স্টাফ রিপোর্টার ॥ বানিয়াচং উপজেলার ১৩নং মন্দরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হকের বিরুদ্ধে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে রবিবার দুপুরে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন খন্দকার, সাবেক মেম্বার আব্দুর রহমান আনছারীসহ ইউনিয়নের ১৬ জন বাসিন্দা এ অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মন্দরী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে দুর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। তিনি প্রথম পর্যায়ে ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সুনামপুর গ্রামের গাউছ মিয়ার বাড়ি থেকে পাথাইরা কান্দির ভাঙ্গা পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাট করে ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও ২য় পর্যায়ে ৭নং ওয়ার্ডের কৈবর্ত্য হাটির উত্তর সীমানা পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ কাজের ১২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে পাথাইরা কান্দির ভাঙ্গা থেকে চিতলিয়ার টেক পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, একই অর্থ বছরে ২য় পর্যায়ে মন্দরী গ্রামের বড় ভাঙ্গা থেকে মকবুল মিয়ার জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা ও রাজানগরের বিশ্বম্ভরের বাড়ি থেকে রাজাখাই খাল পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাত করেন। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে মন্দরী থেকে উত্তর সাঙ্গর রাস্তার মন্দরী পূর্ব কবরস্থান হয়ে শুকুর আলীর জমি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ও একই বছরে একই প্রকল্পে সমপরিমান টাকা আত্মসাত করেন। ২০১৯-২০২০ অর্থ ১ম পর্যায়ে মন্দরী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে ¯্রােতের খাল পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণে ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা আত্মসাত করেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক। অভিযোগে তারা আরো উল্লেখ করেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক দৃশ্যমান কোন কাজ না করে টাকা উত্তোলন করেছেন। তাছাড়া প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে ওয়ার্ড পর্যায়ে শ্রমিক নিয়োগ দেয়া কথা রয়েছে। কিন্তু শেখ শামছুল হক ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের শ্রমিক না নিয়ে শুধুমাত্র ৪নং ও ৯নং ওয়ার্ডের নিরীহ হিন্দু ও ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন দিয়ে প্রকল্পের উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে সঠিকভাবে পারিশ্রমিক না দিয়ে টাকা আত্মসাত করেন। প্রকল্পে মুসলিম ধর্মেরসহ অন্য কোন ধর্মের লোকজনদের তালিকা রাখা হয়নি। প্রকল্পগুলো ৭নং ওয়ার্ডের দেখিয়ে কোন প্রকার কাজ না করেই চেয়ারম্যান প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেন। এছাড়াও যেসব উপকার ভোগীদের নামের তালিকা হয়েছে। সেই নামের তালিকায় নিয়মবহির্বূত ভাবে একই পরিবারের একাধিক সদস্যদের নাম রয়েছে। অভিযোগের তারা আরো উল্লেখ করেন সরে জমিনে এলাকা পরিদর্শনে গেলে দৃশ্যমান কোন প্রকল্প পাওয়া যাবে না। ভূয়া প্রকল্পের রূপরেখা সাজিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হক প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন। সরেজমিনে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান অভিযোগকারীরা।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, মন্দরী ইউনিয়নের ১৬ জন বাসিন্দা অতি-দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমরা অভিযোগটি তদন্ত করবো। তদন্তের প্রমাণিত হলে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শামছুল হকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আড়াই হাজার টাকার প্রনোদনার তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ উঠে।