হাসপাতালে নবজাতক ওয়ার্ডের ১১ সিটের বিপরীতে ভর্তি ১০০ জন ॥ এক সপ্তাহে ১৫ জনের মৃত্যু
স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষের শেষদিকে এসে তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ। ১৩ জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এর ছোঁয়া লেগেছে হবিগঞ্জেও। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশার দাপট। শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শীতের তীব্রতার মধ্যেই আসতে পারে বৃষ্টি। এতে শীত আরও তীব্র হবে।
আবহাওয়াবিদ মোঃ ওমর ফারুক বলেন, ১৮-১৯ জানুয়ারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বেশকিছু জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আরও দু-এক দিন এই অবস্থা থাকতে পারে। তবে রবিবার রাতে দু-এক জায়গায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ১৭ তারিখ রাত থেকে আবার আকাশ মেঘলা হবে। ১৮ জানুয়ারি থেকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আরও দু-এক দিন কুয়াশা থাকবে। তারপর কমবে। আস্তে আস্তে তাপমাত্রা বাড়বে।
এদিকে শীতে বেড়েছে গরম কাপড়ের বিক্রি। ঠান্ডা-কাশিসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের আয় রোজগারেও পড়েছে শীতের প্রভাব। শীতে গবাদিপশু এবং ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে শীত জেঁকে বসায় হাসপাতালে ডায়রিয়া ও সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে অনেক রোগী ভর্তি হয়েছেন। জটিল রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আউটডোরে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন। তাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। তাছাড়া ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে দেখা দিয়েছে স্যালাইন সংকট।
ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া বইছে গত কয়েকদিন ধরেই। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা প্রায় স্থবির হওয়ার পাশাপাশি কষ্ট বেড়েছে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষের। আবার কোথাও কোথাও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।
সফর আলী নামে এক চাষী বলেন, এবার এত শীত সকালে জমিতে কাজ করতে যাওয়া খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আছরের পরই জমি ছেড়ে ঘরে ফিরতে হচ্ছে।
মাহবুবুল আলম নামে এক পথচারি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এ অবস্থায় গরিব ও অভাবি মানুষ পড়েছেন বিপাকে। দরিদ্র মানুষকে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। প্রচন্ড ঠান্ডায় সবজি খেত ও বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
রহিম আলী নামে এক কৃষক বলেন, ধান রোপণের জন্য জমি প্রস্তুতের কাজ চলছে হাওর জুড়ে। শীত অক্ষোকৃত বেশি হওয়ায় জমিতে কাজ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার পরও কাজ করছি।
এদিকে গত কয়েকদিনে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত শুক্রবার একদিনে হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউবর্ন ইউনিটে (স্ক্যানু) ৫ নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। একসপ্তাহে এখানে মারা গেছে ১৫ নবজাতক। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গত বুধবার মারা গেছে এক শিশু। এ ছাড়াও গত ৭ দিনে ৫ জন বৃদ্ধও শীতজনিত কারণে মারা গেছেন। বর্তমানে শিশুরোগীর চাপে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের ১১ সিটের বিপরীতে ভর্তি আছে ১০০ জন।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালের স্ক্যানুতে গিয়ে দেখা গেছে, নবজাতক কোলে অভিভাবকদের দীর্ঘ লাইন। সেখানে হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ দেবাশীষ দাস রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। নবজাতকদের মধ্যে যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের সিলেটে পাঠানো হচ্ছে।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্টারে গতকাল শনিবার ভর্তি ছিল ৯৬ শিশু। অথচ সেখানে সিট আছে ৫৯টি। ভর্তি রোগীর অধিকাংশই নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত। সেখানে নার্সরা রোগীদের নিরলসভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালের নার্স জোৎ¯œা আক্তার জানান, হাসপাতালে ভর্তি শিশু রোগী বেশিরভাগ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্ত।
হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ দেবাশীষ দাস জানান, তীব্র শীতে শিশুদের শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ কারণে হাসপাতালে শিশু রোগীর সংখ্যা বেশি। অভিভাবকরা সচেতন না হলে শিশুদের অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া শিশুদের বাবা-মাকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।