮ বছর বয়সীরা শিশু হওয়ায় তারা আইনের সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে। তাই অন্তত ১৫ বছর কিংবা তার কম বয়সীদের শিশু হিসেবে গণ্য করার জন্য শিশু আইনের সংশোধন করা প্রয়োজন। তিনিও ভূমি ব্যবস্থাপনা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার জন্য আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তৃতাকালে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন- উন্নয়নের সাথে আইন জড়িত। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ৪/৫টি আইন করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জন্যও আইন হয়েছে। তবে আইন যাতে বৈষম্যমূলক না হয় তার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে যে আইনগুলো রয়েছে তা সবই ভাল। সমস্যা হচ্ছে প্রয়োগে। আইন নিয়ে আমাদের মত দেশেই বেশী বৈষম্য হচ্ছে বলে ধারনা প্রচলিত থাকলেও উন্নত দেশেও এই বৈষম্য দেখা যায়। আমেরিকা, বৃটেন এবং ইউরোপে প্রাইভেট চাকুরীতে একই কাজের জন্য নারীর চেয়ে বেশী পারিশ্রমিক পায় পুরুষরা।
শুক্রবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি আরও বলেন, সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্রুত আইনের বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যাদের জন্য এই আইন করা হবে তাদের দুঃখের কথা ও মতামত শুনে এই আইন প্রণয়ন হবে। এর মূল উদ্দেশ্য হল বৈষম্য বিলুপ্ত করে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। সমাজে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আছে যারা এক ধরনের প্রথার শিকার। তাদের জন্যই আমাদের উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের চিন্তা করেন বলেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই দূরদর্শিতার জন্য আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ হয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হার কমেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ৪ বার বলেছেন বাংলাদেশকে ফলো করা উচিত। সারা বিশ্বে আজ বাংলাদেশ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
মতবিনিয় সভায় বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ড. মহিউদ্দিন, যুগ্ম-সচিব মোঃ জাকির হোসেন, আইএফসি প্রতিনিধি মিয়া রহমত আলী, হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবীর মুরাদ, ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাসিম রেজা, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া কামাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল হক, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মর্জিনা আক্তার, বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা হক।
অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে রয়েছেন- হবিগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বদরু মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল হাসান শরীফ, বানিয়াচং উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাসেম চৌধুরী, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আরা বেগম, কবি তাহমিনা বেগম গিনি, অ্যাডভোকেট ত্রিলোক কান্তি চৌধুরী বিজন, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ্ ফখরুজ্জামান, লুকড়া ইউপি চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আব্বাস, তেঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনু মিয়া, সাংবাদিক ফয়ছল চৌধুরী প্রমূখ। এছাড়াও হবিগঞ্জের বিভিন্ন আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধি, হিজড়া প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।