সালতামামি ২০২০
ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সকলকে মাস্ক ব্যবহার করা একান্ত জরুরি
কামরুল হাসান ॥ হবিগঞ্জ জেলায় ২০২০ এ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দেড় হাজারেরও বেশি রোগী সুস্থ হয়েছেন। শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এই জেলায় সুস্থতার হার শতকরা ৮১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সবচেয়ে আলোচনায় ছিলেন এমপি অ্যাডভোকেট মোঃ আবু জাহির। তিনি ২৬ অক্টোবর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় হোম আইসোলেশনে ছিলেন। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২৮ অক্টোবর সকালে হেলিকপ্টারযোগে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। এরপর থেকে তাঁর নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দারা প্রতিদিনই এমপির সুস্থতা কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন।
এমপি আবু জাহিরের ব্যক্তিগত সহকারী সুদীপ দাশ জানান, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে আট মাস ধরে এমপি আবু জাহির তাঁর নির্বাচনী এলাকার সবাইকে সচেতন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন। দিনরাত ঘুরেছেন অদৃশ্য এ শত্রুর মোকাবিলায়। সাহস যোগাচ্ছিলেন সবাইকে। করোনায় আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া মানুষের বাড়ি বাড়ি সরকারি ও নিজের পক্ষ থেকে সহায়তাও পৌঁছে দিয়ে অবশেষে নিজেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৫৩ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৫৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ হয়। এছাড়া ১৩ হাজার ৭৩৯ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে রিপোর্ট পাওয়া গেছে ১৩ হাজার ৪২৩ জনের, ৩১৬ জনের রিপোর্ট আসতে বাকী রয়েছে। যারা করোনায় মারা গেছেন তাদের মধ্যে শিশু, নারী ও পুরুষ রয়েছেন। মৃতদের অধিকাংশের বয়সই ষাটের উপরে।
এ জেলায় করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ১০ এপ্রিল। আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন পেশায় মাইক্রোবাস চালক। ওই ব্যক্তির বয়স ৪৮ বছর। তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা। কাজের সুবাদে নারায়ণগঞ্জ থাকতেন। আক্রান্ত হবার দুইদিন আগে হবিগঞ্জ ফেরেন। এরপর করোনাভাইরাসের মতো বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। নমুনা পরীক্ষায় পজেটিভ আসে। এরপর থেকে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে করোনা পজিটিভের সংখ্যা।
এদিকে জেলায় করোনা আক্রান্তে প্রথম মৃত্যু হয় ২৬ এপ্রিল। মৃত ব্যক্তি চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডীছড়া চা বাগানের শিশু আভাস তন্তবায় (৫)। ওই শিশু ক্যান্সারের রোগী হিসেবে সিলেট হাসপাতালে ভর্তি হলে করোনা ধরা পড়ে।
গত ২১ জুন করোনা আক্রান্তের রেকর্ড হয়েছে হবিগঞ্জে। একদিনে ৮১ জনের পজেটিভ রিপোর্ট আসে। আক্রান্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪০ জন, মাধবপুরের ২২ জন, চুনারুঘাটের ৭জন, বানিয়াচংয়ের ৬জন, লাখাইর ২জন, আজমিরীগঞ্জের ২জন, বাহুবলের ১ জন, নবীগঞ্জ উপজেলার একজন ছিলেন। সর্বশেষ গত ২৮ ডিসেম্বর দুই জনের করোনা পজেটিভ হয়।
সূত্রে জানা যায়, এ জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আবু জাহির, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানসহ চিকিৎসক, নার্স, পুলিশ, সাংবাদিক ও উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিগণ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মুখলিছুর রহমান উজ্জল জানান- গত বছরের জুন, জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে এ জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল। বছরের শেষ দিকে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম। এখন আগের মত পরীক্ষা করাতে রোগী আসছেন না। কেবল মাত্র যাদের উপসর্গ আছে এবং বিদেশযাত্রী তারাই স্যাম্পল দিচ্ছেন। এই হিসেবে সিলেট বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের দিক দিয়ে তৃতীয় ও মৃত্যুর দিক দিয়ে চতুর্থ। তিনি আরো বলেন, দেশে ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সকলকে মাস্ক ব্যবহার করা একান্ত জরুরি।