চুনারুঘাট প্রতিনিধি ॥ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীঘ প্রায় ৮ মাস বন্ধ থাকার পর আজ রবিবার খুলছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। এর ফলে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকরা নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে বন ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।
সাতছড়ি বন্যপ্রাণী রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার পর ১৯ মার্চ থেকে দেশের অন্য জাতীয় উদ্যানের মতো সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রায় ৮ মাস যাবত সাতছড়িতে পুরোপুরিভাবে বন্ধ রয়েছে পর্যটকের আনাগোনা। ফলে চিরসবুজ বনের প্রকৃতি তার সৌন্দর্য্য ফিরে পেয়েছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী জানান- আজ রবিবার থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান দশনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্ধান্তের কথা আমাদের জানানো হয়েছে।
জাতীয় উদ্যানের ভেতর ৭টি ছড়া বা ঝর্ণা রয়েছে। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে সাতছড়ি। এছাড়াও রয়েছে ট্রি অ্যাডভেঞ্চার। যা দিয়ে উড়ে উড়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যাওয়া যায়। ছড়ার পথে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ রাখলে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও নাম না জানা অসংখ্য লতাপাতা। ২০০৯ সাল থেকে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সরকার প্রবেশ মূল্য চালু করে। বর্তমানে প্রবেশমূল্য প্রাপ্ত বয়স্ক ৩৩.৫০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক ২৩ টাকা।
জাতীয় উদ্যানের অভ্যন্তরে টিপরা পাড়ায় একটি পাহাড়ি উপজাতির ২৪টি পরিবার বাস করে। এই ক্রান্তীয় ও মিশ্র চিরহরিৎ পাহাড়ি বনভূমি ভারতীয় উপমহাদেশ এবং ইন্দো-চীন অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২ শতাধিক প্রজাতির গাছপালা।
এ উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪ প্রজাতির স্থ্যন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ ও ছয় প্রজাতির উভচর। আরও আছে প্রায় ১৫০-২০০ প্রজাতির পাখি। এটি বাংলাদেশের একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাখিদের একটি অভয়াশ্রম। এ বনে রয়েছে লজ্জাবতী বানর, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, কুলু বানর, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি। সরীসৃপের মধ্যে সাপ, পাখির মধ্যে কাও ধনেশ, বনমোরগ, লালমাথা ট্রগন, কাঠ ঠোকরা, ময়না, ভিমরাজ, শ্যামা, ঝুটিপাঙ্গা, শালিক, হলুদ পাখি, টিয়া প্রভৃতির আবাস রয়েছে। এছাড়া গাছে গাছে আশ্রয় নিয়েছে অগণিত পোকামাকড়। এদের মধ্যে ঝিঁঝিঁপোকা অন্যতম।