স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার মুুড়িয়াউক ইউনিয়ন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে শুরু হয়েছে ভয়ংকর খেলা। আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী নোমান সারোয়ার জনিকে ঘায়েল করার জন্য এক প্রতিবন্ধীর মৃত্যুকে হত্যা সাজিয়ে গতকাল আদালতে দায়ের করা হয়েছে মামলা। মামলায় নোমান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা বলু মিয়া, মোঃ মিলন মিয়া সহ তার আত্মীয় ও গ্রামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রধান ১১ জনকে আসামী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নোমান সারোয়ার জনি অভিযোগ করেছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোখলেছ ও বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই গংদের পারস্পারিক সহযোগিতা ও ইঙ্গিতে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাখাই উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯) একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। গত ১৬ মার্চ রাত ৮টায় একই গ্রামের খোয়াজ আলীর ধানী জমিতে বোরহান উদ্দিন পানি দিতে যায়। পরদিন সকাল ৬টায় তেঘরিয়া মাদ্রাসা -পশ্চিম বুল্লা গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে বাহার মিয়ার বাড়ীর নিকট কালভার্টের নিচে একটি পলিথিনের উপর শোয়া অবস্থায় বোরহানকে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে গ্রামের লোকজন বোরহান উদ্দিনকে ধরাধরি করে বাড়িতে নিয়ে মাথায় পানি দেয় এবং জ্বিন ভূতের আঁছড় মনে করে স্থানীয় কবিরাজ ও মৌলানার মাধ্যমে তাকে ঝাঁড় ফুক দেয়। এতে সে সুস্থ না হওয়ায় তাকে চিকিৎসার জন্য গত ১৭ মার্চ সকাল ১০টায় হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল এনে চিকিৎসা করান। ঐদিনই তার আত্মীয়-স্বজন তাকে কবিরাজ দেখানোর জন্য হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে তাকে তেঘরিয়া মাদ্রাসার হুজুর নাসিরনগরের মোস্তাক হুজুর সহ ভৈরবের কমলপুরের কবিরাজের নিকট নিয়ে জ্বিনের ভর ছাড়ানোর চিকিৎসা করান। অবস্থার উন্নতি না হলে ১৮ মার্চ বোরহান উদ্দিনকে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা করান তার পরিবারের লোকজন। যাহার রেজিঃ নং- ২৯৩৩। পরবর্তীতে ১৯ মার্চ চুনারুঘাটের ইউনি কেয়ার ডায়গনস্টিক সেন্টারে চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাইর আত্মীয় ডাক্তার মোঃ তানভীর রহমান চৌধুরীর নিকট চিকিৎসা করান। তানভীর রহমান তার চিকিৎসাপত্রে ঐ/ঙ ঋধষষ উল্লেখ করে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। সেখানে ২০ মার্চ বোরহান উদ্দিনের মাথায় অপারেশন করা হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ২১ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
বোরহান উদ্দিনকে কালভার্টের নিকট থেকে উদ্ধারের পর যত ডাক্তার ও হাসপাতালে দেখানো হয়েছে কোথাও তার শরীরে আঘাত বা মারপিট রয়েছে বলে উল্লেখ নেই। মারপিটের কারণে মৃত্যু হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার সুরতহাল সহ পোস্টমর্টেম করা হত। কিন্তু বোরহান উদ্দিনের আত্মীয়-স্বজন সিলেট থেকে বোরহান উদ্দিনের লাশ বাড়িতে এনে নামাজের জানাজার সময় নির্ধারণ করে মসজিদে মাইকিং করার পর তেঘরিয়া গ্রামের অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোখলেছ ও রফিকুল ইসলাম মলাই এক হয়ে নতুন ফন্দি আটেন। তারা তেঘরিয়া গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস শহিদ ও সাবেক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন্নাহার বেগম এর ছেলে নোমান সারোয়ার জনির জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে ঘায়েল করার জন্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বোরহান উদ্দিনের বাবাকে বশীভূত করে। পরে তার মাধ্যমে লাখাই থানায় বোরহানকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সংবাদ দেয়। লাখাই থানা পুলিশ জি.ডি নং- ৮৭৪, তারিখ- ২২/০৩/২০২১ইং মূলে বোরহান উদ্দিনের সুরতহাল প্রস্তুত করতঃ পোস্টমর্টেম এর আবেদন করলে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার ২৩ মার্চ বোরহানের লাশের পোস্টমর্টেম করেন।
উল্লেখ্য, ১৭ মার্চ বোরহান উদ্দিনের শরীরে কোন জখম দেখা না গেলেও এবং সরকারি কোন হাসপাতালে তার শরীরে কোন জখম উল্লেখ না করলেও সুরতহাল প্রস্তুতের সময় তার উরুতে ও পিটে কিছু লীলাফুলা জখম পরিলক্ষিত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যার ফলে এলাকার মানুষ বিভিন্ন ধরণের কানাঘুষা করেন।
এদিকে তেঘরিয়া গ্রামে অপর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোখলেছ ও মলাই গংদের পারস্পারিক সহযোগিতা ও ইঙ্গিতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নোমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বলু মিয়া, মোঃ মিলন মিয়া সহ তার আত্মীয় ও গ্রামের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রধান (বয়স্ক লোকজন) মোট ১১ জনকে আসামী করে মোঃ মজনু মিয়া বাদী হয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পবন চন্দ্র বর্মন এর আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। যাহার সি.আর মামলা নং- ২৭/২১ইং (লাখাই)। বিজ্ঞ বিচারক মামলাটির প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ওসি লাখাই থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। এদিকে উক্ত মিথ্যা মামলা দায়েরের খবর শুনে এলাকার মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এলাকার মানুষ প্রশাসনের নিকট এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে নোমান সারোয়ার জনি বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিতে মোখলেছ ও মলাই গং আমার বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামালা দায়ের করিয়েছে। তদন্তে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে ইনশাআল্লাহ। তারা শুধু আমাকেই আসামী করেনি, এলাকার মুরব্বিয়ানদেরকেও আসামী করেছে যাতে আমার নির্বাচনে তারা কাজ করতে না পারেন।
এ ব্যাপারে বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মলাই বলেন, আমার এখানে অনেক লোক। আপনাকে আমি পরে ফোন দিচ্ছি।
চেয়ারম্যান প্রার্থী মুখলেছুর রহমান বলেন, বোরহান আমার কেউ না। আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। আমি ঢাকায় আছি, আমি একজন ব্যবসায়ী। কাউকে ঘায়েল করে নির্বাচনে জিতা যায় না। আমার বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য ও বানোয়াট।
মামলার বাদী ও বোরহানের বাবা মজনু মিয়াকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বোরহানের মামা ও মামলার ১ নম্বর সাক্ষী ফারুক মিয়া বলেন, আমাকে না বলে সাক্ষী করা হয়েছে। আমি কিছুই জানি না। এটি কি ঘটনা একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।
লাখাই থানার ওসি তদন্ত মহিউদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে কারও কাছে বোরহান উদ্দিনের পরিবার কোন কিছু প্রকাশ করেনি। ওসমানী থেকে তারা যখন রিলিজ আনে সেখানেও ময়না তদন্তের কথা বলেনি। পরে এসে তারা এই পোস্টমর্টেম করতে বলেছে। যেহেতু আদালত আমাদেরকে মামলাটি তদন্ত করতে বলেছে আমরা তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করব।
© স্বত্ব দৈনিক হবিগঞ্জের মুখ ২০১৯
ওয়েবসাইটটি তৈরী করেছে ThemesBazar.Com