পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে ৩ সন্তান নিয়ে বার বার অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন স্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার \ বাহুবলে বোরো জমিতে পানি সেচ দেয়াকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের ফিকলের আঘাতে জামাল মিয়া (৩০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন। এ ঘটনায় আশংকাজনক অবস্থায় মুকিত চৌধুরী নামের একজনকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ফতেহপুর হাওরে।
জানা যায়, বাহুবল উপজেলার ১নং স্নানঘাট ইউনিয়নের ফতেহপুর হাওরে কয়েক একর সরকারি জায়গা রয়েছে। ১নং খাস খতিয়ানের অনেক জায়গা ফতেহপুর গ্রামের একাধিক লোক দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগদখল করে আছে। এমন একটি সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা দখল করে বোরো ধান রোপন করে ফতেহপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে সজলু মিয়া। গতকাল শুক্রবার ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একই গ্রামের গেদা মিয়ার ছেলে জামাল মিয়া তাদের বোরো জমিতে পানি সেচ দিতে যায়।
এসময় ওই জায়গা থেকে পানি সেচ দিতে সজলু মিয়া বাধা দিলে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে জামাল মিয়া হাওর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। গ্রামের কাছাকাছি আসামাত্রই উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের মহিলাসহ ৫ জন আহত হয়। এসময় সজলু মিয়ার ফিকলের আঘাতে জামাল মিয়া গুরুতর আহত হয়। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে জামাল মিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাওর থেকে উদ্ধার করে প্রথমে বাহুবল এবং পরে হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার দুলন দেব তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হবিগঞ্জ সদর থানা পুলিশ লাশ মর্গে প্রেরণ করে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন সজলু মিয়া, ফয়েজ মিয়া, ইউনুস মিয়া, মজনু মিয়া ও বজলু মিয়া।
খবর পেয়ে বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সজলু মিয়ার বড় বোন শিল্পী বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। এমতাবস্থায় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে সজলু মিয়ার বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ রিপোর্ট লেখা পযন্ত এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বাহুবল মডেল থানা পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ ফতেহপুর গ্রামে এসব সরকারি জায়গার দখল নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, মূলত উভয়পক্ষের নেতৃত্বের পাল্লা ভারী রাখতেই একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে গ্রামে। কে কাকে কিভাবে ঘায়েল করবে এটাই তাদের পরিকল্পনা। জামাল মিয়ার মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে আসছে শোকের ছায়া। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীকে হারিয়ে ৩ সন্তান নিয়ে বার বার অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন স্ত্রী। নিহত জামাল মিয়ার ৩ সন্তান এর মধ্যে ১৮ দিনের শিশু রয়েছে একজন। জামাল মিয়ার বোন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় যেনো ভারী হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। গ্রামে দীর্ঘদিন যাবৎ রয়েছে মাতব্বরদের গ্রুপিং। যার বলি হতে হলো জামালকে।