শেখ আব্দুর রশিদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অঘটন এড়াতে মধ্যরাতে মেয়র উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও নিহতের স্বজনসহ তিন শতাধিক মানুষের সাথে পুলিশের বৈঠক ॥ উমেদনগরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন রশিদের পক্ষের লোকজন
এসএম সুরুজ আলী ॥ হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগরে টমটম স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত শেখ আব্দুর রশিদ সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মারা যান। নিহত শেখ আব্দুর রশিদের ছোট ভাই শেখ মখলিছুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার ভাইয়ের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান।
এদিকে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আজ বুধবার সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে আব্দুর রশিদের লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। এর আগে মঙ্গলবার সকালে নিহত আব্দুর রশিদকে ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউতে দেখে তার ছোট ভাই ব্যবসায়ী শেখ আব্দুল হান্নান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সকলের নিকট তার ভাইয়ের সুস্থতা কামনা করেন।
শেখ আব্দুর রশিদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর কিংবা কোন অপ্রীতিকর ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এমন আশংকায় পুলিশ তৎপর হয়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত শেখ আব্দুর রশিদের বাড়ির কাছে উঠানে সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে অংশ নেন হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোঃ মিজানুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলাদ্রী শেখর পুরকায়স্থ টিটু, মক্রমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আহাদ মিয়া, জেলা কৃষক লীগ সভাপতি হুমায়ুন কবির রেজাসহ নিহত শেখ আব্দুর রশিদের স্বজনরা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। উমেদনগর বার সর্দার মোঃ সোনা মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম সকলকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখার আহবান জানান। এ সময় এলাকাবাসীসহ নিহতের স্বজনরা পুলিশকে নিশ্চিত করেন- আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয় তারা এমন কিছু করবেন না। তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে তারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা করবেন। তারা আসামীদের গ্রেফতার এবং ন্যায় বিচার দাবি করেন। জবাবে পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয় হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ রেহাই পাবে না। বৈঠকে উপস্থিত হবিগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মো. মাসুক আলী দৈনিক হবিগঞ্জের মুখকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বৈঠকে তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এতে উমেদনগরে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আশ্বাস দিয়েছেন শেখ আব্দুর রশিদের পক্ষের লোকজন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পরই পরবর্তীতে যাতে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে উমেদনগরে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন- আব্দুর রশিদ হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বলেন- সংঘর্ষের নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা নেয়া হবে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। তবে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা আইন শৃংঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘœ ঘটানো যাবে না।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরী বাজার খোয়াইমুখ টমটম স্ট্যান্ড দখল নিয়ে পৌর এলাকার উমেদনগর আলগাবাড়ি বনাম পূর্ব এলাকার লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে স্ট্যান্ড এলাকায় সংঘর্ষ হলেও পরে নবীগঞ্জ সড়কের মাদ্রাসা এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে একপক্ষ অপর পক্ষের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম পিপিএম ও সদর থানার অফিসার ইনচার্জ-ওসি মো. মাসুক আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ৮ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তখন উভয়পক্ষের ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। সংঘর্ষে শেখ আব্দুর রশিদ, পুলিশ সদস্যসহ উভয় পক্ষের ৩০ জন আহত হয়। আহতের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় আব্দুর রশিদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ইউসিইউতে ৫দিন চিকিৎসা শেষে ৬ দিনের মাথায় তিনি মারা যান।