যে কোন সময় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বানের পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন আতঙ্কিত মানুষ ॥ হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী ॥ বালুভর্তি বস্তা ফেলে নদীতীর সুরক্ষিত রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা
ডেস্ক রিপোর্ট ॥ কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপান ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীসহ প্রতিটি নদী রুদ্র রূপ ধারণ করেছে। অনেক স্থানে নদীর তীর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে প্রবল বেগে বইছে বানের পানি। কিছু জায়গায় নদীর তীর ডুবে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। খোয়াই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হবিগঞ্জ শহরতলীর জালালাবাদ এলাকায় খোয়াই নদীর পুরনো ভাঙ্গন দিয়ে তীব্র বেগে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এই পানিতে হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলার অসংখ্য গ্রামের নিচু বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। শুধু তাই নয়, শহরঘেষা নোয়াগাও ও জালালাবাদের অসংখ্য বাড়িঘর এখন পানির নিচে। বিভিন্ন স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পানিতে তলিয়ে গেছে ৭৬ হাজার ২৫৯ হেক্টর রোপা আমন, আউশ ও সবজি চারা।
অপরদিকে, খোয়াই নদীর যেসব স্থানে ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে সেসব স্থানের আশপাশের এলাকার মানুষ ভাঙ্গন রোধে রাত জেগে নদীতীর পাহারা দেন। যে কোন সময় নদীর বাঁধ ভেঙ্গে বানের পানিতে বাড়িঘর ডুবে যেতে পারে এমন আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন আতঙ্কিত মানুষ। তাদের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। এখন খোয়াই বাঁধের সব জায়গাই ঝুঁকিপূর্ণ। বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের গর্তও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নদীর পানি একেবারে তীরের সমান হয়ে গেছে। খোয়াই নদীর বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, খোয়াই নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় খোয়াই নদীর জেলা শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০০ সেন্টিমিটার এবং ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের বাল্লা পয়েন্টে ২৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আমরা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছি। তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তবে আশার খবর হলো- আজ শুক্রবার পানি কমতে শুরু করবে।
খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার ও বাপা হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, আতঙ্ক উৎকণ্ঠা ও নির্ঘুম রাত- দিন কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। নদীতীরের বিভিন্ন অংশে ফাটল ও লিকেজ দেখা দিয়েছে। কোন কোন জায়গায় বাঁধ উপছে পানি পড়ছে। গোপায়া, তেতুইয়া, রাঙ্গেরগাঁও, কলিমনগর এলাকায় দেখা যায় বালুভর্তি বস্তা ফেলে নদীতীর সুরক্ষিত রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা করে চলেছেন এলাকার লোকজন। তীরের যে অংশে নদী থেকে এসকেবেটর, ড্রেজার যন্ত্র দ্বারা বালু, মাটি উত্তোলন করে ট্রাক্টর দ্বারা পরিবহন করা হয় নদী তীরের সেই অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জালালাবাদ এলাকার ভাঙ্গন দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। ইতিমধ্যেই শহরের অনেক জায়গা প্লাবিত হয়েছে। মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন। কলিমনগর এলাকায় অনেক পরিবার নদীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধেই ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে মালপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন।
চুনারুঘাট প্রতিনিধি জানান, চুনারুঘাট উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও চুনারুঘাট পৌরসভার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত উপজেলার ২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তবে বন্যার পানি বাড়তে থাকার কারণে উপজেলার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে এবং এলাকাবাসী আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছে। চুনারুঘাট পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা, ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চুনারুঘাট উপজেলা দুর্যোগ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্লাবন পাল জানান ভারী বৃষ্টিপাতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পুরো উপজেলায় আরো ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার বলেন, অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাসে চুনারুঘাটেও পাহাড় ধ্বস ও খোয়াই নদীর বাঁধ ভাঙ্গার আশংকা রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের ও বন্যাকবলিত এলাকায় বসবাসকারীদের ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে শহরজুড়ে মাইকিং করা হচ্ছে।