২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নানা কর্মসূচি

মঈন উদ্দিন আহমেদ ॥ আজ ভয়াল ২৫ শে মার্চ আজ। ১৯৭১ সালের এইদিনে মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্ব পরিকল্পিত অপারেশন সার্চ লাইটের নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালিদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দিনটি উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
২৫ শে মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকান্ড-ই ছিল না, এটি ছিল মূলত বিশ্বসভ্যতার জন্য এক কলঙ্কজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনামাত্র। অস্ট্রেলিয়ার ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার ভাষ্য মতে, শুধু ২৫ শে মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম অধ্যায়। পরবর্তী ৯ মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই ঘৃণ্য ইতিহাসকে। ২৫ শে মার্চ দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসে। ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত এলাকায় আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টার নিয়ে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাবির জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সকল পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার আহবানে সাড়া দিয়ে দেশে শুরু হয় স্বাধীনতার যুদ্ধ। নয় মাস সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা।
এদিকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ১০টায় নিমতলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা; সকাল সাড়ে ১১টায় একই স্থানে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গীতি নাট্য/সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাছাড়া সুবিধাজনক সময়ে নিমতলা কালেক্টরেট প্রাঙ্গণসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গণহত্যার উপর দুর্লভ আলোকচিত্র/প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও আজ রাত ১০টা থেকে ১০টা ১ মিনিট পর্যন্ত এক মিনিটের জন্য সমগ্র জেলায় প্রতীকি ব্ল্যাকআউট (কেপিআই/জরুরি স্থাপনা/চলমান যানবাহন ব্যতিত) করা হবে।