এস এম সুরুজ আলী ॥ বানিয়াচঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৯ জন ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় হবিগঞ্জ-২ আসনের সদ্য সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানকে প্রধান দুই আসামী করে ১৬০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪শ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বানিয়াচং থানায় মামলাটি দায়ের করেন আন্দোলনে নিহত শিশু হাসান মিয়ার পিতা ছানু মিয়া। তার বাড়ি যাত্রাপাড়া (দক্ষিণ পূর্ব) গ্রামে।
মামলায় যাদেরকে আসামীভূক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- ইউপি চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ধন মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মামুন খান, তার ভাই মাসুম খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক শাহীন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ শামসুল হক, ইউপি চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর মিয়া, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আশিক মিয়া, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান খান তুহিন, ইংল্যান্ড প্রবাসী শাহ নেওয়াজ, ফুয়াদ উল্লাহ খান, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহিবুর রহমান, জসিম উদ্দিন, সেবুল চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিপন চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ চৌধুরী বাবু, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আলমগীর হোসেন, সেজু মিয়া, আনোয়ার হোসেন, অ্যাডভোকেট মুর্শেদুজ্জামান লুকু, শাহনেওয়াজ ফুল মিয়া, আব্দুর রউফ, কাগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ আলী, জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুর রহমান মাহী, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন লাল মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এজেড এম উজ্জল, সুবেদ আলী, আবুল মনসুর তুহিন, ফজল উল্ল্যাহ খান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রিয়তোষ রঞ্জন দেব, মতিউর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন, জহির মিয়া, বিপলু মিয়া, তানভীর আহমেদ শুভ, শামীম মিয়া, দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জু কুমার দাস, হাফিজ মিয়া, সাংবাদিক সফিকুল আলম চৌধুরী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান মিয়া, ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান খান, জয়নাল মিয়া, শাহনেওয়াজ ফুল মিয়া, খলিল মিয়া, দেওয়ান সাইফুল রাজা সুমন, পুলক মিয়া, মহিবুর মিয়া, রকি মিয়া, মওদুদ আল মাহমুদ, মাসুদ খান, মহিনুর রহমান, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জয় চৌধুরী, সাইদুল হাসান, রুবেল মিয়া, মোতালিব মিয়া, আনসার উল্লাহ, মিন্টু মিয়া, সুমন মিয়া, সাইফুল ইসলাম সেলিম, শহিদ মিয়া, মিজান মিয়া, নাজমুল ইসলাম, জিয়া উদ্দিন, রুহুল আমিন, জাহেদ মিয়া, শাহ শহিদুল, ফুল মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার মিয়া, আসাদুজ্জামান আসাদ, আবিদ মিয়া, দেলোয়ার মিয়া, মোতাব্বির মিয়া, অপু খান, ইয়ামিন খান, আশরাফুজ্জামান খান রকি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল হালিম সোহেল, হাফিজ মিয়া, রিয়াজ উদ্দিন, মোবারক মিয়া ঠিকাদার, আলমগীর মিয়া, শাহ আলম, নিয়াশা সর্দার, মোজাহিদ মেম্বার, কামরুল হাসান খান, ইকবাল হোসেন খান, গোলাম কিবরিয়া খোকন, রাশেদ মিয়া, শাহজাহান মিয়া, ফয়সাল মিয়া, নুরফল মিয়া, হায়দর আলী, ফয়সাল মিয়া, আলিম উদ্দিন, মফিজুর রহমান নাবিল, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রেখাছ মিয়া, আরজু মিয়া, কামরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া লিলু, শাহিদুর রহমান, রাসেল মিয়া, ছায়েব আলী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাসিদুল ইসলাম, আশিকুল ইসলাম, মাহির মিয়া, আমির হোসেন, মোস্তফা মিয়া, কাউছার মিয়া, শিলু মিয়া, আনোয়ার হোসেন আলতু, মঈন উদ্দিন, আতিক হাসান, কামাল হোসেন, ফজল মিয়া, দুলাল হোসেন, সাবাজুর রহমান, মারুফ মিয়া, আলাউদ্দিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আশরাফ সোহেল, আরিফ বিল্লাহ, জিয়াউল হক, হৃদয় মিয়া, ইমরান মিয়া, কামরুল মিয়া, সাংবাদিক রায়হান উদ্দিন সুমন, মঞ্জিল মিয়া, লুৎফুর রহমান, মঈনুল হক, সুভাষ চন্দ্র পাল, আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মজিদ, দাবিরুল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আরেফিন সেলিম, আব্দুল মুহিত, শেখ মহি উদ্দিন, ইউপি চেয়ারম্যান সামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, ডিপজল মিয়া, জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ূন কবির রেজা, মন্দরী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাবিবুল হক, ইউপি সদস্য আলী আহমদ সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার, বাবুল মিয়া, দোলন মেম্বার, পরিতোষ ঘোষ, পৈলারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এমদাদুল হক, গনেশ দাস, আজিজুর রহমান, ঝন্টু দাস, নজমুল হক, আব্দুল আউয়াল, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বাবলু রায়, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মিলোয়ার হোসেন, আইনুর মিয়া, শাকির মামুদ প্রমুখ। উক্ত মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জন।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন- গত ৫ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। ওই দিন আন্দোলনকারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমার ছেলে স্থানীয় হাইস্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র হাসান মিয়া (১২) আন্দোলনে যায়। আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে। মিছিলটি হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক সড়কের ঈদগাহের রাস্তার সামনে আসলে পূর্ব থেকে নন্দীপাড়া গ্রামের রাস্তায় ওৎ পেতে থাকা ৩৫০/৪০০ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী মামলার ১নং আসামী সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল ও ২নং আসামী সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের নির্দেশে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, পেট্রোল বোমাসহ গোলাবারুদ নিয়ে আন্দোলকারীদের উপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীদের হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে তাদের উপর গুলি ছুড়ে। শুধু গুলিই ছুড়েনি তারা বিভিন্ন ধরণের ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় তারা বানিয়াচং থানায়ও লুটপাট করে। এ সময় ৩, ৪ ও ৩৭নং আসামীর হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলি করলে বাদীর ছেলে হাসান মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান। মামলার ৫, ৩৯ ও ৪০নং আসামীদের গুলি দ্বারা আশরাফুল (১৭) ঘটনাস্থলে মারা যান। ৬, ৭ ও ২৮নং আসামীর গুলিতে মোজ্জাক্কির মিয়া (৪৫), ৮, ৯ ও ৪৩ নং আসামীর গুলিতে নয়ন মিয়া (২০), ৯, ১০ ও ১১ নং আসামীর গুলিতে তোফাজ্জল মিয়া (১৮), ১২, ১৩ ও ১৪নং আসামীর গুলিতে সাদিকুল ইসলাম (২৩), ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮নং আসামীর গুলিতে আকিকুর নুর (৩২), ১৯, ২০, ২৪ ও ৩৬নং আসামীর গুলিতে আনাছ মিয়া (১৮) নিহত হয়। ২৯ ও ৩১ আসামীর রডের আঘাতে ও ২১ ২২ ও ২৩নং আসামীর ফিকলের আঘাতে সোহেল আখঞ্জী (৩৮) নিহত হন। এছাড়াও ৩০, ৩৪, ৩৫, ৪১, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬নং আসামীরা সাংবাদিক সোহেলকে হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছেন বলে মামলার এজাহারের উল্লেখ করা হয়। এছাড়া অন্যান্য আসামীদের জখমী সাক্ষীদের উপর হামলা করেছেন বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন। মামলার বাদী ছানু মিয়া দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে জানান, তার ৭ সন্তানের মধ্যে নিহত হাসান মিয়া ২য়। তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তেন। দেশের টানে অল্প বয়সে আন্দোলনে যান। তিনি তার ছেলেসহ অন্যান্য নিহতের যাতে বিচার নিশ্চিত করা হয় এ জন্য এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলা দায়েরের আগে তিনি নিহত অন্য ৮ জনের পরিবারের সাথে পরামর্শ করেছেন।
বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযান অব্যাহত আছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের বিজয় মিছিলে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তখন সংঘর্ষ বাঁধে। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ও পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলি ছুড়ে। গুলিতে শিশু হাসান মিয়াসহ ৯ জন নিহত হন।