স্টাফ রিপোর্টার ॥ হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গ থেকে বদলী হয়ে যাওয়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা মৎস্য অফিসে গিয়ে তদন্ত করেন মৎস্য পরিকল্পনা জরীপ, মৎস্য অধিদপ্তরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান। এ অভিযোগকারী বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম গ্রামের মৎস্যজীবী নিতাই চাঁদ দাস ও বাঘজোর সিআইজি মৎস্য সমবায় সমিতি লিঃ সভাপতি রফিক মিয়াসহ কয়েকজন অভিযোগকারীর বক্তব্য নোট করেন এবং একই ইউনিয়নের বাসিন্দা সুজাতপুর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বাছির মিয়া, ইকরাম সিআইজি সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি হেলাল মিয়া, সেক্রেটারী জলু মিয়া, দৌলতপুরের সভাপতি আজিজ মিয়া, বাঘজোরের সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া, মক্রমপুর ইউনিয়নের শাহপুরের সভাপতি শাহাব উদ্দিন, কাবিলপুরের সভাপতি ফরিদ মিয়া, বাঘজোরের সমিতির সদস্য সিজিল মিয়াসহ কয়েকজন সাক্ষী ও সাংবাদিকদের বক্তব্য গ্রহন করেন। লিখিত অভিযোগে ‘ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ-২ প্রজেক্টের আওতায় বানিয়াচং উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ২টি করে মোট ৩০টি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত সিআইজি মৎস্য সমবায় সমিতি রয়েছে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে বানিয়াচং উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেননি। খামারিদের কোনো ধরণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছেন না। তিনি খামারিদের কোনো মাছের রেণু পোনা দিচ্ছেন না। তিনি একই অফিসে ২০ বছর যাবত কর্মরত ক্ষেত্র সহকারী হাবিবুর রহমানের সহযোগিতায় সই জাল করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন বরাদ্দ উত্তোলন করে আত্মসাত করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে মোহাম্মদ আলমের দুর্নীতির বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলে তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং জেলা মৎস্য কর্মকর্তাও তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তিনি জানিয়েছেন অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আলমের বিরুদ্ধে নবীগঞ্জের কুর্শি কার্প হ্যাচারিতে কর্মরত অবস্থায় প্রতি বছর হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় পোনামাছ সরবরাহের মাধ্যমেসহ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পুকুর পুনঃখনন বাবদ ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দিয়েছিলেন ৮৯ জন ভুক্তভোগী। সেই অভিযোগ আমলে নিয়েছে দুদক। ইতোমধ্যে তার তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম তাদের নজরে রয়েছেন। তার দুর্নীতির অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নির্দেশিত। প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। একপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত হতে পারে। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন স্থানীয় একজন। এতে অভিযোগের সপক্ষে ৮৯ ভুক্তভোগীর স্বাক্ষর ছিল। মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ প্রায় তিন ৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। একই অর্থবছরে ১১টি উপজেলায় পোনা সরবরাহ করলেও সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন সামান্য টাকা। এছাড়া সরকারি হ্যাচারির নিজস্ব পোনা বিক্রি করে নিম্নমানের হ্যাচারি থেকে রেনু পোনা সংগ্রহ করেন তিনি। একইসঙ্গে টার্গেটের অতিরিক্ত রেনু, পোনা ও মাছ বিক্রির টাকা যায় তারই পকেটেই। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পুকুর পুনঃখনন দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের নামে ভুয়া মাস্টার রোলের মাধ্যমে উধাও করেছেন সরকারি অর্থ। হ্যাচারির সামনে খোলা জায়গা অনুমোদন ছাড়া বহিরাগত লোকদের কাছে লিজ দিয়ে সবজি চাষের ব্যবস্থা করে হাতিয়েছেন আরও টাকা। শুধু এসবই নয়, মোহাম্মদ আলমের বিরুদ্ধে হ্যাচারির বড় বড় গাছ বিক্রির মাধ্যমেও লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।