স্থানীয় নারী-পুরুষ ও শিশুরা বালতি মগ হাড়ি ভর্তি করে নিয়ে গেছেন পড়ে যাওয়া তেল ॥ ১২ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ॥ দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার রেল স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হওয়া ট্রেন উদ্ধার করা হয়েছে। ১২ ঘন্টা পর রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় সিলেটের সাথে সারা দেশের ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহজিবাজার রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার। তিনি জানান, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন উদ্ধার শেষে লাইন মেরামত করা হয়। রাত সাড়ে ১২টায় ট্রেন চলাচল শুরু করে। এদিকে দুর্ঘটনা তদন্তে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় তদন্ত কমিটি। এর প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম (পূর্ব) এর প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীনকে। ৪ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অপরটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি। এর প্রধান করা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকার বাণিজ্যিক পরিবহন কর্মকর্তা (দ্বিতীয়) মাইনুল ইসলামকে। ৫ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটিকেও ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে চট্টগ্রামের (পূর্ব) প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন উদ্ধারে কাজ চলছে। একটি লাইন স্বাভাবিক হয়েছে। রাতেই ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। রাত সোয়া ১১টায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটি উদ্ধার কাজ শেষ হয়।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী একটি তেলবাহী ট্রেন শাহজিবাজার রেল স্টেশনের নিকট পৌছলে এর ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় বগিগুলোর মধ্যে ২টি তেলের ট্যাংক লিকেজ হয়ে ডিজেল পড়তে থাকে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় নারী, পুরুষ, শিশুরা বালতি, মগ, হাড়ি নিয়ে তেল সংগ্রহে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। অনেকেই রাস্তায় ভেসে যাওয়া তেলও সংগ্রহ করেন। এদিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আখাউড়া ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া থেকে দু’টি উদ্ধারকারী ট্রেন সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাস্থলে পৌছে। দীর্ঘ চেষ্টা শেষে রাত সোয়া ১১টায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, লিকেজ হওয়া দু’টি ট্যাংকে প্রায় ৮০ হাজার লিটার ডিজেল ছিল। যার অধিকাংশই পড়ে গেছে। এ তেলের বাজার মূল্য অন্তত ৫০ লাখ টাকা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তেলবাহী ট্রেনের ড্রাইভার হামিদ মিয়া জানিয়েছেন, আখাউড়া থেকে ছেড়ে সিলেট যাবার পথে শাহজিবাজার রেলস্টেশনে ঢুকার সময় রেললাইন পয়েন্টে ত্রুটি থাকার কারণে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনের সহকারি চালক হামিদুর আহমেদ বলেন, লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছিল। কিন্তু আমাদেরকে কোন নোটিশ বা সিগনাল দেয়া হয়নি। ফলে ট্রেনটি ১নং লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ইঞ্জিন অটোমেটিক ২নং লাইনে চলে যায়। এছাড়া বগি চলে যায় ১নং লাইনে। যে কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
শাহজিবাজার রেল স্টেশন মাস্টার মোয়াজ্জেল হোসেন জানান, ট্রেনের যাত্রা সংকেতে কোন ত্রুটি ছিল না। তবে স্টেশনের কাছে মেরামত কাজে পয়েন্টের লোকজনদের ক্রটির কারণেই মূলত এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রেল দুর্ঘটনার ফলে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের সহকারি স্টেশন মাস্টার মুশফিক হোসেন জানান, তেলবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৪ বগি লাইনচ্যুতের ঘটনায় সিলেট রুটের চারটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে। ট্রেনের যাত্রা বাতিলের লিখিত নোটিশ না পেলেও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরো জানান- যে সকল যাত্রী শায়েস্তাগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকা যাবার জন্য অগ্রীম টিকেট সংগ্রহ করেছিলেন তারা সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে টিকেট ফেরত দিয়ে টাকা বুঝে নিয়েছেন। যাত্রা বাতিল হওয়া ট্রেনগুলো হলো- সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা, ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পাহাড়িকা ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস।