কোন পক্ষেই মামলা না হলেও গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে ॥ অনেক মহিলা শিশুসন্তানদের নিয়ে চলে গেছে বাপের বাড়ি ॥ সন্দেহভাজন ৬ ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ

মনিরুল ইসলাম শামিম, বাহুবল থেকে ॥ বাহুবলে জোড়া খুনের ঘটনায় গ্রামজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুপক্ষের দুই খুনের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার আতঙ্কে গ্রামজুড়ে বাড়িঘর পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও বাড়িঘরে অবস্থানরত নারী-শিশুরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও কোন পক্ষেই মামলা হয়নি। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৬ ব্যক্তিকে আটক করেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত কামারগাঁও গ্রামের আবুল হাশিম-এর পুত্র আবু তাহির-এর সাথে একটি জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই গ্রামের চেরাগ আলী মহালদারের পুত্র ইউসুফ আলীর বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরে মাসখানেক পূর্বে উভয় পক্ষে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এ প্রেক্ষিতে ইউসুফ মিয়া ও তার ভাই লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে আবু তাহির-এর পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলায় গত ২১ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে তারা জামিন লাভ করেন।
৩০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে উল্লেখিত বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষের লোকজনের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। রাত ১০ টার দিকে তা হামলা-পাল্টা হামলায় রূপ নেয়। এতে এক পক্ষের ইউসুফ মিয়া (৩৫) ও অপর পক্ষে উস্তার মিয়া (৩৫) নিহত হন। ঘটনায় উভয় পক্ষে আরো কয়েকজন গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছেন।
গতকাল সোমবার কামারগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। রাস্তাঘাটে লোকজনের আনাগুণা নেই। নিহত হউসুফ মিয়ার বিলাসবহুল বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শ্মশানসম নিরবতা বিরাজ করছে। বাড়িঘরে কোন জনমানব নেই। তাদের বাড়ির পার্শ্ববর্তী মোহাম্মদ আলী, ছায়েদ আলী, ইসহাক আলী, ইদ্রিছ আলী ও সিদ্দিক আলীসহ ৬/৭জনের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে নিহত ইউসুফ মিয়ার পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। নিহত ইউসুফ মিয়া দুই শিশু সন্তানের জনক। তার পিতা-মাতা ছাড়াও ৪ ভাই ও ৬ বোন রয়েছে।
অপর নিহত উস্তার মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মা ছুকেরা খাতুন পুত্র শোকে বিলাপ করছেন। ঘটনার পরপরই নিরাপত্তা জনিত কারণে তার তিন পুত্রকে নিয়ে স্ত্রী পিত্রালয়ে চলে গেছেন। শোকাচ্ছন্ন ছুকেরা খাতুন বলেন, ইউসুফ মিয়ার সাথে আবু তাহিরের ঝগড়া-বিবাদ আছে। আমরা কোন পক্ষের সদস্য না। সম্পূর্ণ বিনা কারণে আমার পুত্রকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সুবিচার চাই। তিনি আরো বলেন, আমার পুত্র উস্তার মিয়া সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সে ভোর বেলায় বাড়ি থেকে বের হতো এবং রাতে গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরতো। কারো ঝগড়া-বিবাদে যাওয়ার মতো তার সময়ও ছিল না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামীম বলেন, “গত রোববার বিকালে নিহত ইউসুফ মিয়া ও নিহত উস্তার মিয়ার আলাদা জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিবদমান দু’পক্ষের বাড়িঘর প্রায় জনমানব শূন্য রয়েছে। কোন কোন বাড়িঘরে দু’এক নারী-শিশু অবস্থান করছেন। এলাকার নিরাপত্তা রক্ষার্থে পুলিশের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে গ্রাম পুলিশও নিয়োজিত করা হয়েছে।”
বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মশিউর রহমান সোমবার বিকাল ৪টায় এ প্রতিনিধিকে জানান, জোড়া খুনের ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। এ পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৬ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন- মিরপুর ইউনিয়নের কামারগাঁও গ্রামের মৃত হরমত উল্লাহ পুত্র মোঃ আতর আলী (৬০), আবুল মিয়ার পুত্র মোঃ সোহাগ মিয়া (২০), মকছুদ আলীর পুত্র সাজু মিয়া (১৯), সানু মিয়ার পুত্র মোঃ মোবাশ্বির (১৯) ও মানিক মিয়ার পুত্র অলিউর রহমান (১৯) এবং সাতকাপন ইউনিয়নের মানিকপুর গ্রামের আব্দুল আউয়াল-এর পুত্র মোঃ রানা (৩০)।
ভুল সংশোধন ঃ বাহুবলের কামারগাঁওয়ে জোড়া খুনের ঘটনায় নানা গুজব রটাচ্ছে একটি মহল। এমনই একটি খবর আসে দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকা অফিসে। গতকাল হবিগঞ্জের মুখ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বাহুবলে সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একজনের মৃত্যু’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। বাহুবল থানা পুলিশ জানায়, মকসুদ মিয়া নামে আরো একজনের যে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে তিনি সিলেটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।