হবিগঞ্জ জেলার ১৮ জন অবসরপ্রাপ্ত গুণী শিক্ষক পেলেন টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির বলেছেন- স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষকদেরকে স্মার্ট হতে হবে। স্মার্ট শিক্ষকদের মাধ্যমে আমাদের আগামী প্রজন্ম ছাত্রছাত্রীদেরকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত কারিকুলাম পরিবর্তন করেছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে বসে শিখবে লেখাপড়া করবে এবং আয় করবে। স্কুল থেকেই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করবে।
তিনি বলেন- হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক টি আলী স্যার ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। তাঁর প্রতি সম্মান জানাতে সরকার হবিগঞ্জ পৌরসভার মাধ্যমে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের সড়কটি টি আলী স্যার সড়ক নামে নামকরণ করেছে।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে হবিগঞ্জ জেলার গুণী ১৮ জন শিক্ষককে আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদেরকে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম, হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল্লাহ, টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক, সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির খান। টি আলী স্যারের ছাত্র, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার সম্পাদক হারুনুর রশিদ চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলফাজ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট মনসুর উদ্দিন আহমেদ ইকবাল, হবিগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আউয়াল তালুকদার, সাবেক পৌর কমিশনার আব্দুল মোতালিব মমরাজ। সংবর্ধিত শিক্ষকবৃন্দকে অভ্যর্থনা জানান, হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক শিউলী রানী দাশ ও সিনিয়র শিক্ষক তাহমিনা বেগম।
অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের বর্ণাঢ্য জীবনের ডিজিটাল বায়োগ্রাফি সবার সামনে প্রদর্শন করা হয়। সেই সময় অনেক শিক্ষক তাদের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি, নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। পরে সম্মাননাপ্রাপ্ত ১৮শিক্ষক ও তাদের পরিবারের হাতে বায়োগ্রাফি তুলে দেওয়া হয়। এরমধ্যে ৫ জনকে দেওয়া হয় আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননা। এছাড়া সম্মননাপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষককে আর্থিক উপহার দেওয়া হয়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন- হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় মো. আব্দুর রহমান, মো. জবেদ আলী, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় মো. আব্দুল খালেক, মহেশ্বর দাস, বানিয়াচং উপজেলায় রামেন্দ্র সুন্দর ভট্টাচার্য্য, মো. আমীর হোসেন মাস্টার, মাধবপুর উপজেলায় আব্দুন নূর, মো. সিরাজুল ইসলাম, নবীগঞ্জ উপজেলায় নিজামুল ইসলাম, মৌলভী মো. মহিউদ্দিন, চুনারুঘাট উপজেলায় রইছ উল্লাহ, মো. আব্দুল মতিন, বাহুবল উপজেলায় মো. আরজু মিয়া, উজ্জ্বল কুমার ভট্টাচার্য্য, লাখাই উপজেলায় সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভূঞা, মো. আছগর আলী, আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় আবু সালেহ শাহ, মো. আবুল খায়ের পাটোওয়ারী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির আরো বলেন, অসহায়, আর্থিক সঙ্কটে থাকা শিক্ষকদের বাছাই করে তাদেরকে সম্মানিত করছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন’। প্রবাসে থেকে দেশের শিক্ষকদের জন্য এমন কাজ অত্যন্ত গৌরবের। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবদ্দশায় সহযোগিতা ও তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হলে শিক্ষকরা এই পেশায় আসতে অনুপ্রাণিত হবেন।
তজম্মুল আলী একজন মানুষ গড়ার কারিগর। ভালোবেসে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীরা নাম রাখেন টি আলী স্যার। টি আলী স্যার সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার বৃহত্তর জলঢুপে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৩১ বছর হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। একই স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি হোস্টেল সুপারের মত গুরু দায়িত্বও পালন করেন ২৮ বৎসর। ২০১৯ সালে সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃতি সন্তান এই শিক্ষকের নামে প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্য ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন।
মূলত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সম্মাননা ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষকদের সহযোগিতার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ফাউন্ডেশনটি। আদর্শবান শিক্ষক আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা শিক্ষকদের সন্ধান অথবা ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন রুচিশীল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যাদের খোঁজ খবর অনেকে রাখেন না তাদেরকে খোঁজে কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে।
প্রসঙ্গত, টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন ২০২০ সালে সিলেট বিভাগে আদর্শ শিক্ষকদের নিয়ে কাজ শুরু করে। ফাউন্ডেশনটি আদর্শ শিক্ষকদের সম্মাননা পদকে মনোনয়নে একটি বোর্ড গঠন করে। এই মনোনয়ন বোর্ডের প্রধান হলেন এবং টি আলী স্যার ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ সমন্বয়ক, সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সিলেট বিভাগ বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি কবির খান। হবিগঞ্জ জেলার দায়িত্বে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ আলফাজ উদ্দিন হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যেক উপজেলায় অবসরপ্রাপ্ত দুইজন আদর্শ শিক্ষককে সম্মাননা পদকে মনোনয়ন জরিপ চালিয়ে যান। এরই ধারাবাহিকতায় মনোনয়ন বোর্ড হবিগঞ্জ জেলার ৯ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত আদর্শ শিক্ষকের সম্মাননার স্বীকৃতি হিসেবে টি, আলী স্যার ফাউন্ডেশন সম্মাননা পদক ২০২৩ সালের জন্য ১৮ জন মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নামের তালিকা প্রকাশ করে।
এছাড়া তাদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহের পর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বর্ণাঢ্য জীবনী প্রকাশ করে। মনোনয়নপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রত্যেকের ফ্রেমবন্দি জীবনী মঙ্গলবার তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জীবদ্দশায় সহযোগিতা ও তাদের কাজের স্বীকৃতিকে সমাজে উপস্থাপন করার এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেয় ‘টি আলী স্যার ফাউন্ডেশন’। এরই অংশ হিসেবে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায় এ সংস্থা গুণী শিক্ষকদের জীবিত অবস্থায় সম্মাননা দিচ্ছে।