পুলিশের কাছে মুচলেকা দিলেন গরুর বাজারের সেলিম
স্টাফ রিপোর্টার ॥ জীবনে আর সুদের ব্যবসা কিংবা কাউকে নির্যাতন করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন হবিগঞ্জ শহরের গরুর বাজার এলাকার আলোচিত সুদের ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ। গতকাল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে তিনি এ মুচলেকা দেন।
এলাকাবাসি ও পুলিশ সূত্র জানায়, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নছরতপুর গ্রামের মৃত নিম্বর আলীর ছেলে সেলিম আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে রাহুল ট্রেডার্স নামে ধান চালের দোকানের আড়ালে গরু বাজার, কামড়াপুর, যশেরআব্দাসহ হবিগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে লোকজনদের চড়া সুদে টাকা দিচ্ছেন। তিনি ১ হাজার টাকায় সপ্তাহে ২শ টাকা সুদে লাভ নেন। আর কারো কাছ থেকে দৈনিক ও কারো কারো কাছ থেকে মাসিক সুদ নিচ্ছেন। দরিদ্র লোকজন আর্থিক সমস্যায় পড়ে তার কাছ থেকে সুদে টাকা নেন। সুদে টাকা নিয়ে দিতে না পারলে সেলিম আহমেদ তাদেরকে প্রথমে গালি-গালাজসহ দুর্ব্যবহার করেন। যত দিন যায়, তত সুদের হার বেড়ে দ্বিগুন হয়ে যায়।
বানিয়াচং উপজেলার মার্কুলী এলাকার ফজলু মিয়া গরু বাজার এলাকায় বসবাস করে শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি সেলিম আহমেদের কাছ থেকে সুদে টাকা নেন। কিন্তু সেলিম আহমেদের সুদের লাভ দিতে না পারায় সেলিম তাকে ডেকে একটি দোকানে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মারধোর ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এই নির্যাতনের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রচারিত হয় এবং নির্যাতিত শ্রমিক ফজলু মিয়া পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যার কাছে সেলিম আহমেদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন প্রথমে সেলিম আহমেদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা সুদ নিয়েছিলেন। ২০ হাজার টাকায় তিনি মাসে ২ হাজার টাকা করে পরিশোধ করে আসছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর্থিক সংকট থাকার কারণে তিনি সেলিমের সুদের লাভ দিতে পারেননি। এই সুদের লাভ বেড়ে গিয়ে দ্বিগুন হয়ে যায়। এতে উত্তেজিত হয়ে সুদি মহাজন সেলিম আহমেদ ফজলু মিয়াকে মারপিট ও শারারিকভাবে নির্যাতন করেন। আর এই নির্যাতনের দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। এছাড়াও ফজুল মিয়া পুলিশ সুপারকে জানান, কয়েকবার তাকে মারপিট করেছেন সেলিম আহমেদ। ফজলুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সেলিম আহমেদকে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে সেলিম আহমেদ সুদের ব্যবসার কথা অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে সেলিম আহমেদের সুদের টাকা উত্তোলনের ৪টি বই পুলিশ সুপারের কাছে উপস্থাপন করা হয়। এইগুলোর লেখা তার হাতের কি না, তা প্রমাণ করার জন্য পুলিশ সুপার তার হাতের লেখা নেন এতে প্রমাণিত হয় বইগুলোর লেখা সেলিম আহমেদের। লেখা রয়েছে সেলিম আহমেদ কার কাছ থেকে কত টাকা সুদ নিচ্ছেন। পরে সেলিম আহমেদ স্বীকার করেন তিনি আগে সুদের ব্যবসা করতেন। এখন আর সুদের ব্যবসা করেন না। সুদের লাভের টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্যাতনসহ মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে আটক করতে চাইলে তিনি তার সাথে থাকা লোকজনদের নিয়ে জীবনে আর কোন দিন সুদের ব্যবসা করবেন না বলে মুচলেকা দেন এবং তার দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না বলেও অঙ্গিকার করেন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে সেলিম আহমেদ স্বীকার করেছেন, তিনি আগে সুদের ব্যবসা করতেন। এখন সুদের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে তিনি ভবিষ্যতে আর সুদের ব্যবসা করবেন না এবং কাউকে নির্যাতন করবেন না বলে অঙ্গিকার করে মুচলেকা দিয়েছেন। তার বিষয়ে আরো তদন্ত করা হবে। এছাড়াও সুদের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার।