ড. জহিরুল হক শাকিল

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী আজ। বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ৫০ বছর পাড়ি দিলো। হাজার বছরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে লালিত বিশ্বে বাঙালির একমাত্র জাতি রাষ্ট্র হলো বাংলাদেশ। এই বাঙালি জাতি দিক হারা হয়েছে অনেকবার। নিজেদের নেতৃত্বের ভুলে হোক আর সঠিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতে হোক অথবা বিশ্বাসঘাতকতা ও ষড়যন্ত্রের জন্যই হোক এই বাঙালি জাতির পরাধীনতার অভিজ্ঞতা নিয়েছে অনেক বার। সর্বশেষ দু’শো বছরের ব্রিটিশ শাসনের ও শোষণের নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে পুরো ভারতবর্ষের সাথে বাঙালির সংগ্রাম ও ত্যাগ ছিল উল্লেখযোগ্য। দ্বি-জাতি তত্বের মাধ্যমে ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান দুটি জাতিকে বিবেচনায় এনে ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্ঠির মাধ্যমে এ উপমহাদেশ স্বাধীন হলো। তৎকালীন পূর্ব বাংলা পরবর্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর পৃথক জাতি সত্বা থাকা সত্বেও বাঙালি পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোর অধীনে আরেকবার পরাধীনতার শৃংখলে আবদ্ধ হলো। পাকিস্তান রাষ্ট্রের যাত্রার শুরুতেই বাঙালির প্রতি তাদের উপনিবেশবাদী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনেই প্রকাশ পায় পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় বাঙালি এক পৃথক জাতিসত্বা। ভাষা আন্দোলন কেবল বাংলাদেশের জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় নয়; বিশ্বের বিভিন্ন জাতিসত্বার মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও জনগনের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এক মাইলফলক। ভাষা আন্দোলন ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন। সেজন্যই এ আন্দোলনের বিজয় ছিল অবিশ্যম্ভাবী। অল্প সময়ের ব্যবধানে এ আন্দোলনের বিজয় শুধু পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেনি; নব্য স্বাধীন পাকিস্তানে তথা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক পৃথক জাতিসত্ত্বার বিকাশ ঘটিয়েছে। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি অংশে দু’ যুগের ব্যবধানেই এক গৌরবদীপ্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি প্রতিষ্ঠা করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বাঙালির পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের শোষণ ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা ব্রিটিশ শাসনামলের দু’শো বছরের শোষণ ও বঞ্চনাকে হার মানায়। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পরই বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবী নিশ্চিতের আন্দোলন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে যায়। ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি ধীরে ধীরে স্বাধিকারের দিকে এগিয়ে যায়। ৬ দফা দাবীকে ইশতেহার ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের ভূমিধ্বস বিজয়ই ইঙ্গিত দেয় বাঙালি জাতি স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে।
১৯৭০’র নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিজয় ছিলো মূলতঃ বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি নিশ্চিতের বিজয়। কিন্তু ১৯৭০’র নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রদানে গরিমসির মাধ্যমে আবারো পশ্চিম পাকিস্তান রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের আধিপত্য ও ঔপনিবেশবাদী চরিত্র প্রকাশ পায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এদেশের নিরস্ত্র বাঙালির উপর ইতিহাসের নির্মম গণহত্যা চালালে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় স্বাধীনতাযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও বাঙালির ত্যাগ তিথিক্ষার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে জন্ম নেয় বাঙালি জাতীয়তাভিত্তিক একমাত্র জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে চার মূলনীতি তথা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রকে সামনে রেখে পরিচালিত হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের পর এই চার নীতির ওপর ভিত্তি করেই ১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হয়। বাঙালি জাতি পাকিস্তানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও সংগ্রাম করতে গিয়ে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির প্রেক্ষিতেই এই চার মূলনীতি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই চার মূলনীতিকে ভিত্তি ধরেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র যাত্রা শুরু করে।
পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিড়ে শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হবে অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ। অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের জন্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যকেই সামনে রেখেই বাংলাদেশের পথ চলা। সেই পথ চলা ৩ বছরের মধ্যেই থমকে দাড়ায় দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ড। পাকিস্তান শাসনামলের বেশিরভাগ সময় বাঙালিযে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে স্বাধীন বাংলাদেশে সেই সামরিকতন্ত্র আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ও মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যায় জড়িতে ব্যক্তি ও রাজনৈতিকদলসমূহকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পৃক্ত করা হয় দেশের কোনো বৃহত্তর স্বার্থে নয়; বরং গুটি কয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠির কায়েমি স্বার্থ বাস্তবায়নে। রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন বানানোর জটিল সমিকরনে দেশ মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র থেকে ধীরে ধীরে বিচ্যুত হতে থাকে। রাজনীতি ও দেশ পরিচালনা চলে যায় সামরিক বেসামরিক আমলা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও পুঁজিবাদি গুটিকয়েক ব্যক্তি ও গোষ্ঠির কাছে। সে ধারা থেকে মুক্তি আজও মিলেনি।
যে স্বৈরতন্ত্রকে নির্মূল করতে পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬৯’র গণ অভ্যুত্থান হয়েছিল সেই একই অবয়বে নব্য স্বৈরতন্ত্র বাংলাদেশে চালু হয়। ১৯৯০’র গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ আবার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসলেও অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতায় যেতে বিভিন্ন দল ও জোট বারবার অপচেষ্ঠা করেছে। ঐ যে বাঙালি জাতির অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ঠ্য অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সেই চেতনার পথ ধরে দেশ আবার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসে। এরই মধ্যে বার বার সংবিধানকে কাটাছেড়া করে আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মুলনীতি থেকে ছিটকে পড়েছি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মতো অসভ্য বিধি সংবিধানে যুক্ত করে কেবল বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি বাধাগ্রস্থ করা হয়নি; বরং সংবিধানের পবিত্রতা নষ্ট করা হয়েছে। সংবিধানকে সংশোধন করে অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন কালাকানুন সংবিধানে ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সংযুক্ত করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি থেকে আপামর জনগণকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশে এখনও স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতধর্মী ব্যক্তি ও গোষ্ঠি সোচ্চার। সেজন্যই জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির পথে বারবার থমকে দাড়াতে হচ্ছে। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের মুলনীতির সুফল আমরা জাতি হিসেবে পুরোপুরি ভোগ করতে পারিনি। এখনও আমরা সংগ্রাম করছি পুরোদোস্তরভাবে মুক্তিযুদ্ধের মুলনীতিতে ফিরে আসার। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারেনি। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে এনে অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে রাষ্ট্রযন্ত্র প্রচেষ্ঠারত হলেও একটি বিশাল জনগোষ্ঠির জনগনের চিন্তা চেতনা অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা থেকে অনেক দূরে। আর সেজন্যই রামু, নাসিরনগর, ভোলা ও শাল্লার মতো ঘটনা আমরা এড়াতে পারছি না। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিগুলো আজও তাদের মানবাধিকার ও বেঁচে থাকার সংগ্রামরত। দুর্নীতির মূলোৎপাঠনে বাংলাদেশ এখনও কাংখিত সফলতা অর্জন করতে পারেনি। অর্থনৈতিক ব্যবধান ক্রমশঃ বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা থেকে বাংলাদেশ আজও দূরে।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অপ্রাপ্তি থেকে প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য। সংবিধান থেকে নানা কালাকানুন সরিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিতে ফিরে যাওয়ার প্রচেষ্ঠা অব্যাহত আছে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। পলাতক হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্ঠা করা হচ্ছে। চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে ও বাকীদের বিচারের আওতায় আনা হয়েছে ও হচ্ছে। মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষ সমূলে উৎপাঠন করতে বাংলাদেশের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত আছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্যাশা ছিল অর্থনৈতিকভাবে একটি সাবলম্বী ও মর্যাদাবান জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। এখানে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করার মতো। জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন, খাদ্য ও বাসস্থানের নিরাপত্তায় বাংলাদেশের এগিয়ে চলা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। জাতীয় আয়ের বা জিডিপির আকার ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসে বেড়েছে ৩৬৯ গুণ। অর্থের পরিমাণে ৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যাত্রার শুরুতে মাথাপিছু আয় মাত্র ১২৯ ডলার ছিল। যা ১৬ গুণ বেড়ে হয়েছে ২,০৬৪ ডলার। ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় যেখানে ছিলো মাত্র ২৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ২০২০ সালে তা হয়েছে ৩৯.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। মার্কিন রাজনীতিবিদ হেনরী কিসিঞ্জারে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত দেশটি ২০৩৫ সালের মধ্যে হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেশীয় অর্থে পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন আজ বাস্তব। মেট্রোরেল ও টানেল নির্মাণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিচায়ক। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের খেতাব থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করে উন্নত বিশ্বের কাতারে চলে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশের পোষাক শিল্প খাত বিশ্বে নেতৃত্বের আসনে। মানব সম্পদ রপ্তানীতে বাংলাদেশ ভালো করছে। কৃষির আধুনিকায়নে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সেজন্যই করোনা সংকটেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দৃঢ় ও মজবুত।
মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার সংগ্রামরত। দারিদ্র বিমোচন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। মানসম্মতত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বাংলাদেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয়। জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও এমপিওভূক্তিকরণের সুফল জাতি অচিয়েই ভোগ করবে। গুণগত মানসম্মত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশের অগ্রগতি আশানুরূপ। দেশের পুরো এলাকাকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসা ও শিল্পায়নের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে বাংলাদেশের এগিয়ে চলা বিশ্বের বিস্ময়। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, শিল্পবর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা, নদী ও জলাশয় রক্ষায় উদাসীনতা, বনভূমি ধ্বংস ও পরিবেশের বিপর্যয় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও মানব নিরাপত্তার অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে বিশ্বে নেতৃত্ব দিবে এ প্রত্যাশা। অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল সবাই ভোগ করে দেশের বিভিন্ন এলাকার সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করে শহর ও গ্রামের ব্যবধান কমিয়ে এনে কাঠামোগত শোষন ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই বাঙালি জাতির আকাক্সক্ষা।
লেখকঃ ড. জহিরুল হক শাকিল, অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।