স্টাফ রিপোর্টার ॥ শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং নদী থেকে নৌকাযোগে বালু পাচার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ডজনখানেক নৌকা দিয়ে সুতাং নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে পাচার করছে একটি চক্র। এতে করে ফসলি জমি, কবরস্থান ও ঈদগাহ ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার আদমপুর, লাখাই এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলার কাটাখালী এলাকা থেকে নৌকা নিয়ে এসে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং ব্রিজ, পুরাসুন্দা এবং চুনারুঘাট উপজেলার জোয়ার লালচাঁন্দ এলাকার বিভিন্ন ফসলি জমির পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে একটিচক্র। আর এই চক্রকে শেল্টার দিয়ে আসছেন স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি। বিনিময়ে নৌকা প্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন প্রভাবশালীরা। তাদের চাঁদা না দিলে কোন বালুবাহী নৌকা প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুতাং নদীর মদনপুর এলাকা থেকে নোকায় বালু বোঝাই করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর এলাকা থেকে বালু নিতে এসেছেন। প্রতি নৌকায় ১৫০ ফুট বালু নেন তারা। সেই বালু ৬/৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।
বালু শ্রমিক ওসমান মিয়া বলেন, প্রভাবশালীদের মাধ্যমে আমরা এখানে আসি। তাদেরকে নৌকা প্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে বালু নেই।
এসময় স্থানীয়রা নৌকাটিকে আটক করেন। পরে ঘটনাস্থলে কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হয়ে মুঠোফোনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেন। প্রশাসনের লোকজন আসছে শুনে নৌকার শ্রমিক প্রভাবশালীদেরকে মুঠোফোনে কল দেয়। ঘটনাস্থলে প্রভাবশালীদের একজন উপস্থিত হয়ে জোরপূর্বক অবৈধ বালু বোঝাই নৌকাটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সুতাং এলাকার শাহাব উদ্দিন বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি নৌকা বালু নিয়ে যায়। এখানে একটা প্রভাবশালী চক্র আছে তাদের মাধ্যমে সুতাং নদীর বালুগুলো অবৈধভাবে পাচার হয়। কেউ যদি কথা বলে তাহলে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়।
মদনপুর গ্রামের জালাল আহমেদ বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ৩/৪টি নৌকা বোঝাই করে বালু নেয়। আমাদের ঈদগাহ, কবরস্থান ভেঙে পড়ছে। তাদেরকে অনুরোধ করলেও তারা শুনছেনা। ইউনিয়ন সভাপতি ইসহাক আলী সেবন আমাদের দুইপাড়ের মানুষ চলাচলের জন্য একটি ব্রিজ নির্মাণ করে দেন। বালু উত্তোলনকারীরা এই ব্রিজটিকে ভেঙে নৌকার পথ করেছে। আমরা এলাকাবাসী এ অবস্থা থেকে মুক্তি চাই।
শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল মিয়া জানান, বালু বোঝাই নৌকা যাতায়াতের জন্য বাঁশের ব্রিজের খুঁটি উপরে ফেলে ব্রিজটি ভেঙে ফেলেছে। আমরা খুব বেকায়দায় আছি।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ইসহাক আলী সেবন বলেন, নূরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পূর্বে ওই এলাকার মানুষের অনুরোধে আমি ৮৫ হাজার টাকা ব্যয় করে একটি বাঁশের ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। সুতাং নদী দিয়ে অবৈধ বালু পাচার হয়। এই অবৈধ বালু পাচার যাতে বন্ধ হয় আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই। একই সাথে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে পুনরায় ব্রিজটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়। যারা অবৈধ বালু নিয়ে এই ব্রিজটা ভাঙছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈমকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।